কবি আবুল হোসেন তার ঘুড়ি কবিতায় লিখেছেন, ঘুড়িরা উড়িছে বন মাথায়/হলুদে সবুজে মন মাতায়/গোধুলির ঝিকিমিকি আলোয়/লাল-সাদা আর নীল কালোয়/ঘুড়িরা উড়িছে হালকা বায়। হরেক রকম রঙের ঘুড়ি যখন আকাশে হালকা বাতাসে ওড়ে, সুতায় টান পরলে হোচট খায়, টাল মাটাল ওঠা নামা করে, সুতোয় প্যাচ লেগে কেটে পালায়, কারো হাতে পরে তখন এসব দৃশ্য মানুষের অন্তরকে দোলা দিয়ে যায়।
করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে সারা দেশের মানুষের মতো পাবনার চাটমোহরের সচেতন মানুষ বাড়িতে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্র ছাত্রীরা বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘুড়ি উড়ানো যায় বলে হাজার হাজার মানুষ রকেট, ঢাউস, কোয়ারে, পরী, মানুষ, ডোল, চিলা, ফেসকাসহ নানা নাম আকার রঙের ঘুড়ি আকাশে উড়িয়ে প্রত্যহ আনন্দ উপভোগ করছেন। সম্প্রতি এ আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করে ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের আনিছুর রহমানের ২২ ফিট দীর্ঘ একটি রকেট আকৃতির ঘুড়ি। গত বুধবার বিকেলে এলাকার তরুণদের সহায়তায় ঘুড়িটি আনুষ্ঠানিক ভাবে আকাশে উড়িয়ে দেন তিনি। এ খবর খুব দ্রæত ছড়িয়ে পরে এলাকায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর আরো বেশি প্রচার ও প্রসার হয়। ঘুড়িটি একনজর দেখার জন্য দূড় দূড়ান্তের মানুষ এখন ভীড় জমাচ্ছেন আনিছুরের বাড়িতে।
এ প্রসঙ্গে আনিছুর রহমান জানান, মানুষ যখন সুস্থ বিনোদন থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল এমন সময় ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দ তাদের উল্লসিত করছে। এ আনন্দে যোগ দিতে আমি একটি বৃহত আকারের ঘুড়ি তৈরীর চিন্তা করি। আমি, আমার ব্যবসায়িক পার্টনার মজিবর ও আসাদুল এলাকার সেন্টুসহ আরো ছয়জন মোট ১০ জন মিলে পুরো চারদিনে ঘুড়িটি তৈরী করি। নকশা করতে আরো কয়েক দিন লেগে যায়। ঘুড়িটি তৈরী করতে দুইটি বাঁশ লেগেছে। বাশের শলাকা শুকিয়ে ঘুড়ি তৈরী করে মোটা পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিয়েছি। ঘুড়িটির ওজন প্রায় ২০ কেজি। ঘুড়ি উড়ানোর সময় দশ জন মিলে রশি ধরে রাখতে হয় এবং দশ জন মিলে আলতো করে ধরে শূণ্যে উঠিয়ে দিতে হয়। শ্রমিক খরচ ছাড়াও এক হাজার চারশত টাকার রশি, আটশ টাকার পলিথিন, পাঁচশ টাকার বাঁশ এবং তিনশ টাকার ফুল নকশা লেগেছে এ ঘুড়ি তৈরীতে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার টাকা (শ্রমের মূল্য সহ) খরচ পরেছে।
কাটাখালী গ্রামের এম এ আলীম আব্দুল্লাহ জানান, আনিছুর রহমানের রকেট ঘুড়িটি দিনের বেলায় উড়ানো হয়। এছাড়া রাতের বেলায় শত শত ঘুড়ি আকাশে ওড়ানো হয় যে গুলোতে ব্যাটারী সংযুক্ত করে বিভিন্ন রঙের আলোয় আলোকিত করা হয়। রাতের আকাশে তাকালে মনে হয় আকাশ অনেক নিচে নেমে এসেছে। ঘুড়ির আলো গুলো তারার মতো কোনটি তার চেয়েও উজ্জ্বল হয়ে জ¦লে থাকে সারাক্ষণ। উক্ত এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী ইশারত আলী জানান, “আমার ধারণা এটি বাংলাদেশের সর্ব বৃহত আকার ও ওজনের ঘুড়ি। আনিছুরের এ ঘুড়িটি এলাকায় ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলেছে। করোনা কালীন সময়ে এটি এ এলাকার মানুষের বিনোদনে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে।