আমাদের দেশেও করোনায় অনেকের জীবন, ঘর-সংসার সব কিছু তছনছ হতে বসেছে। এমন করুণ কাহিনী ঘটেছে প্রতিবন্ধি আশরাফুজ্জামানের জীবনে। প্রতিবন্ধি আশরাফুজ্জামান ঢাকার সাভার
এলাকায় একটি বাসায় স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর বসবাস করে আসছিলেন। তিনি ঝিনাইদহ জেলার শেলকুপা উপজেলার উমেদপুর
গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২ বছর আগে বাথরুমে পড়ে গিয়ে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। হুইল চেয়ারে কোনমতে চলাফেরা করেন। আয় রোজগার কমে যাওয় আর করোনা আতঙ্কে তার স্ত্রী নাসিমা জামান ও ছেলে মনিরুজ্জামান ঐ ভাড়া বাসায় তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। সেখানেই ২৫ দিন একা থাকার পর প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় একটি পিকআপ
ভাড়া করে ঝিনাইদহে আসেন আশরাফুজ্জামান। গ্রামের বাড়ি শৈলকুপার উমেদপুর গেলে সেখানে ঠাঁই দেয়নি তার ছেলে ও তার চাচাতো
ভাইয়েরা। উপায় না পেয়ে পিকআপ চালকরা রাতের বেলা ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের গোয়ালপাড়া বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে আশরাফুজ্জামানকে
রেখে যায়।
জানা যায়, সেখানে সারা রাত কাটে তার। সকালে খবর পেয়ে ঝিনাইদহ থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের পক্ষ
থেকে শৈলকুপায় তার আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কেউ তাকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। পরে পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান (পিপিএম) তার চিকিৎসার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। থানা থেকে তাকে
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গাজীপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে গত ৮ মে বিনা চিকিৎসায় ডায়রিয়া রোগে লেগুনার হেলপার কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
শুধু তাই নয় মৃত্যুর পরও কয়েক ঘন্টা রাস্তার উপর পড়ে ছিলো তার লাশ।
ভাগ্যাহত ইউছুফ হোসেন (১৫) ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার মান্দাইটা গ্রামের সাহামািদ্দনের ছেলে। সে গাজীপুরের চন্দনা এলাকায় ভাড়া
থেকে লেগুনায় হেলপারের কাজ করতো।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের এডিসি (নর্থ) আবু লাইচ মো. ইলিয়াচ জিকু জানান, বৃহস্পতিবার তার কয়েকবার বমি ও পাতলা পায়খানা হলে
বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ১৫০ টাকা ধার নিয়ে চিকিৎসা নিতে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেলে যায়। কিন্তু সেখানে
বর্তমানে করোনা রোগি ছাড়া অন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়না জানতে পেরে অন্য ক্লিনিকে গেলে তাকে করোনা রোগি ভেবে চিকিৎসা
দিতে রাজি হয়নি। পরে সে রিকসাভ্যান ভাড়া করে শহীদ আহসানউল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে যাওযার জন্য রওনা হয়। পথে ভ্যানের উপর মারা
গেলে চান্দনা এলাকায় আজোয়া কফি হাউসের সামনে ঢাকা-গাজীপুর সড়কে কিশোরের লাশটি ফেলে রেখে ভ্যানচালক পালিয়ে যায়। সড়কের পাশে
লাশটি কয়েক ঘন্টা পড়ে থাকরেও করোনায় মৃত্যু ভেবে কেউ কাছে যাচ্ছিলোনা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে।
দীর্ঘ সময়েও স্বজনরা না আসায় পুলিশ গাজীপুর মহনগরের ইটাহাটা কবরস্থানে সেই লাশ দাফন করে। (সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন)
এতো গেলো করুন মৃত্যুর কথা। বিশ^ ব্যাপি ভয়াবহ রোগ করোনাভাইরাস বা কোভিড- ১৯ এর কারণে জার্মাানির হেসে প্রদেশের
অর্থমন্ত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে ২৯ মার্চ, ২০২০ একটি পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, করোনার জেরে বেহাল দেশের অর্থনীতি।
কিভাবে আবার দেশকে নতুনকরে গড়ে তোলা যায তা নিয়েই উদ্বিগ্ন ছিলেন জার্মানির হেসে প্রদেশের অর্থমন্ত্রী থমাস শেফার । আর এই
দুশ্চিন্তা থেকে অবসাদ। আর তার জেরেই শেষমেষ আত্মঘাতি হলেন জার্মানির অর্থমন্ত্রী থমাস শেফার (৫৪) রেল লাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করা
হয়েছে তার ছিন্নভিন্ন দেহ। জানা গেছে ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং
মাইনজের মধ্যবর্তী হোচাইম শহরে হাই স্পিড ট্রেন লাইনের পাশ থেকে শেফারের ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার করা হয়। মনে করা হচ্ছে তিনি চলন্ত
ট্রেনের সামনে ঝাপ দিয়েই আত্মহত্যা করেছেন। সংবাদ মাধ্যম সুতে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে দেশের অর্থনীতিকে
কিভাবে বাঁচাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন শেফার। যার জেরে ইদানিং জনসমক্ষেও সেভাবে আসছিলেন না তিনি। আর তা থেকেই
অবসাদের জেরে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর পথই বেছে নিলেন তিনি।
করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ বিশ^ব্যাপি মহা তান্ডব শুরু করেছে। তার কাছে আজ সবাই পরাজিত। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, একে অপরের
প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ সবই যেন বিদায় নিতে বসেেেছ। মমত্ববোধের বালাইটুকুও উবে গেছে এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে। চেনা
মানুষ অচেনা, আপন হতে চলেছে পর। আজ মানুষকে দেখলে মানুষ মুখে
কাপড় জড়ায় (মাস্ক)। এই বুঝি করোনার বাহক এলো। অতি প্রিয়জনকেও
দুর দুর ছেই ছেই করে। দীর্ঘ দিন এক সাথে গ্রামে বসবাস । যাদের
আপদে বিপদে একে অপরের পাশে দাড়ানোর রেওয়াজ প্রচলিত, আজ তারাই
মুখ ফিরে নেয় চির চেনা মুখ দেখে।
এমনি অবস্থা ভারতের উত্তরখন্ডে। গত ১৭ এপ্রিল এই সময়ের ডিজিটাল ডেক্স জানায়, মাত্র চার মাস আগে বিয়ে করা স্ত্রীকে নিয়ে কাজের
খোঁজে উত্তরখন্ড থেকে পাঞ্জাব গিয়েছিলেন তিনি। করোনা আবহে গ্রামে ফিরে এলও গ্রামে ঢুকতে পারেননি তিন্।ি অশোক কুমার ও
তার স্ত্রী গ্রামের বাইরে একটি স্কুলে আরো কয়েকজনের সঙ্গে
কোয়ারানটিনে থাকতে হয়েছিল্।ো গ্রামের লোকজন তাদেরকে তাদের
নিজ বাড়িতে কোনমতেই ফিরতে দেয়নি। যদিও তাদের দেহে করোনার
কোন লক্ষণ ছিলোনা। ফলে এই অবসাদেই তিনি স্ত্রীকে নিয়ে উত্তরাখন্ডের তিপ্পারপুর গ্রামের পাশের জঙ্গলে আত্মহত্যা করেন বলে মনে করা হয়।
একটি গাছের ডাল থেকে তাদের দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। । (চলবে)
(লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট