করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত দুই মাস অফিসে গিয়ে বিদ্যুৎ বিল দিতে পারেনি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অধিকাংশ গ্রাহক। তাই পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ গত দুইদিন ধরে বিল আদায় করতে গ্রামে গ্রামে ভ্রাম্যমান বিল কালেকশন সেন্টার পরিচালনা করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব সেন্টারে বিদ্যুৎ বিল নেয়া হয়। এতে গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে এসব সেন্টারে কোনো সামাজিক দুরুত্ব বজায় থাকছে না। গ্রাহকরা একে অপরের গা ঘেঁষে এবং হুড়াহুড়ি করে বিদ্যুৎ বিল জমা দিচ্ছেন।
জানা যায়, গত ৮ ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই ভাঙ্গুড়া উপজেলার অনেক সচেতন মানুষ ঘরে আবদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ২৪ মার্চ থেকে পাবনার সর্বত্র হাট বাজার বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। এর তিনদিন পরে সরকারি অফিস-আদালতও বন্ধ হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে ভাঙ্গুড়া পৌর শহরসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা নিজ নিজ এলাকা স্বেচ্ছায় লকডাউন করে দেয়। এতে সাধারণ জনগণের চলাচল অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় গত মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিদ্যুতের বিল অফিসে গিয়ে জমা দিতে পারেনি অধিকাংশ গ্রাহক। এতে বকেয়া বিল তুলতে ভাঙ্গুড়া পল্লী বিদ্যুতের সাব জোনাল অফিস গত দুইদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভ্রাম্যমান বিদ্যুৎ বিল আদায়ের সেন্টার পরিচালনা করছেন। গ্রাহক হাজির করতে বিল আদায়ের আগেরদিন গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে দেয়া হয়।
পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা জানান, মাইকিং করে বিল দিতে গ্রাহকদের ডাকা হয়। সে সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হবে বলে মাইকে ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিল দিতে গেলে সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ২/৩ জন কর্মচারী টেবিলে বসে বিদ্যুৎ বিল উত্তোলন করেন। এসময় গ্রাহকদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইন দাঁড়াতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের বা প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি। এতে গ্রাহকরা একজনের গা ঘেঁষে আরেকজন হুড়াহুড়ি করে বিল দেয়ার চেষ্টা করে। ফলে আগতদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ বিল কালেকশন সেন্টারে।
উপজেলার বেতুয়ান গ্রামের গ্রাহক শফিকুল সরকার বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে প্রশাসন সকলকে ঘরে থাকতে বলছেন। এতে অনেকেই অফিসে গিয়ে সময়মতো বিদ্যুৎ বিল দিতে পারেনি। তাই গ্রামে এসে বিদ্যুৎ বিল কালেকশন করছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে এসব সেন্টারে গ্রাহকদের মধ্যে কোনো সামাজিক দুরুত্ব বজায় থাকছে না। তাই কোনো করোনা সংক্রমিত লোক এসব স্থানে আসলে মহামারী আকার ধারণ করবে। বিষয়টির সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া পল্লী বিদ্যুতের সাব জোনাল অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক মুনির হোসেন বলেন, বকেয়া বিল তুলতে গ্রামে গ্রামে ভ্রাম্যমান কালেকশন সেন্টার পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত গ্রাহকের ভিড়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গ্রাহকরা সচেতন না হলে কোনভাবেই এসব সেন্টারে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না। তাই বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।