গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আলাল হোসেন। সেখানে সে একটি ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করে। করোনা ভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১৮ মার্চ কলেজ বন্ধ হয়ে গেলেও সে গাজীপুরেই থেকে যায়। এক পর্যায়ে গত এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখের দিকে সে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়। এর দুইদিন পর সে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় নিজের বাড়িতে চলে আসে। ওই কলেজ ছাত্র ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক হাজী বেলাল হোসেনের ছেলে। বাড়িতে এসে ওই কলেজছাত্র চিকিৎসা নিতে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। তখন চিকিৎসকরা তার রোগের উপসর্গ বিবেচনা করে ৩ মে নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পাঠান এবং তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে নির্দেশ দেন।
কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে ওই কলেজ ছাত্র বাজার ঘাট সহ গ্রামের বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। গ্রামের ইউপি সদস্য সহ গ্রাম প্রধানরা তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বললেও সে সবকিছু উপেক্ষা করে উন্মুক্ত ভাবে ঘুরে বেড়াতেই থাকে। এমনকি এরপর আর উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন খোঁজ-খবর নেয়নি ওই কলেজ ছাত্রের। এ অবস্থায় শনিবার দুপুরে ওই কলেজ ছাত্রের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে মোবাইলের মাধ্যমে বার্তা পাঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে ওই কলেজছাত্রের শরীরে করোনা ধরা পড়ে।
এরপর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সহ উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওই কলেজ ছাত্রের বাড়ি গিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়। তখন ওই কলেজছাত্রের এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর তথ্য নিয়ে তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়। এছাড়া ঘুরে বেড়ানোর সময় ওই কলেজ ছাত্রের সান্নিধ্যে আসা ব্যক্তিদের আগামীকাল নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন।
চন্ডিপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেনা পারভীন বলেন, ওই কলেজছাত্র সর্দিজ্বর নিয়ে গ্রামে আসে। কিন্তু কয়েকদিন পরেই বাজার ঘাট সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে থাকে। এমনকি সে বাজারে গিয়ে চা স্টলে বসে আড্ডাও দিয়েছে। তাকে সবাই নিষেধ করলেও কর্ণপাত করেনি। এখন তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে এলাকায় সাধারণ মানুষ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, নমুনা সংগ্রহের পরে ওই কলেজ ছাত্রকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছিল উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন। তবে সে গত দুইদিন হোম কোয়ারেন্টিন মানেনি। এই অবস্থায় আজ শনিবার ওই কলেজ ছাত্রের করোনা শনাক্ত হয়। এতে তার সান্নিধ্যে আসা ব্যক্তিদেরও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া ওই কলেজ ছাত্রের বাড়িসহ তিনটি বাড়ি লকডাউন করে সরকারিভাবে খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।