আমাদের এই সমাজ সাংবাদিকের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারেনি, কিন্তু ন্যুনতম সম্মানটুকু সাংবাদিকদের দিতে শিখেনি। সাংবাদিকগণ হচ্ছেন জাতির জাগ্রত বিবেক, আর সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। নিখোঁজ ফটো সাংবাদিক ও ‘দৈনিক পক্ষকাল’র সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলের সন্ধান মিলেছে বেনাপোলে । ১০ মার্চ সন্ধ্যায় ‘পক্ষকাল’-এর অফিস থেকে বের হওয়ার পর থেকে তাঁর কোনও সন্ধান না পেয়ে পরদিন ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসি নয়ন। ১৩ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শফিকুল ইসলাম কাজলকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত দেওয়ার দাবি জানায় পরিবার। ১৮ মার্চ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে সাংবাদিক কাজলের সন্ধান চাওয়া হয়। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক। সাংবাদিক কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর তার সন্ধানের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েকদফা কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিক সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা। গতকাল শনিবার (২ মে) রাতে বেনাপোল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়ার পর তাঁকে যেভাবে গণমাধ্যমের সামনে আনা হয়, মনে হয়েছিল ভয়ংকর কোন অপরাধীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন। দৈনিক পক্ষকাল’র সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবৈধ পন্থায় ভারত গমন। এর চেয়ে বড় অপরাধে অপরাধীরা যখন দু হাত নেড়ে আঙ্গুলের ভি চিহ্ন দেখায় তখন মনে হয় সাংবাদিক হওয়ায় শফিকুল ইসলাম কাজলের সব চেয়ে বড় অপরাধ, অবৈধ পন্থায় ভারত গমন নয়। যদিও সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের অন্তধান থেকে ফিরে আসা সব কিছুই যথেষ্ট সন্দেহজনক। আশা রাখি একদিন সব সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ওনার অন্তর্ধানের রহস্য উন্মোচন করবেন ওনি নিজেই। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো প্রবাদের মতো এখন সাংবাদিকতা পেশা। বনের মোষ তাড়ানো ভালো কাজ, কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া যে ভালো হবে তা আশা করা বোকামির নামান্তর। করোনা মহামারীর কারণে সমাজের নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তের জন্য সরকারি রিলিফ এসেছে। এখন এই রিলিফের চাউল আমাদের কিছু জনপ্রতিনিধি বা ডিলাররা চুরি করেছে। এখন এই খবরটা যখন সাংবাদিকরা সংবাদের শিরোনাম করছে, তখন সুত্রপাত হচ্ছে শত্রুতার। রিলিফের সব গুলোতো আর আত্মসাত করেনি কিছু কিছু ত্রাণতো বিলি করেছে। সাংবাদিকেরা চাইলে যেগুলো আত্মসাৎ করেছে সেই নিউজটা না করে, যে গুলো বিলি হয়েছে সেগুলোর সংবাদটা প্রচার করতে পারতো। ত্রাণ আত্মসাতের সংবাদ প্রচার করায় তাঁর কি বেতন বাড়বে, নাকি পদোন্নতি হবে, উত্তর কোনটাই না। সাংবাদিকতায় একমাত্র পেশা যেখানে পদোন্নতির কোন সুযোগ নেই। নিরীহগোছের মানুষতো আর ত্রাণ আত্মসাৎ করতে পারে না, যারা আত্মসাৎ করে তারা ক্ষমতাধর হয়। এইবার শুরু হবে শত্রুতা। সাধারণ মানুষের ভালো এবং দেশ প্রেমিক হতে গিয়ে আপনি হবেন মামলা আর হামলার শিকার। আপনি যে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও আপনি যে অনিয়মের সংবাদ প্রচার করেছেন, তাদেরকে আপনি পাশে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ আমাদের সমাজ অনিয়মের সাথে জড়িতদের ভয় পায়। কারণ এদের শেকড় অনেক গভীরে। সাংবাদিকরা নির্যাতিত মানুষের মনের গভীরে প্রবেশ করে তার আবেগ অনুভূতি উপলব্ধি করে সংবাদকে হৃদয়গ্রাহী করে প্রকাশ করেন, কিন্তু তার নিজের জীবনের অভাব, অনটন, সুখ, দুঃখ না বলা যন্ত্রণা মনের গভীরেই চাপা পড়ে থাকে। সমাজের যত দূর্নীতি, অনিয়মের সংবাদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মনোপুত না হলে কিংবা বিরুদ্ধে গেলে অগ্নিমূর্তি ধারণ স্বাভাবিক ঘটনা। অপ্রিয় সত্য সংবাদ লেখার কারণে সমাজবিরোধী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে নির্ভীক সাংবাদিকদের উপর সশস্ত্র হামলাতো অতীতকাল থেকেই চলে আসছে। শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও নিপীড়িত নির্যাতিত অসহায় মানুষের সংবাদ সাংবাদিকেরা গণমাধ্যমে তুলে ধরেন, এতে অনেকক্ষেত্রে ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সুগম করলেও নিজের জীবনকে ফেলে দেয় ঝুঁকির মধ্যে। অনেক পেশা আছে যেগুলো নিজের জীবনের ঝুঁকির বিনিময়ে ঝুঁকি ভাতা বা আর্থিক সুবিধা পায় , কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য নেই কোন ঝুঁকি ভাতা। অথচ প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন গণমাধ্যমের কর্মীরা। সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন না থাকলেও তাদের পিছমোড়া করে হাতে হ্যান্ডকাফ পরানোর মতো আইন ও নীতিমালা আছে অনেক ৷ তাই আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আওয়াজ তুলুন, ভয়ভীতি, আতংকের উর্দ্ধে ওঠে , সাংবাদিকদের লেখার স্বাধীনতা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
সাংবাদিকরা অসহায় মানুষের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন কিন্তু নিজেদের অসহায়ত্বের কথা অপ্রকাশিত থেকে যায়।
লেখক :
অলক চৌধুরী (নয়ন), রাউজান (উত্তর)প্রতিনিধি, সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম।