বাগমারায় ধর্ষণের শিকার হয়ে গৃহবধু আত্মহত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা

রাজশাহীর বাগমারার ঝিকরা ইউনিয়নের চক সেউজবাড়ি গ্রামে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে লজ্জায় জেসমিন আক্তার(৩০) নামে এক গৃহবধু বিষপান আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় বাগামারা থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মায়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে। এর আগে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা পুলিশ কর্মকর্তা নিহত জেসমিনের হাতে পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন সহ আঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে লোমহর্ষক এই ঘটনাটি এরি মধ্যে ধাপাচাপা দেওয়ার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছে একটি মহল। তারা স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যানের সাধ্যমে পৌনে দুই লক্ষ টাকা জেসমিনের স্বামী এবাদুর ও পিতা আব্দুর জব্বারকে দিয়ে একটি আপোষ নিম্পত্তি করার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। এ দিকে বুধবার বিকেল সাড়ে তিন টার দিকে ময়না তদন্ত শেষে মৃত জেসমিনের মরদেহটি তার স্বামীর বাড়ি চকদেউজবাড়ি গ্রামে এসে পৌছালে ওই দিন বাদ আছর পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জেসমিনের মরদেহটি গ্রামে এসে পৌছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জেসমিনের রয়েছে মাসুমা নামে ছয় বছরের এক কন্যা সন্তান। মাসুমা স্থানীয় কেজি স্কুলের শিক্ষার্থী। সে মা মা বলে অবিরাম কেঁদেই চলেছে। আপন জন কেউ তাকে বুঝ দিয়ে শান্ত করতে পারছে না। গতকাল জেসমিনকে দাফন করতে এসে অবুঝ এই শিশুর কান্না দেখে উপস্থিত সবাই নির্বাক হয়ে যান। সবাই গৃহবধুর এই অকাল মুত্যুর জন্য দায়দের দৃষ্টান্ত মূললক শাস্তির দাবী জানান। স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা ও গ্রামবাসীরা জানান, মৃত জেসমিন আক্তার ছিলেন চকদেউজবাড়ি গ্রামের কৃষক এবদুরের স্ত্রী। তাদের ঘরে মাসুমা নামে ছয় বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিগত দশ বছর ধরে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। জেসমিন ছিলেন পাশ্ববর্তী সেউজবাড়ি গ্রামের আব্দুল জব্বারের কন্য। এরি মধ্যে জেসমিনের উপর কুনজর পড়ে একই গ্রামের গুল মাহমুদের পুত্র জাকিরের (২৪) সে প্রায় গৃহবধু জেসমিনকে উৎতক্ত করত এবং স্বামী এবাদুরের অনুপস্থিতিতে তার সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনে জোরাজুরি করত। ঘটনার সময় মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে স্বামী এবাদুরের অনুপস্থিতিতে জাকিরুল ওই গৃহবধুর ঘরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে। সে সময় লম্পট জাকিরকে প্রতিরোধ করতে অনেক জোরাজুরি করেছে গৃহবধু জেসমিন। শেষমেষ কোন ভাবেই তাকে প্রতিরোধ করতে পারেনি। অবশেষে সে জেসমিনের মুখ বেঁধে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষন করেছে। এরি মাঝে জেসমিনের স্বামী এবাদুর বাড়ি ফিরে আসলে বিষয়টি সে চক্ষুষ দেখে ফেলায় লম্পট জাকিরুল তাকে কিলঘুষি মেরে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় স্বামী এবাদুর উল্টো গৃহবধুকে আবারও নির্যাতন শুরু করে। এ সময় প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে জেসমিনকে স্বামী এবাদুরের হাত থেকে উদ্ধার করে। পরে প্রতিবেশিরা চলে গেলে রাতের কোন এক সময় লজ্জায় ঘৃনায় গৃহবধু বিষপান করে। এ সময় তার অবস্থা বেগতিক পর্যায়ে চলে গেলে রাতেই মোবাইল ফোনে বিষয়টি পাশ্ববর্তী গ্রামে তার পিতা আব্দুল জব্বারকে জানানো হলে তিনি মেয়ের এমন করুন পরিনতির কথা জেনেও রাতে জামাই বাড়ি আসতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় স্বামী এবাদুরও বাড়ি থেকে সটকে পড়লে জেসমিনের দূর সম্পর্কেয় আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশিরা তাকে ভোরের দিকে ভবানীগঞ্জ নামক ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে জেসমিনের অবস্থার অবনিত হলে ওই দিন তাকে বাগমারা মেডিকেলে নিয়ে ভমির্ত করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে জেসমিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি খাইরুল আলম ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মী আব্দুর রাজ্জাক জানান, জাকিরুল এলাকায় লম্পট ও বখাটে হিসাবে পরিচিতি। মেয়ে মানুষ নিয়ে এর আগেও তার একাধিক কেলেংকারির ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় এর আগেও তার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে প্রতিবারই সে প্রভাবশালীদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে পার পেয়ে যায়। সে কারণে সে একই অপরাধ আবারও ঘটানোর সাহস পেয়েছে। এ বিষয়ে ঝিকরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দৃুল হামিদ ফৌজদার গৃহবধু জেসমিন ধর্ষণ ও বিষপানের বিষয়টি ধামাচাপা ও ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা সম্পর্কে বলেন, আমরাও চাই ঘটনার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসুক ও অপরাধীর সাজা হোক। এখানে টাকা পয়সা নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিলে চাইলে সহজে কেউ পার পাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ক্ষেত্রে নির্দোষ কেউ যাতে হয়রানীর শিকার না হয় এ জন্য তিনি পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, গৃহবধুর লাশের সুরাতহাল রিপোর্টে আঘাতের কিছু চিহ্নের উল্লেখ আছে। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলেই পুরো বিষয়টি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে।