জেলার দুর্গাপুরে দ্বীনি আলীম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহমান এর ভুল সিদ্ধান্তের কারনে দীর্ঘদিন কারাভোগ করছেন মো. মোস্তফা (৪৫) নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক। বৃহস্পতিবার সকালে প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের কাছে এমনটাই জানালেন ওই শিক্ষার্থী অভিভাবক এর পিতা আব্দুল মালেক।
এ নিয়ে মামলার কপি ও সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, দুর্গাপুর পৌরশহরে অবস্থিত দ্বীনি আলীম মাদরাসা চলাকালীন সময়ে গত অক্টোবর মাসে চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করার এক পর্যায়ে মো. হাসান আপন (১৪) নামের এক শিক্ষার্থীর হাতের একটি ঢিল তার বন্ধু মো. তাহসিন আহমেদ (১০) এর ডান চোখের উপরে এসে পরলে তাৎক্ষনিক শিক্ষার্থীগন, মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অভিভাবক মো. মোস্তফা স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিজ খরচে ময়মনসিংহে প্রেরণ করেন। ঘটনার দিন মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান অফিসিয়াল কাজে বাহিরে অবস্থান করলেও পরদিন প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতিতে কেন শিক্ষার্থীদের মাঝে এ ধরনের ঘটনা ঘটলো এর শাস্তি স্বরুপ অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে দায়িত্ব অবহেলার কারনে ২লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। কেউ কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেও নানা ভয়ভীতির কারনে প্রায় ১লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে দেয় অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের হাতে। আহত হওয়া শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের ভাইয়ের ছেলে হওয়ায় টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টিতে কেউ আর খতিয়ে দেখেননি। দুর্গাপুর হাসপাতালের চিকিৎসাতেই তাহসিন ভালো হয়ে গেলে ময়মনসিংহে চিকিৎসার জন্য পাঠানো ও রোগীকে ঢাকা পাঠাতে হবে এ ছিলো সম্পুর্ন একটি নাটক। এ বিষয় সকলেই জানাজানি হওয়ায় সকলের মাঝে ভীতি সৃষ্টির লক্ষে অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান কাউকে না জানিয়ে তাঁর ভাতিজাতে এই মাদরাসা থেকে সরিয়ে সু-কৌশলে অন্য কোথায় ভর্তি করেন। পরবর্তিতে অধ্যক্ষ সহ মাদরাসার এসএমসি কমিটির কয়েকজন সদস্য মিলে অভিভাবক মো. মোস্তফার কাছে ঐ ছেলের উন্নত চিকিৎসা করতে ঢাকা নিতে হবে মর্মে তিন লক্ষ টাকা দাবী করে। দফায় দফায় এ নিয়ে সালিশ হলেও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নাম সর্বস্ব কতিপয় সাক্ষি দিয়ে, উল্লেখিত ঘটনার প্রশ্নবিদ্ধ স্থান উল্লেখ করে (যাহা বাস্তবে কোন মিল নেই) মাদরাসার আহতের ঘটনাকে জড়িয়ে, গত ১২ ফেব্রæয়ারী শিক্ষার্থী অভিভাবক মো. মোস্তফা ও শিক্ষার্থী মো. হাসান আপন কে আসামী দিয়ে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষের ভাই তাহসিন এর বাবা মো. আব্দুস সামাদ। দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হওয়ার এক সপ্তাহ পর শিশু শিক্ষার্থী আপন ও তার বাবা মো. মোস্তাফা কে গ্রেফতার করেন দুর্গাপুর থানা পুলিশ। আপন শিশু শিক্ষার্থী হওয়ায় তাঁর দাদুর জিম্মায় দিয়ে মো. মোস্তফা কে জেল হাজতে প্রেরণ করেন বিজ্ঞ আদালত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসা বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ছোট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপুর্বক প্রায় ১লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করেন অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান। যদি টাকাই আদায় করলো, তাহলে অহেতুক ওই শিক্ষার্থী অভিভাবক কারাবাস করছে কেন। শিক্ষার্থীদের ওই ঘটনাটি মিমাংসা না করে টাকা আদায়ের খেলায় মেতে উঠছে কেন। আমার জানামতে তার ভাতিজা ৩দিন পরেই ভালো হয়ে অন্য এক মাদরাসায় পড়াশুনার করছে। শুধু তাই নয়, মাদরাসার জায়গাতে প্রায় ২৩টি দোকান রয়েছে, এর কোন সঠিক হিসাব, দোকান সিকিউরিটির টাকা মাদরাসার একাউন্টে জমা না দিয়ে, হাতিয়ে নেয়ার লক্ষে নামমাত্র উন্নয়ন কাজ করা এবং মাদরাসায় নিয়োগ বানিজ্য থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া সহ বহু অভিযোগ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন ওই শিক্ষকগন।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান বলেন, করোনা ইস্যুতে প্রতিষ্ঠান ছুটি থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে আমি এলাকার বাহিরে অবস্থান করছি। এ নিয়ে মুঠোফোনে কোন কথা বলবো না বলে ফোন কেটে দেন।
এ ঘটনার আলোকে এসএমসি সভাপতি মো. আব্দুল হান্নান বলেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে এলাকার বাহিরে অবস্থান করছি, এ নিয়ে আপনাদের সাথে সাক্ষাতে কথা বলবো।
প্রতিনিধি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সুমন দাসকে মামলা সংত্রæান্ত ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন বাদী মামলায় ঘটনাস্থল সঠিক দেয় নাই তবে ডাক্তারি রির্পোট আসলে চার্জশিট দেওয়া হবে ।
ছোট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন কারাভোগ করছে এক শিক্ষার্থী অভিভাবক, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থী আপন এর পড়াশোনা, ভেঙ্গে যাচ্ছে মোস্তফার সোনার সংসার, তবে কি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মো. মোস্তফা? পার পেয়ে যাবেন অর্থলোভী অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান? সঠিক বিচারের আশায় নিভৃতে কাঁদছে মোস্তফা, আদৌও কি ন্যায় বিচার হবে? সেদিকে তাকিয়ে আছেন এলাকাবাসী।