কোন এক মধ্য দুপুরে ছোট ভাই জসিমের ফোন ভাই আজ বিকেলে একটু সময় রেখ। বললাম কেন? বলল মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর স্যার সহ আমরা আজ ড.আনিসুজ্জামান স্যার এর বাসায় যাব। বিকেল চারটায় স্যারের সাথে মিটিং আমি আর আমাদের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.মোঃ আলাউদ্দিন স্যার বিকেল তিনটায় গুলশান ন্যাম ভবনে পৌছে যাই। স্যারের বাসার নিচে বসে থাকি। অনেক গল্প করছেন ভিসি স্যার। কোন কথা আমার মাথায় ঢুকছে না। শুধু হ্যাঁ হু করে যাচ্ছি। আমি এ মানুষটির কাছে গিয়ে কিভাবে দাঁড়াব। তিনি কিছু মনে করবেন কিনা। অনেক কথা অনেক ভাবনা। জসিম, সপ্নিল, সাইফুল, বিধান, সিমু, শায়ক ভাই সহ সকলে এসে উপস্থিত হল। আমরা সবাই স্যারের বাসায় গেলাম তখন চারটা পাঁচ। আমরা ঢুকে দেখি স্যার চেয়ারে বসে আছে। আমরা যাওয়ার সাথে সাথে সবাইকে এমনভাবে আপন করে নিলেন যেন আমরা সবাই ঘরের মানুষ। আমি ভুলেই গেলাম সবকিছু মনে হল আপন আলয়ে এসেছি। একটু পর ভাবি এসে সবাইকে যে আন্তরিকতার সাথে আপন করে নিল আমি মুগ্ধ। ওনি ঘরে তৈরী অনেক খাবার আমাদের সামনে হাজির করলেন। বললেন সবাইকে নিয়ে খেতে হবে। তোমাদের কেউ না খেয়ে থাকতে পারবে না। ভিসি স্যার ডায়াবেটিস রোগী তিনিও মিষ্টি সহ সব খাবার খেতে বাধ্য হলেন। আমি তাঁর কাছে গেলে মাথায় হাত রেখে যখন বলল আমরা সবাই মিলে কাজ করব। তোমরা এক একে সবাই বল। আমাদের মধ্যে প্রথমে ভিসি স্যার, তারপর শায়ক ভাই ও জসিম বলল। আমরা বঙ্গবন্ধু নববীক্ষণ নামে একটা বই বের করতে চাই। তিনি শুধু বললেন বঙ্গবন্ধু একটি চলমান মহিরূহ তাই এটি হবে বঙ্গবন্ধু বীক্ষণ। এক কথায় সবাই মেনে নিলাম। শায়ক ভাই বলল স্যার আপনাকে সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি হতে হবে। তিনি সবার অনুরোধে রাজি হয়ে গেলেন। শুরু হলো স্যারের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ। তারপর যতবার বইয়ের কাজে বা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গেছি আপন করে কাছে টেনে নিয়েছে। সবকিছুর পর যখন কাছে গেলে মনের মধ্যে একধরনের প্রশান্তি কাজ করত। আজ মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কোথায় যেন খালিখালি লাখছে। চিন চিন করে ব্যথাটা করছে। আর বাসায় গেলে মায়া ভরা মুখে ডাকবে না। বলবে না কেমন আছ। আর বলবে সবটুকু খাবার খেতে হবে। আর কখনো বলবে না ঢাকা থেকে এসেছ না টাঙ্গাইল থেকে।আর জিজ্ঞেস করবে না কতটুকু কাজ হয়েছে। একটি একটি করে খন্ড বল। অনেক সময় স্যারের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয়েছে। শেষ ১৭মার্চ আমরা সবাই মিলে আবার স্যারের বাসায় যাই। বঙ্গবন্ধু বীক্ষণ এর প্রথম খণ্ডের কপি স্যারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। স্যারের হাতে বই তুলে দেই আমরা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যরা । স্যার খুব খুশি হয়েছিলেন। ভাবির হাতেও একটি কপি তুলে দেই। ফিরে আসার সময় স্যারকে বলে আসি স্যার আপনি ভালো থাকবেন। এ অবস্থায় আমরা আর আসব না। আপনি ভালো থাকবেন স্যার। আমাদের বললেন তোমরাও ভালো থেক। কথা ছিল করোনাভাইরাস পরবর্তী পৃথিবীতে আবার দেখা হবে। আবার হয়ত পৃথিবী স্বাভাবিক হবে। আমরা যদি বেঁচে থাকি তবে সেই মুক্ত পৃথিবী আমার শুন্যই থেকে যাবে। বুকের ভেতর শুন্য জায়গাটা আর কখনো পূর্ণ হবে না। স্যার আজ বুকের ভেতর থেকে কান্না আসছে চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে। কার কাছে গিয়ে কিভাবে দাঁড়াব আমরা। আমাদের বঙ্গবন্ধু বীক্ষণ পরিবারের সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি ড.আনিসুজ্জামান স্যার আমাদের মাঝে নেই একথা আমি বা আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। স্যার আমরা চেষ্টা করবো আপনার অসমাপ্ত কাজটুকু সমাপ্ত করতে। আপনার দেয়া পরামর্শ মত। ওপারে থেকে আমাদের জন্য দোয়া করবেন। হয়তো আপনার মতো করে পারব না আর এটা সম্ভবও না। আপনি ছিলেন মহিরূহ আর আমরা সেই তুলনায় তৃনলতা। তবুও লতাপাতা দিয়ে আমরা আপনার দেয়া পরামর্শ ও শক্তি নিয়ে কাজটি সমাপ্ত করব ইনশাআল্লাহ। আজ এই দিনে মহান আল্লাহ্ তালার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের স্যারকে বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেন।স্যার যাবার পূর্বে শুধু যদি বলে দিয়ে যেতে পারতেন আপনি ছাড়া আমরা কিভাবে থাকব। নিয়তি মেনে নিয়ে শুধু বলব আপনার স্পর্শ আর সান্নিধ্য টুকু আমার এবং আমাদের সারাজীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।
মোহাম্মদ কানিছুর রহমান
সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যবঙ্গবন্ধু বীক্ষণও উপ-রেজিস্ট্রারমাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়