চলতি বোরো মৌসুমে ঈশ্বরদীর খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহের তালিকা তৈরীতে অনিয়ম ও
দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মিল, বয়লার, চাতাল কোনোটাই নেই ,এমনকি দীর্ঘদিন
ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই এমন মিলও চাল সরবরাহের জন্য তালিকাভূক্ত হয়েছে। কয়েক
বছর ধরে বন্ধ চালকল এবং এখনও চালুই হয়নি এধরণের প্রতিষ্ঠানও গুদামে চাল
সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে। ঈশ্বরদীতে ৬০ – ৭০টি চালকলের ক্ষেত্রে এই অনিয়মের
ঘটনা ঘটেছে।
ঈশ্বরদী খাদ্যগুদাম ও মুলাডুলি কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামে চাল
সরবরাহের জন্য এবারে ৪২৫টি চালকলকে ১৫ হাজার ১৬২ টন চাল বরাদ্দ দিয়ে
তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রকৃত চালকল মালিকদের অভিযোগ, অটো রাইস মিল
মালিকদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক
এই তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। তাকে সহযোগিতা করেছেন ঈশ্বরদী উপজেলা খাদ্য
নিয়ন্ত্রক মামুন এস কাইয়ুম। বরাদ্দের জন্য টনপ্রতি ১০০ টাকা না দিলে
খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহের অনুমতি দেয়া হয় না।
চলতি সংগ্রহ অভিযানে চাল
বরাদ্দদানের ক্ষেত্রে মিলের নাম তালিকাভুক্ত করা নিয়ে জেলা ও উপজেলা খাদ্য
নিয়ন্ত্রক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দুদকে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কয়েকজন
বৈধ মিল মালিকের সাথে কথা বলে এবং সরেজমিনে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।
ঈশ্বরদীর আইকে রোডের মেসার্স রেদওয়ান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিজানুর
রহমান মহলদার দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগে জানান, সরকারের খাদ্য
সংগ্রহের আওতায় যে ৪২৫ মিলারকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তারমধ্যে বেশ কিছু
মিলেরই বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত ও বন্ধ ঘোষিত মিলকেও
খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, মানিকনগর
গ্রামের মন্ডল এগ্রোফুড নামের একটি অটো রাইস মিল কয়েক বছর ধরে বন্ধ। অথচ এই
মিলকে ৪৩৮.৭৫০ টন বরাদ্দ দিয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে মুলাডুলি
ইউনিয়নের শেখপাড়ার মেসার্স সাজ অটো রাইস মিল, মুলাডুলির মেসার্স আশাই অটো
রাইস মিল, চকনারিচার মেসার্স খান অটো রাইস মিল এখনও চালুই হয়নি। অথচ তাদের
নামও তালিকাভুক্ত করে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ দিয়ে চাল সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া
হয়েছে। এতে প্রকৃত হাসকিং মিল মালিকদের বরাদ্দ কমে গেছে। সাহাপুরের
মেসার্স আরাখা চালকলসহ বেশ কয়েকটি চালকল যেগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ, বয়লার নেই,
সেগুলোর নামও তালিকায় রয়েছে।
চালকল মালিক মিজানুর রহমান মহলদার জানান,
গত বছর তার চালকলের নাম তালিকায় ছিল। এবারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন
এস কাইয়ুমকে উৎকোচ দিতে রাজি না হওয়ায় আমার মিলের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা
খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন এস কাইয়ুম উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
সরকারি নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই ঈশ্বরদীতে চাল সরবরাহের জন্য তালিকা তৈরী
হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ
বানোয়াট উল্লেখ করে বলেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সার্ভে টিমের মাধ্যমে
চালকলের তালিকা প্রেরণ করেন। সেই অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়। এখনও চাল সংগ্রহ
শুরু হয়নি। যদি এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে পুনঃতদন্ত করে তালিকা হতে
অভিযুক্তদের বাতিল করা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব রায়হান
বলেন, সরকারের খাদ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে কেউ দুর্নীতির আশ্রয় নিলে তার
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।