“স্বাধীনতার শরীরে নিকানো যে গণরক্ত তাকে মুছে দেয় সাধ্য কার!/
যদিও শহীদি রক্তপথে এখনো নির্মাণ বাকি সামাজিক সমতার।”/
প্রথমেই প্রাসঙ্গিক প্রশ্নগুলো প্রতিকারার্থে নিম্নে পেশ করা হলো।
ছাতনী
গণহত্যায় নিহত চার শতাধিক শহীদ পরিবার রাষ্ট্র-প্রশাসনের কাছ থেকে
তালিকাভূক্ত হয়ে শহীদের স্বীকৃতি-সম্মান-মর্যাদা পায় বা পাচ্ছে কি না বা
পেলেও কতজন কবে থেকে পাচ্ছে জানি না, জানা যায় কি?
ঐ ঘটনায় গলা কাটার
পরও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ছাতনী হাই স্কুলের দপ্তরী লকুব উদ্দিন ওরফে লকু
মিঞা (বর্তমানে মৃত), বেঁচে যাওয়া আবু সিদ্দিক মুন্সী (বর্তমানে জীবিত),
বেঁচে যাওয়া কালী শুটকা, বেঁচে যাওয়া ভাবনীর আব্দুল জব্বার (বর্তমানে মৃত),
বেঁচে যাওয়া কালা মিঞা (বর্তমানে মৃত), গুলীবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যাওয়া নরেশ
চন্দ্র দেব কি রাষ্ট্রীয় সম্মান-স্বীকৃতি পেয়েছেন?
ছাতনী গণহত্যাকারী
ঘাতক, তাদের ইন্ধনদাতা ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তাকারী যারা, তাদের তালিকা
রাষ্ট্র-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা ঘাতক-দালাল নির্মূল
কমিটি বা নাটোর পৌরসভা বা নাটোর সদর উপজেলা পরিষদ বা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ
বা কোন রাজনৈতিক দল বা মানবাধিকার সংগঠন এর পক্ষ থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায়
প্রস্তুত করা এবং তা কোন না কোনভাবে নাটোরবাসীকে ও নতুন প্রজন্মকে জানানোর
ব্যবস্থা হয়েছে কি না বা হবে কি না?
ঐসব ঘাতক ও তাদের সহায়তাকারীদের আইনানুগ প্রক্রিয়ায় বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে কি বা হবে কি?
নাটোরের অন্যান্য গণকবের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে একই বিষয় সংরক্ষণসহ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হয়েছে কিনা?
সর্বোপরি,
মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐসব ঘাতক ও দোসরদের আজীবন ঘৃণা
প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিকভাবে তাদের বয়কট এর কার্যকর ঘোষণা সর্বদা জারি
রাখার ব্যবস্থা জরুরি নয় কি?
অবাধ তথ্য প্রবাহের দেশে তথ্য জানার নাগরিক
অধিকার থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরে এসে আমি আমার ষাটোর্ধ্ব বয়সে
এতদিনেও নিজেই ঐসব বিষয় জানি না হেতু নিজের অজ্ঞতায় লজ্জিত।
শুধু ফেসবুক
সূত্রে জানা যায়, একাত্তরে পাক বাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় হেড কোয়ার্টার ছিল
নাটোরে। বিগত ০৪ জুন, ১৯৭১ রাত পোহাবার আগেই স্থানীয় শান্তি কমিটি ও ঘাতক
হাফেজ আ: রহমান এর নেতৃত্বে সশস্ত্র বিহারি ও পাক হানাদার বাহিনী’র দ্বারা
ইতিহাসের জঘন্য-নিষ্ঠুরতম কায়দায় নাটোরের ছাতনী এলাকায় সংঘটিত হয় ছাতনীসহ
আশেপাশের ১০ টি গ্রাম থেকে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের চোখ-মুখ বেঁধে তুলে
এনে গুলী-জবাই-এসিডে ঝলসে দেয়ার মাধ্যমে ৪ শতাধিক গণহত্যা। অত:পর শহীদ মনির
সরকারের পুত্র দুলাল সরকারের দেয়া জায়গায় নির্মিত শহীদ স্মৃতিসৌধে
খোদাইকৃত মাত্র ৬৪ জন শনাক্ত হওয়া শহীদের নামের তালিকা সংক্রান্ত খবর জানা
গেল ফেসবুকে।
কিন্তু ঐ স্থানীয় শান্তি কমিটিতে কারা কারা ছিল এবং
তারা এখন কে কোথায়, সেসব তথ্যের পাশাপাশি ঐ ঘাতক হাফেজ আ: রহমানসহ অন্যান্য
ঘাতকরা কে কোথায় গেল বা তাদের কি হলো,
…সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু
জানা যায় না। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ অত্যাবশ্যক যে, কেবলমাত্র নাটোরের সিংড়া
নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা জনাব সুজিত সরকার (সম্মানিত শিক্ষক, বাংলা বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) এর পোষ্টে ঐ গণহত্যায় যারা ইন্ধনদাতা ও প্রত্যক্ষ
সহযোগিতাকারী দালাল-রাজাকারদের ১৯/২০ জনের নাম-যাদের মধ্যে কেউ কেউ
বর্তমানে মৃত (তন্মধ্যে ৩ জন অবাঙালির নামও আছে) দেখে আমি স্তম্ভিত-যা আমি
আগে কখনও কারো কাছ থেকে জানতে পারিনি। এখন প্রশ্ন হলো, অনেক দেরি হয়ে গেলেও
রাষ্ট্র-প্রশাসনের উদ্যোগে সুজিত সরকারের পোষ্টে দেয়া দালাল-রাজাকারের
নামগুলো যথাযথ যাচাই-বাছাই-তদন্ত সাপেক্ষে শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশের
ব্যবস্থাসহ আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে নাটোরবাসী তথা দেশবাসী ও নতুন
প্রজন্ম প্রকৃত সত্য ইতিহাস জানতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তথ্যসূত্র : ঐ সুজিত সরকার ও ছাতনীর দুলাল সরকার।
লেখক- সুখময় রায় বিপলু.,নাটোরের বিশিষ্ট আনজীবী,বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ইঙ্গিত থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ।