জুড়ী উপজেলার ৩নং পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম আমতৈল গ্রামে অবৈধভাবে স্থাপিত পরিবেশ নষ্টকারী পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ ১০ মে দুপুরে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় আমতৈল গ্রামবাসী। পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাধা কান্ত দাশের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- আহমদ আলী ও রিমা রানী দাশ। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, জুড়ী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাজীব বৈদ্য। ও ভুক্তভোগী রাধা কান্ত দাশ বলেন- গ্রামে দীনবন্ধু সেন প্রায় তিন বছর পূর্বে সম্পূর্ন অবৈধ ভাবে ‘বন্ধু পোল্ট্রি ফার্ম’ নামে লেয়ার মুরগির ফার্ম চালু করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ছাড়া অবৈধ ভাবে প্রতিষ্ঠিত এই ফার্ম থেকে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিবেশীরা বাড়ী ঘরে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। খামারের ময়লা পাইপ দিয়ে নদীতে ফেলা হয়। এতে নদীর পানি ও পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। অথচ পোল্ট্রি নীতিমালা অনুযায়ী, মুরগির খামার পরিষ্কার করা পানি ও বিষ্ঠা নির্দিষ্ট একটি কূপে রাখতে হবে। কূপের ভেতর চুন, পটাশ ব্যবহার করতে হবে। যাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয়। তা না হলে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ (সংশোধিত ২০০২) অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। সেখানে এই নিয়মের কোন তোয়াক্কা করা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা ফার্ম বন্ধের দাবি জানালে তিনি বিভিন্ন ভাবে আমাদের হয়রানীর চেষ্টা করা হয়। গত ১ মে রাতে দীনবন্ধু সেন অভিনব পায়তারা করে তার সহযোগীদের নিয়ে ফার্মের বেড়া-নেট ভাঙচুর করে হাল্লা চিৎকার শুরু করে। চিৎকার শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে জড়ো হন। রাত দশটায় উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক ধান কাটার মেশিন দেখতে সেখানে গেলে স্থানীয়রা দীনবন্ধু সেনের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরলে তিনি সকলকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে তিনি স্থানীয় বাসিন্দা তোফাজ্জুল আলীর বাড়ীতে চা খেতে গেলে দীনবন্ধুর ভাড়াটিয়া মাস্তানরা ওই বাড়ী ঘেরাও করে তোফাজ্জুল আলীর পুত্র বদরুল ইসলামকে মারপিঠ করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তার ভাই নুরুল ইসলামের দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। বাধা দিতে গেলে নুরুলের মাকেও মারপিঠ করে স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় দীনবন্ধু সেন উল্টো উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ আসামী করে মিথ্যা মামলা করেন। মামলায় আমরা ভুক্তভোগীদের আসামী করা হয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সাজানো সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ পরিবেশ বিনষ্টকারী অবৈধ পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধের জোর দাবি জানাই। ভুক্তভোগী আহমদ আলী বলেন, নীতিমালা উপেক্ষা করে গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খামারটি স্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে গ্রামবাসীর পক্ষে। তিনি বলেন, তিন বছর আগে আমতৈল গ্রামের দীনবন্ধু সেন গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় লেয়ার মুরগির খামার স্থাপন করেন। মুরগির বিষ্ঠার কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিষ্ঠার দুর্গন্ধে খামারের চারদিকে মানুষের বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, একটি মুরগির খামার স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং জনগণের ক্ষতি হয় এমন স্থানে খামার স্থাপন করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, খামার মালিক দীনবন্ধুর পুত্র একজন মাদকসেবী। সে এলাকায় অসামাজিক কাজ করে অনেকবার ধরা পড়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করায় আজ মিথ্যা মামলার আসামী হয়েছি। কলেজ ছাত্রী রীমা রানী দাশ বলেন, আমরা করোনাভাইরাস থেকে নয়, ফার্মের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি চাই। সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য সুন্দর পরিবেশ চাই। এবং সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই।