আটঘরিয়ায় করোনার সাধারণ ছুটির মধ্যে সরকারী বরাদ্দের দেড় কোটি টাকার কাজ করতে তড়ি ঘড়ি

স্টাফ রিপোর্টার
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসের সাধারণ ছুটির মধ্যে সরকারী বরাদ্দের ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা উত্তোলন ও কাজ করতে তড়ি ঘড়ি করছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। দেশের এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি থাকা সত্বেও উপজেলা শিক্ষা অফিসের এমন সিদ্ধান্তে চরম ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা।
এদিকে উপজেলার ৭৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৭০ টি বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হওয়ায় বরাদ্দের টাকাদিয়ে কাজ করা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি অর্থবছরে উপজেলার ৭৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। যার মধ্যে ক্ষুদ্রমেরামত এর জন্য ৫৬ টি বিদ্যালয়ে ২ লক্ষ করে মোট ১ কোটি ১২ লক্ষ টাকা, খেলা-ধুলার সামগ্রী কেনার জন্য ৮ টি বিদ্যালয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার করে ১২ লক্ষ টাকা, রাজস্ব বরাদ্দ ৪ টি বিদ্যালয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার করে ৬ লক্ষ টাকা এবং স্লিপ প্রকল্পে ৭৮ টি বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পরিমানে ২৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন।
দেশের এই করোনাভাইরাসের মধ্যে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক সাধারণ ছুটি ও অঘোষিত লকডাউন থাকলেও মঙ্গলবার সকাল থেকেই উপজেলা শিক্ষা অফিসে এবং ফটোকপির দোকানে শিক্ষকদের ভিড় করতে দেখা যায়। এবিষয়ে শিক্ষকদের কাছে জানতে চাইলে তারা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, শিক্ষা অফিসারের নির্দেশনা মানতেই হবে তাই সরকারী ছুটি উপেক্ষা করে আসতে হয়েছে।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, উপজেলার ৭৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৭০ টি বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হয়েগেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পের টাকার কাজ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। আর এই সুযোগে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ৩টি ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসারদের বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি
বানিয়ে তাদের মাধ্যমে কাজ করার পায়তারা করছেন। এতে বিদ্যালয়ে সঠিক ভাবে কাজ করা সম্ভব হবেনা বলে আসংখ্যা ব্যক্ত করেন।
উপজেলার আরেকজন প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার সর্তে বলেন, সহকারী শিক্ষা অফিসারদের বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের বাধ্য করেন তাদের কাছথেকে উচ্চ মূল্যে সেইসকল মালামাল ক্রয় করতে। যেহেতু এডহক কমিটির সভাপতি থাকেন সহকারী শিক্ষা অফিসার সেই কারনে আমাদের অসায়ত্ব প্রকাশ করে চলতে হয়।
এবিয়য়ে, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোছা. সিরাজুম মুনিরা বলেন, শিক্ষকদের
ডেকে এনে টাকা উত্তোলন ও কাজ করার প্রস্তুতি চলছে। অর্থবছরের আগেই সকল
টাকা উত্তোলন ও কাজ শেষ করতে হবে তাই এমন সিদ্ধান্ত। উপজেলার প্রায় ৭০টি
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ উর্ত্তির্ণী হওয়ার বিষয়ে বলেন, নতুন কমিটির না হওয়া পর্যন্ত পূর্বেও কমিটি উন্নয়ন মূলক কাজ করতে পারবে কিনা এবিষয়ে কোন নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। সহকারী শিক্ষা অফিসারদের নানা
অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোন ঘটনা আমার জনা নেই।
তবে ঘটনা সত্য হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণকরা হবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের এমন অনিয়মের বিষয়ে শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা
পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তানভীর ইসলাম বলেন, এবিষয় নিয়ে উপজেলা শিক্ষা
অফিসার আমার কাছে এসেছিলেন। আগামী ৮ মে সভার আয়োজন করা হয়েছে। সেই সভায় পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কোন অনিয়ম থাকলে বা দুর্নীতির প্রমান থাকলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
করোনভাইরাসের প্রকোপে সারাবিশ্ব যখন থমকে গেছে ঠিক সেই সময় উপজেলার
সকল শিক্ষকদের একত্রিত করে প্রকল্পের কাজ করতে তড়ি ঘড়ি করায় চরম অসন্তোষ
প্রকাশ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সচেতন
মহল।
.