থানায় মামলা করায় অভিযুক্তদের উৎপাতে সিলেটের বিশ্বনাথে দুই সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুল করিমের স্ত্রী পপি বেগম (৩২)। করোনা ভাইরাসে থানা পুলিশের কর্মকর্তাসহ ৩৬ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হওয়ার কারণে মামলা দায়েরের দীর্ঘ ২৯ দিনেও মামলার অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আর স্বামী প্রবাসে থাকায় আরও বিপদে পড়তে হচ্ছে দুই সন্তানের ওই জননীকে। যে কারণে দিনে-রাতে প্রবাসীর বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে অভিযুক্তরা।থানায় দায়ের করা মামলা তুলে না নিলে প্রাণনাশের হুমকির পাশাপাশি দিচ্ছে বাড়ি ছাড়ারও হুমকি! শুক্রবার (২৯মে) রাত থেকে তার ঘরের চালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। রোববার (৩১মে) রাত ১২টার পর থেকে ভোররাত ৩টা পর্যন্ত ইট-পাটকেল নিক্ষেপের কারণে দুই সন্তানকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। এর আগে শনিবার (৩০মে) রাতেও এভাবে তার বসঘরে ইট দিয়ে ঢিলছোঁড়েছে অভিযুক্তরা।পপি বেগমের অভিযোগ, গত ২মে শনিবার বিশ্বনাথ থানায় মামলা দেওয়ার পর থেকে আসামিরা প্রকাশ্যে তাকে হত্যা ও বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। দিনে রাতে বসত ঘরে বড়বড় ইটের টুকরা ও পাথর দিয়ে ঢিল ছোঁড়ছে। কয়েকদিন ধরে দুই সন্তানকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে তাকে। বিষয়টি তিনি থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও জানিয়েছেন। কিন্তু কোন ভাবেই হুমকি ও ঢিলছোঁড়া বন্ধ হচ্ছেনা। এজাহার সূত্রে জানাগেছে, স্বামী বিদেশে থাকায় পপি বেগম তার দুই মেয়ে ও আপন ছোট ভাই আফসান আহমেদকে নিয়ে স্বামীর গোয়াহরির বাড়িতে বসবাস করছেন। বাড়ির প্রবেশ গেটের ভিতরে তাদের ছোট মোদি-দোকানটি তার ভাই আফসান পরিচালনা করলেও করোনাভাইরাসের কারণে সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল দুপুরে জুয়া খেলার জন্য তালাবদ্ধ ওই দোকান ঘর খোলে দিতে বলেন গ্রামের আবু তাহের (২৪), নজরুল ইসলাম (২৮), রাকিব উল্লাহ (২৩), সিরাজুল ইসলাম (২৪), জুবেল আহমদ (২৪) ও কয়ছর আহমদ (২২)। আর দোকান খোলে না দেওয়ায় ওইদিন রাতেই দোকানের প্রায় ৮৫ হাজার টাকার মালামাল চুরি করা হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গ্রামের লোকজনের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে অভিযুক্তরা তার বাড়িতে গিয়ে প্রকাশ্যে তাকে মারধর করে আহত করার পাশাপাশি শ্লীলতাহানী করেন। ঘটনার ১২ দিন পরও কোন সালিশ বৈঠক না হওয়ায় অবশেষে গত ২ মে তিনি (পপি) ওই ৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ০২ (তাং ২.০৫.২০ইং)।এ প্রসঙ্গে গোয়াহরি গ্রামের বাসিন্দা ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বার গোলাম হোসেন বলেন, ঘটনার শুরু থেকেই বিষয়টি আপোষে নিস্পত্তির চেষ্টা করেলেও শেষপর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আর রাতের বেলা ইট ও পাথর নিক্ষেপ করা ও হুমকির বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।বিষয়টি ভোক্তভোগী পপি বেগম তাকে জানিয়েছেন মর্মে দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, পপি বেগমের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফজলুল হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ পর্যন্ত থানার ৩৬জন পুলিশ কর্মকর্তা আক্রান্ত। কিন্তু তারপরও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।