সিরাজগঞ্জ তাড়াশে যত্রতত্র পুকুর খনন করার ফলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কারনে কয়েকশত বিঘা জমির ধান পানির নিচে। গত কয়েকদিনে আম্ফান এর ফলে বৃষ্টিতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকের এখন দুর্বিষ অবস্থা। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ায় তলিয়ে গিয়েছে ধান। সেইসঙ্গে শ্রমিক সংকট চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে কৃষকদের কপালে। ফলে শেষ মুহূর্তে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা।
কৃষকরা জানান, চলনবিলের বেশ এলাকায় ধানের জমি পানির নিচে। শ্রমিক সংকটের কারণে বিলের উঁচু এলাকার জমির ধান কাটতে পারছেন না কৃষকরা। আর পানিতে তলিয়ে যাওয়া পাকা ধান দিয়ে আবার শিকর বের হচ্ছে। কোনো কোনো কৃষককে কোমর পানিতে নেমে ধান কাটছেন। আবার কেউ কেউ নৌকাযোগে ধান কেটে বাঁধে নিয়ে এসে মাড়াই করছেন। আবার যেসব কৃষকের ধান পুরোপুরি তলিয়ে গেছে তারা ফসলের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সোনার ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। অনেক কৃষক হতাশায় কাঁদছেন।
সগুনা গ্রামের এন্তাজ আলী ও আরজু হোসেন নামের কৃষক জানান , এবছর আমরা ৩০ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। এর আগে সরিষার আবাদের কারনে ধান লাগাতে একটু দেরি হয়। ধানের ফলনও ভাল হয়। কিন্ত বাধ সাধে কৃতিম জলাবদ্ধতা। এদিকে যত্রতত্র পুকুর খনন করার কারনে বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নিস্কাশন হতে না পারায় জলাবদ্ধতা হয়। এতে সম্পুর্ন ধান এখন পানির নিচে থাকায় একমুঠো ধান কেটে বাড়ি তুলতে পারি নাই।
দিঘী গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম ও সাইফুল ইসলাম জানান, গ্রামের দক্ষিন মাঠে এবার প্রথম থেকেই আবহাওয়া অনেকটাই অনুকূলে ছিলো। ফলনও ভালো প্রত্যাশা করছিলেন চাষিরা। সেই ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন চাষিরা। কিন্তু গত কয়েকদিন কালবৈশাখীতে নুয়ে পড়ে ধান। সঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় ধানখেত। শ্রমিক না পাওয়ায় অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন ফসলের আশা। এতে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করে বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টির পানিতে বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের সগুনা, দিঘী, কামাড়শোন, মাকশোন ও কুন্দইল, কুশাবাড়ি ও মাগুড়া ইউনিয়নের মাগুড়াবিনোদ, শ্যামপুর ও সবুজপাড়া গ্রামের মাঠগুলোতে শতশত বিঘা জমির ধান এখন নিচে।
কৃষক গোলাম রাব্বানী বলেন, তিনি ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করেন। জমির বোরো আবাদ পানির নিচে চলে যাওয়ায় ধান গাছে পচন ধরতে শুরু করেছে। পানি বের করে দিতে না পারলে এই ধান আর ঘরে তুলতে পারবেন বলে মনে হয় না। এমন অনেক কৃষকই জানান, ভারি বৃষ্টিতে ধানের মাঠগুলোতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় জলমগ্ন হয়ে পড়ায় ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। টানা ফসলহারা নিঃস্ব কৃষক বুকভরা আশা নিয়েই এবার বোরো চাষে নেমেছিলেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লুনা বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে প্রসাশনের সাথে কথা বলে দুয়েকদিনের মধ্যে পানি নিস্কাশনের প্রক্রিয়া করা হবে।