প্রতিবেশী জেসমিন আক্তারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মিজানুর রহমানের। পাঁচ বছর আগে মিজানুর ফায়ার সার্ভিসে দমকল কর্মী হিসেবে চাকরি পান। চাকরি পাওয়ার পরে সে জেসমিনকে বিয়ে করার জন্য যৌতুক দাবি করে। কিন্তু জেসমিনের বাবার যৌতুক না দেয়ায় তাদের বিয়ে হয়নি। পরে মিজানুর মোটা অংকের যৌতুক নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুরে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পরেও মিজানুর পরিবারের নিষেধ অমান্য করে জেসমিনের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকেন। নিরুপায় হয়ে জেসমিনের পরিবার মিজানুরের অপকর্মের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন অফিসে লিখিত অভিযোগ দেয়ার উদ্যোগ নেন। এতে বাধ্য হয়ে গত ৬ মাস আগে মিজানুর প্রথম প্রেমিকা জেসমিনকে ২ লাখ টাকা দেনমোহরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু দুই স্ত্রীর মধ্যে বনিবুনা না হওয়ায় মিজানুরের পরিবারে চরম অশান্তির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তিন মাস আগে সাড়ে তিন লাখ টাকা জেসমিনকে দিয়ে স্থানীয় গ্রাম্য প্রধানদের মধ্যস্থতায় জেসমিনের সঙ্গে মিজানুরের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপরেও মিজানুর ও জেসমিন গোপনে অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকেন। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার মিজানুর আবারো জেসমিনকে ৮ লাখ টাকা দেনমোহরে দ্বিতীয় বার বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এনিয়ে গত শুক্রবার দিনভর মিজানুর ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিনের সঙ্গে পিতা মকবুল হোসেনের ঝগড়াঝাঁটি হয়। পরে দুশ্চরিত্র ছেলে মিজানুরের উপর অভিমান করে আজ শনিবার ভোরে মকবুল হোসেন (৫০) বাড়ির উঠানের আম গাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলীপাড়া গ্রামে। নিহত মকবুল হোসেন ওই গ্রামের মৃত সিরাজ সরদারের ছেলে। মকবুল হোসেন পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।
নিহতের পরিবারের সদস্য মজনুর রহমান জানান, দমকলকর্মী মিজানুর রহমান ও প্রতিবেশী জেসমিন আক্তার পরিবারের বাধা অমান্য করে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিল। মিজানুর অবৈধ সম্পর্ক থেকে বের হতে চাইলেও জেসমিনের চাপে সে মুক্ত হতে পারেনি। এতে জেসমিনকে সে দ্বিতীয় বিবাহ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হওয়ায় সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে জেসমিন মিজানুরকে ডিভোর্স দেয়। ডিভোর্সের পরে তিন মাসের মধ্যে জেসমিনের আর অন্য কোথাও বিয়ে হয় নাই। পরে জেসমিনের চাপে আবারো তাকে বিবাহ করতে বাধ্য হয় মিজানুর। এ অবস্থায় পুনরায় মিজানুরকে দ্বিতীয় বিয়ে করা ইসলাম শরীয়তসম্মত নয়। ছেলের ইসলামী শরীয়ত বহির্ভূত এরকম বিয়ে করায় রাগে-দুঃখে মিজানুরের বাবা মকবুল হোসেন আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেসমিনের এক আত্মীয় জানান, মিজানুর দীর্ঘদিন ধরে জেসমিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে গেলেও যৌতুকের লোভে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে। কিন্তু এরপরেও দুশ্চরিত্র মিজানুর জেসমিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে। ছেলের এমন নোংরামি মেনে নিতে না পেরে তার বাবা আত্মহত্যা করেছেন।
পাটুলিপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল গণি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিজানুরের সঙ্গে জেসমিনের সম্পর্ক নিয়ে ঝামেলা চলছিল। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। একপর্যায়ে শনিবার ভোরে মিজানুরের বাবা আত্মহত্যা করেছে।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মাসুদ রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।