দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পবিত্র মাহে রমজানের ফরজ রোজা আদায় করছেন। কিন্তু কি কারণে রোজার পবিত্রতা নষ্ট হয়, কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কি কারণে ভঙ্গ হয় না, তা অনেকের কাছে অজানা। এ নিবন্ধে ইফতার, সাহরির দোয়াসহ রোজা সংশ্লিষ্ট জরুরি কিছু মাসায়ালা নিয়ে আলোকপাত করা হলো।
রোজার সংজ্ঞা : সুবহে ছাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইবাদতের নিয়তে যাবতীয় পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকার নামই রোজা। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, জ্ঞান সম্পন্ন মুসলমান নর-নারীর উপর রমজানের রোজা ফরজ। মহিলাদের ঋতুস্রাব (মাসিক) ও নেফাস গ্রস্থ থাকাকালীন সময়ে মহিলাদের জন্য রোজা রাখা ফরজ নয়। তবে পরবর্তী সময়ে রোজার কাযা আদায় করতে হবে।
রমজানের রোজার জন্য পৃথকভাবে নিয়ত করা জরুরি। সাহরি খাওয়ার পর রোজা নিয়ত করা জরুরি। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। কেবল মনের ইচ্ছা তথা রোজা রাখার সংকল্প করাকেই নিয়ত বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে। তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম।
রোজার নিয়ত : নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়ত) করলাম। অতএব, তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতার : সূর্য অস্তমিত হয়ে যাওয়ার পর ইফতার করা উত্তম। অনেকে ইফতারের সময় হওয়ার পরেও ইফতার করতে বিলম্ব করে। সময় হওয়ার পর বিলম্ব করে ইফতার করা মাকরুহ। আবার অনেকেই ইফতার না করে আগে মাগরিবের নামাজ পড়েন তারপর ইফতার করেন এটাও মাকরুহ, বরং আগে ইফতার তারপর নামাজ পড়া উত্তম। সম্ভব হলে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য দ্বারা ইফতার করা।
ইফতারের দোয়া : আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ। অর্থ :(ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।
সাহরি : সাহরি খাওয়া সুন্নাত। হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (অর্থাৎ মুসলিমরা সাহরি খায় আর ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না)। সাহরি খাওয়ার মধ্যে অনেক বরকত ও সওয়াব রয়েছে’। (বোখারি : ১৯২৩)। অনেকেই অলসতা করে সাহরি না খেয়ে রোজা রাখেন, এটা ঠিক নয়। রাতের শেষভাগে সাহরি খাওয়া উত্তম, তবে এর আগে খেয়ে নিলে কোন অসুবিধা নেই।
সাহরির দোয়া : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রামাদানাল মুবারাকি, ফারদ্বাল্লাকা ইয়া আল্লাহ ফাতাকাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।
তারাবি : রমজান মাসে তারাবির নামাজ বিশ রাকাত পড়া প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুন্নতে মুআক্কাদা। অনেকে রোজা রাখেন ঠিক, কিন্তু তারাবির নামাজ পড়তে অলসতা করেন। পুরুষদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে তারাবির নামাজ পড়া আবশ্যক। কিন্তু এই রমজানে করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় আলেমসমাজ এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরেই আদায় করুন। সম্ভব হলে পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ঘরেই জামাতে নামাজ আদায় করুন।
তারাবির নামাজের অশেষ ফজিলত। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতের (তারাবিহ) নামাজ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে পড়বে, তার জীবনের আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বোখারি ২৪১৬)।
তারাবিহ নামাজের নিয়ত : নামাজেরনিয়ত আরবিতে করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আরবি কিংবা বাংলায় নিয়ত করলে তা হয়ে যাবে। তারাবির দুই রাকাআত নামাজ ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য (এ ইমামের পেছনে) পড়ছি আল্লাহু আকবার।
