বেনাপোলে করোনা ভাইরাসের লকডাউনকে পুজি করে অর্থ বাণিজ্যে মেতেছেন পোর্ট থানার এসআই জাকির হোসেন।
লকডাউন ভঙ্গের অযুহাত দেখিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে মটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকদের গতিরোধ করে বেদম মারপিট ও যানবাহন ভাংচুরসহ আটক দেখিয়ে ৩’শ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগামহীন অর্থ বাণিজ্য করছেন। যার অর্থ আদায়কারি হিসেবে সহযোগিতায় রয়েছে কনস্টেবল জাহিদ। তাদের লাগাম কেউ টেনে না ধরায় দিনদিন তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে কথা হয় বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই জাকিরের রোষানলের শিকার যশোরের ঝিকরগাছা থানার হাড়িখালী পাঁচপোতা এলাকার লিটন মেম্বরের সাথে। তিনি বলেন, কয়েকদিন পূর্বে আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরে করোনার কারণে ঘরবন্দী এলাকার অসচ্ছল মানুষের মাঝে
খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছিলাম। এমন সময় এক ফোনালাপের পর জরুরী প্রয়োজনে বেনাপোলের পুটখালী ইউনিয়নে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে শিবনাথপুর বারপোতা এলাকার রাস্তার ধারে বট তলায় মটর সাইকেল রেখে বিশ্রাম নেওয়ার সময় হঠাৎ আগন্তুক বেনাপোল পোর্ট থানার দারোগা জাকির হোসেনকে দেখতে পাই। তিনি মটর সাইকেল থেকে নেমেই আমাদের কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার কাছে থাকা বেতের লাঠি দিয়ে আমাদের তিনটি মটরসাইকেলে বাড়ি মেরে হেড লাইটের সামনেসহ বিভিন্ন স্থান ভাংচুরসহ আমাদেরকে বেত্রাঘাত করতে থাকে।
যা সহ্য করতে না পেরে আমাদের সাথে থাকা চেয়ারম্যানের ছেলে আলমগীরসহ কয়েকজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। একসময়ে আমরা সকলে মটরসাইকেল ফেলে দৌড়ে পালাতে বাধ্য হই। পরে বেনাপোলের বিশেষ পেশার মানুষের মাধ্যমে জাকির দারোগাকে টাকা দিয়ে মুক্তি পাই।
ঘটনার সত্যতা সীকার করে উক্ত ঘটনার শিকার আরেকজন মটরসাইকেল আরোহী আলম বলেন, গত কয়েকদিন পূর্বে নাভারন এলাকায় স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে এক গৃহবধু বাড়ি ছেড়ে তার নিকটাত্মীয় বেনাপোলের পুটখালী এলাকায় আশ্রয় নেয়। যা মিমাংশা করে দেওয়ার জন্য এলাকার লিটন মেম্বরসহ চেয়ারম্যানের ছেলে আলমগীর, অবসরপ্রাপ্ত বিজিবির ছেলে নয়ন ও কলাগাছীর সমাজকর্মী জাফরকে ডেকে নিয়েবিল্লালসহ আমরা বেনাপোলের পুটখালী এলাকায় যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে বিশ্রাম নেওয়ার ফাঁকে জাকির দারোগা আমাদেরকে বেদম মারপিট করে এবং ৩টি মটর সাইকেল ভাংচুর করে বেনাপোল পোর্ট থানায় নিয়ে যায়।
পরে বিশেষ মারফত বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি’র সাথে যোগাযোগ
করা হলে তিনি মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে তিনদিন পর মটর সাইকেল
ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। সে মোতাবেক তিনদিন পর ওসি সাহেবের সাথে কথা বলা হলে তিনি জাকির দারোগাকে মটর সাইকেল তিনটি ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। এসময় বিশাল ক্ষমতার অধিকারি জাকির দারোগা ওসি সাহেবের কথা না রেখে মটর সাইকেলগুলো আদালতে পাঠাবার কথা বলেন।
পরক্ষণে তিনি আমাদেরকে থানার ভিতর ডেকে নিয়ে গাড়ি প্রতি ১০ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। বলেন, আদালতে গেলে ৩০ হাজারের বেশি খরচ হয়ে যাবে। এসময় ওসি সাহেব ছেড়ে দেওয়ার
কথা বলেছেন বললে তিনি প্রতি উত্তরে বলেন, আমি ওসি’র চাকরি করিনা, সরকারি চাকরি করি। কা’কে কি করব সেটা আমার বিষয়। পরে অনেক অনুনয় বিনয় করে নগদ টাকার বিনিময়ে মুক্তি মেলে।
স্থানীয়রা জানান, করোনা ভাইরাসের লকডাউনকে পুঁজি করে জাকির দারোগা বিভিন্ন সময় মটরসাইকেল, পঁচনশীল কাঁচাপণ্য বহনকারি যানবাহন ও ইজিবাইক আটক করে নিজের ইচ্ছেমত ঘুরিয়ে ৩’শ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিচ্ছেন। টাকা দিলে সব ঠিক আছে।
নইলে আটককৃত যানবাহন আদালতে পাঠানোর হুমকি দিতে থাকে।
আবার যদি কেউ তার কাছে সুপারিশ করেন তাহলে তিনি আরো বেশি ঘুরাতে থাকেন এবং নিন্দা ভৎসনা করতে থাকেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক উৎকোচ নেওয়াসহ অনেক অভিযোগ।
এ বিষয়ে সংবাদকর্মীরা কথা বলেন বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই জাকির হোসেনের সাথে। এসময় তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত সকল
অভিযোগ অসীকার করেন।