পাবনায় স্ত্রী-কন্যাসহ ব্যাংক কর্মকর্তা খুনের রহস্য উদঘাটন ॥ ঘাতক গ্রেফতার ॥ লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার

আবদুল জব্বার,পাবনা :
পাবনা শহরের দিলালপুরে স্ত্রী-কন্যাসহ ব্যাংক কর্মকর্তার নির্মম হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ঘাতককে গ্রেফতার ও লুন্ঠিত মালামল উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘাতক তানভির হোসেন নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার হরিপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে। তিনি পাবনা ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন মসজিদের ইমামতি করতেন। হত্যা মামলায় তানভীরকে গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার বিকালে আদালতে সোপর্দ করা
হয়েছে। পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
রোববার পাবনা পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, নি:সন্তান ব্যাংক কর্মকর্তা দম্পত্তির মা-বাবা হওয়ার তীব্র আকাংখাই তাদের মৃত্যুর কারন হয়ে
দাঁড়ায়। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন লাগোয়া পুরনো দ্বিতল একটি বাড়ির নিচ তলায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত্র কর্মকর্তা নিঃসন্তান আব্দুল জব্বার তার স্ত্রী সুম্মা খাতুন ও পালিত মেয়ে সানজিদাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকতেন।
মসজিদে নামাজ পড়তে আসা আব্দুল জব্বারের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে ফায়ার সার্ভিস মসজিদের ইমাম তানভীর ওই দম্পতির সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে ছেলের মত মিশতে থাকে। বাড়ির বাজার
থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সব লেনদেনের বিভিন্ন বিষয়ও আব্দুল জব্বার তার সাথে পরামর্শ করে করতেন। ইমাম তানভিরকে নি:সন্তান
দম্পত্তি ছেলেরমত দেখতেন, ভালবাসতেন। পবিত্র রমজান মাসে ইফতারি-সেহরী এই বাসাই করতেন ঘাতক তানভির। এই কৌশলি তানভীর তাদের বিশ্বাস অর্জন করে মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে রাত্রি যাপনও করতেন। সম্পত্তির লোভে তানভীর তাদের হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা মাফিক গেল ৩১ মে তানভীর রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে ওই বাড়িতে যান। রাতের খাবারের পর পারিবারিক আলাপ শেষে আব্দুল
জব্বারের সাথে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে ঘুমন্ত আব্দুল জব্বারকে শ্বাসরোধ করে
হত্যা করেন। এরপর পাশের ঘরে ঘুুমিয়ে থাকা সুম্মা খাতুন ও সানজিদাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা নিশ্চিত করেন। হত্যার পর আলমারি খুলে নগদ দুই লাখ টাকা, এক লাখ ভারতীয় রুপি ও সোনার গহনা নিয়ে গ্রামের বাড়ি
নওগাঁর মহাদেবপুরের হরিপুরে চলে যান। হত্যাকান্ডের চারদিন পর ৫ জুন শুক্রবার বিকালে ওই বাড়ি থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত আব্দুল জব্বারের ভাই আব্দুল কাদের পাবনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলায় তানভীরকে গ্রেফতার
দেখিয়ে রোববার বিকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলাটি জেলা গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই অসিত কুমার
বসাক জানান, পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ^াসের নেতৃত্বে
বিভিন্ন তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে শনিবার দিবাগত গভীর রাতে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হরিপুরের
তানভীরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে লুটকৃত টাকা ও স্বর্ণলংকারসহ তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অসিত কুমার বসাক আরো জানান, রোববার গ্রেফতারকৃত তাভীর অতিরিক্ত চীফ
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১ এর বিচারক একে কামাল উদ্দিনের কাজে স্বীকারক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ প্রতিবেশীদের নিকট থেকে খবর
পেয়ে শহরের দিলালপুরের একটি বাড়ির মূল ফটক ভেঙে এই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলো রাজশাহী কৃষি
উন্নয়ন ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার (৬৪), তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন (৫৮) এবং মেয়ে সানজিদা খাতুন জয়া (১৪)। পালিত মেয়ে সানজিদা খাতুন জয়া পাবনা শহরের কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। নিহত আব্দুল জব্বার পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুর ইউনিয়নের পাইকরহাটি গ্রামের মৃত আব্দুল মতিন শেখের ছেলে। নিহতের
ভাই আব্দুল কাদের জানান, তার ভাই ব্যাক্তি জীবনে নিঃসন্তান ছিলেন। পরে সানজিদাকে দত্তক নিয়েছিলেন। আমার ভাই খুবই
শান্ত প্রকতির লোক ছিলেন, কারোর সাথে ঝামেলায় যেতেন না।
ঘাতকের কঠোর শাস্তির দাবী করেন।
রোববার দুপুরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সন্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ^াস, শামীমা আক্তার, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) খন্দকার রবিউল আরাফাত লেলিন, সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ, ডিবি পুলিশের ওসি
ফরিদ হোসেনসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা বৃন্দ।