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয়না : ১। অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোজা ভঙ্গ হবে না। তেমনি বমি কণ্ঠনালীতে এসে নিজে নিজে ভেতরে ঢুকে গেলেও রোযা ভাঙবে না। তিরমিজি: ১/১৫৩)।২। স্বপ্নদোষ হলে, শরীর থেকে রক্ত বের হলে, শিঙ্গা লাগালে (রক্ত দিলে) রোজা ভঙ্গ হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিনটি বস্তু রোজা ভঙ্গ করবে না: বমি, সিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ। (ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার: ১২৯১)। তবে রক্ত দিলে যদি শরীর দুর্বল হয়ে যায়, এতে রোজা মাকরূহ হবে; কিন্তু রোজা ভঙ্গ হবেনা। (বোখারি ১৯৪০)।অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রোজাদার অবস্থায় অনিচ্ছাবশত বা বাধ্য হয়ে বমি করবে, তার কাযা করতে হবে না। (আবু দাউদ: ১২৯৪)।৩। সুরমা, কাজল, সুগন্ধি ইত্যাদির দ্বারা রোজার কোন ক্ষতি হয় না। আনাস ইবনু মালিক (রা.) রোজাদার অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করতেন। (ফিকহুস সুনান: ১৩০৫)। ৪। মশা, মাছি, ধুলাবালি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটে ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কারো গলায় মাছি ঢুকে গেলে রোযা ভঙ্গ হবে না।’ (ইবনু আবি শায়বা, আল মুসান্নাফ: ৬/৩৪৯)।৫। ভুলে কিছু পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হবেনা। হাদিসে এসেছে, ‘যে রোজাদার ভুলে পানাহার করলো, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে; কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। (মুসলিম: ১১৫৫)।৬। শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। (আবদুর রাযযাক, আল মুসান্নাফ: ৪/৩১৩)।৭। রোজা অবস্থায় অজ্ঞান, বেহুঁশ বা অচেতন হলে রোজা ভাঙবে না। (সুনানুল কুবরা: ৪/২৩৫)।৮। রোজা অবস্থায় মিসওয়াক (কাঁচা বা পাকা ডাল যাই হোক) করলে রোজার কোন সমস্যা নেই। এমনকি ইফতারের পূর্বে করলেও অসুবিধা নেই। (বোখারি : ১/২৫৯)।৯। নাইট্রোগ্লিসারিন-জাতীয় ইনহেলারে রোজা ভাঙবে না, তবে ভেনটোলিন ইনহেলারে রোজা ভেঙে যাবে, কারণ এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। ১০। নাকে ড্রপ, স্প্রে ব্যবহারের পর তা যদি গলার ভিতরে চলে যায়, তবে রোজা ভেঙে যাবে। অবশ্য গলায় না গেলে বা স্বাদ অনুভূত না হলে রোজা ভাঙবে না। (মাজাল্লাতু মাজমা‘ইল ফিকহিল ইসলামী : ২/৪৫৪)১১। খাবার ঠিকঠাক আছে কীনা তা বোঝার জন্য ঘ্রাণ নিলে রোজা ভাঙবে না। ইবনু উসাইমীন (রাহ.) বলেন, খাবারের স্বাদ গ্রহণ করলে রোজা ভাঙবে না। যদি গিলে ফেলা না হয়। (রমজান মাসের ৩০ আসর, পৃষ্ঠা: ১৫৫)।১২। রোজা অবস্থায় নখ বা চুল কাটতে কোনো সমস্যা নেই। মেয়েরা হাতে-পায়ে মেহেদী দিলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।১৩। সহবাস ছাড়া স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হলে রোজা ভাঙবে না। তবে বীর্যপাত হওয়া যাবে না। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাদার অবস্থায় (স্ত্রীকে) চুমু খেতেন এবং আলিঙ্গন করতেন। তবে, নিজ আবেগ-উত্তেজনার উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিলো তোমাদের সবার চেয়ে বেশি। (ফিকহুস সুনান: ১২৯৫)।১৪। রাতে সহবাস করতে কোনো অসুবিধা নেই। এমনকি সহবাসের পর গোসল না করে সাহরি খেয়ে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর গোসল করলেও সমস্যা নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই কাজটি সাব্যস্ত আছে। (ফিকহুস সুনান: ১৩০৪)।১৫। গরমের কারণে, শরীর ঠাণ্ডা করতে একের অধিকবার গোসল করতেও সমস্যা নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই কাজটির প্রমাণ আছে। (আবু দাউদ: ২৩৬৫)১৬। চোখ বা কানের ড্রপ দেয়া। ১৭। ইনহেলার বা অক্সিজেন গ্রহণ। ১৮। মিসওয়াক, টুথব্রাশ বা পেস্ট ব্যবহার অথবা দাঁত ফিলিং করা। তবে এক্ষেত্রে কোনো কিছু গিলে ফেলা পরিহার করতে হবে।১৯। দেহের কোনো অংশে ক্যাথেটার কিংবা ক্যামেরা প্রবেশ করানো যদিওবা তা মুখ দিয়েও হয়। কেননা তা পানাহার কিংবা এর বিকল্প কিছু নয়। ২০। ক্রিম, তেল, মেকআপ, লিপস্টিক, ঠোঁট আর্দ্রকারী দ্রব্য, সুগন্ধি ব্যবহার। ২১। মুখের লালা কিংবা সর্দি গিলে ফেলা। ২২। কিছু হৃদরোগের ওষুধ/স্প্রে আছে যা জিহবার নিচে রাখা হয়, এ ধরনের ওষুধের কোনো অংশ গিলে না ফেললে তা মুখে রাখা সাওম ভঙ্গকারী নয়। ২৩। রক্ত পরীক্ষা করা। ২৪। চোখে সুরমা লাগানো। ২৫। স্বপ্নদোষ হওয়া। ২৬। দাত হতে রক্ত বাহির হওয়া। ২৭। জুনবী তথা নাপাক অবস্থায় সাহরি খাওযা। ২৮। চোখে ওষুধ লাগানো।
যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে : ১। রোজা রেখে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করা। ২। কোন ধরনের খাবার গ্রহন করা। ৩। উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত করা। ৪। খাদ্যের অন্তর্ভূক্ত এমন কিছু গ্রহন করা। যেমন সেলাইন ইত্যাদি। ৫। ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা। ৬। শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করা। ৭। হায়েজ বা নেফাছের রক্ত প্রবাহিত হওয়া। ৮। ইচ্ছকৃত মুখ ভরে ভমি করা। ৯। সহবাস ছাড়া অন্য কোন পন্থায় বির্যপাত ঘটানো। ১০। ধুমপান করা রাত আছে মনে করে সুবহে ছাদিকের পর পানাহার করা। ১১। ভুলবশত পানাহার করে রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছা করে পানাহার করা।
যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় : ১। মুখে থুথু জমা করে গিলে ফেলা। ২। টুথপেস্ট দিযে দাত ব্রাশ করা। ৩। কয়লা মাজন দ্রব্য দিয়ে দাত মাজা। ৪। নাপাক অবস্থায় গোসল ছাড়া সারাদিন থাকা। ৫। স্ত্রীর সাথে হাসি টাট্টা করা যাতে সহবাস বা বির্যনির্গত হওয়ার আশঙ্কা হয়। ৬। রোজা রাখা অবস্থায় গোনাহের কাজ করা। ৭।অযথা কোন জিনিস চিবানো। ৮। গিবত করা। ৯ চুগোলখোরী করা। ১০। অশ্লীল কথাবার্তা বলা। ১১। সিঙ্গা লাগানো।
যেসব কারণে রোজা কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব : ১। রোজা রাখা স্মরণ অবস্থায় কোন পানাহার করা।২। ইচ্ছাকৃত স্ত্রীর সাথে সহবাস করা। এমতাবস্থায় কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়জিব।
মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তির রোজা :কোন ব্যক্তি সফরে থাকলে (মুসাফির) এবং অসুস্থ হলে, রোজা রাখলে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এমতাবস্থায় রোজা ছাড়ের অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু মুসাফির এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা পরবর্তী সময় রোজা কাজা আদায় করবেন। অসুস্থ এবং মুসাফিরের জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। (সূরা বাকার:১৮৫)।
দিনের বেলায় কোন কাফের যদি ইসলাম গ্রহণ করেন কোন বালক-বালিকা যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হন এবং কোন পাগল যদি ভালো হয়ে যায় তাহালে তারা রোজার হুকুমের আওতায় এসে যাবেন এবং সুর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে পূবের রোজাগুলোর কাজা করা তাদের জন্য বাধ্যতামুলক নয়। যেহেতু আগেরগুলোতে তাদের উপর রোজা ওয়াজিব ছিল না।
এতেকাফ : রমজানের শেষ দশকে মহল্লার জামে মসজিদে এতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। যে ব্যক্তি এখলাছের সাথে এতেকাফ করবে তার পেছনের সমস্ত গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দিবেন। কোরআন করিমে এরশাদ হয়েছে, ‘ওয়ানতুম আকিফুনা ফিল মাসজিদ। আর তোমরা সালাতের নির্দিষ্ট স্থানগুলোয় অবস্থানরত। (সুরা বাকারা : ১৮৭)। ২০ রমজান সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্ব থেকে ২৯ অথবা ৩০ রমজান অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার পূর্ব পর্যন্ত পুরুষদের জন্য মসজিদে এবং নারীদের জন্য নিজ গৃহে নামাজের নির্ধারিত স্থানে নিয়মিত একাধারে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। শরিয়তের পরিভাষায় যেই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতসহকারে নিয়মিত আদায় করা হয় এমন মসজিদে মহান আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়তসহকারে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। এতেকাফের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ।
শবে কদর : পবিত্র রমজান মাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রজনী হলো পবিত্র শবে কদর। মহান আল্লাহর ভাষায়-লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। কোরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি একে নাযিল করেছি শবে কদরে। শবে কদর সম্পর্কে আপনি কি জানেন? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা আল কাদর : ১-৫)।শবে কদরের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নেই। অনেকেই মনে করেন ২৭ রমজানই লাইলাতুল কদরের রাত। আসলে এ ধারণাটি সঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনও বলেন নি যে, ২৭ রমজানের রাত কদরের রাত। তবে ২১ রমজান থেকে নিয়ে ২৯ রমজন পর্যন্ত বেজোড় যে কোন রাতই শবে কদর হতে পারে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ করো। (মুসলিম, হাদিস নং: ১১৬৯)
মহান আল্লাহ তাআলা রোজার মাসায়ালা জেনে যথার্থভাবে রোজা রাখা এবং পবিত্র রমজান মাসকে যথাযথ ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও মুহতামিম, সাইটুলা, ইসলামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম মাদরাসা, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।