বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ফলে মানুষ এখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে ঘরবাড়ি পরিষ্কারেও মনযোগী হয়েছি আমরা।
করোনাভাইরাস সাধারণত মানুষের লালা, কফ ও সর্দি একজন থেকে আরেকজনে হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছে এমন বস্তুর মাধ্যমেও এটি ছড়ায়। নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ এর ব্যপারে নিশ্চয়তা না পাওয়া গেলেও সার্স ও মার্স ভাইরাস এভাবে ছড়ায়।
ভাইরাস আছে এমন কোন জায়গায় হাত লাগার পর এই হাত দিয়ে নাক ও মুখ ধরলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই কারও বাড়িতে করোনা আক্রান্ত রোগী থাকলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার বিকল্প নাই।
মনে রাখবেন পরিষ্কার করা ও জীবাণুমুক্ত করার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। কোনকিছু পরিষ্কারের মানে সেটি থেকে ধুলো ময়লা ও জীবাণু দূর করা। আর জীবাণুমুক্ত করা মানে রাসায়নিকের সাহায্যে জীবাণু মেরে ফেলা। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ
করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ কোন বস্তুতে কতক্ষণ বেঁচে থাকবে তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। কিন্তু এটি যদি অন্যান্য করোনাভাইরাসের মত হয় তবে এটি কোন বস্তুর উপর কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে। আর কোন বস্তুতে এর টিকে থাকা নির্ভর করবে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বস্তুর প্রকৃতির উপর।
প্রশ্ন আসতে পারে ঘরের মধ্যে কীভাবে করোনাভাইরাস আসবে?
এটি আসলে নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে কেউ মুখ না ঢেকে হাঁচি বা কাশি দিলে তার আশেপাশে থাকা কোনকিছুতে ভাইরাস ছড়াতে পারে। আবার হাতের মাধ্যমেও এক বস্তু থেকে আরেক বস্তুতে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই সচরাচর হাত পড়ে এমন কিছুতে ভাইরাস চলে যেতে পারে।
ঘরের যেসব জিনিসে সবার হাত পড়ে এমন জিনিসগুলো হচ্ছে টিভি বা এসির রিমোট, ফ্রিজের হাতল ও দরজা, রান্নাঘরের তাক ও চুলা, পানির কল, দরজার নব ইত্যাদি। এছাড়াও মোবাইল, আইপ্যাড, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদিও রয়েছে তালিকায়।
কীভাবে পরিষ্কার করবো এগুলো?
নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও দেখা গেছে করোনাভাইরাস বাইরের পরিবেশে বেশিক্ষণ টিকে থাকে না। তাপমাত্রা, যেকোন ধরণের ডিটারজেন্ট অথবা সাবান এর কার্যকরিতা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। তাই হাতসহ ধোয়া যায় এমন প্রতিটা জিনিস ও জায়গা সাবান দিয়ে ধুয়ে ও মুছে ফেলুন।
সংক্রমিত জায়গা পরিষ্কারের উপায়
বাসার কোন জায়গা যদি করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে বলে মনে হয় তবে সেখানে যেকোন ধরণের পরিষ্কারক ব্যবহার করে ধুয়ে ও মুছে ফেলুন। হ্যান্ড গ্লাভস পরে নিলে ভালো। হ্যান্ড গ্লাভস পরুন আর না পরুন, ধোয়াধুয়ি আর মোছামুছির পর হাত ভালো করে বিশ সেকেন্ড ধরে ধুতে হবে অথবা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নেবেন। চোখ, মুখ, নাক ও গালে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
আর আপনার কাছে যদি পেপার টাওয়েল, কাপড় ও ডিসপোজেবল ওয়াইপস থাকে তাহলে ধোয়াধুয়ি না করে এগুলো দিয়েও মুছে ফেলতে পারেন। তবে কাপড় ব্যবহারের ক্ষেত্রে একই কাপড় না ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে না। এটিকে স্যাভলন বা অন্য কোন অ্যান্টি সেপটিক দিয়ে কেঁচে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। এইজন্য দরজার নব, ফ্রিজের হাতল বা রান্নাঘরের প্লাটফর্ম মোছার জন্য আলাদা আলাদা একের অধিক কাপড় রাখুন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ
বাসনপত্র
গরম পানি ও বাসন মাজার সাবান বা লিকুইডের সাহায্যে ধুয়ে ফেলুন। বাড়িতে করোনা আক্রান্ত রোগী থাকলে অবশ্যই হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করুন।
কাপড়চোপড়
আক্রান্ত রোগীর কাপড় আলাদা করে ধুতে হবে। এবং অবশ্যই গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। তারপর ভালোভাবে রোদে শুকাতে হবে। আক্রান্তের ভেজা কাপড় ধোয়ার পর ঝাড়বেন না। হ্যান্ড গ্লাভস পরে নিলেও দ্রুতই হাত ধুয়ে ফেলুন।
প্রতিরোধই ভালো
মনে রাখবেন, যেকোন রোগ থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসার আগে প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো। তাই আপনার বাড়িকে সুরক্ষিত রাখতে সবসময় হাঁচি ও কাশি দেওয়ার আগে নাক ও মুখ ঢেকে নিন। ব্যবহৃত টিস্যুটি সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন হাঁচি ও কাশি দেওয়া হাত ধোয়ার আগে যেন ভুলেও কোথাও না লাগে। খাওয়ার আগে অবশ্যই বিশ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন।
বাড়িতে আক্রান্ত কেউ থাকলে কী করবেন?
বাড়িতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী থাকলে তাকে অবশ্যই আলাদা ঘরে রাখুন। যে ঘরের সঙ্গে আলাদা বাথরুম ও বারান্দা আছে সেটিই সবচেয়ে উপযুক্ত। এই ঘরে সুস্থ কারও পারত পক্ষে না যাওয়াই ভালো। রোগীর খাবার দেওয়াসহ অন্যান্য যত্ন যিনি করবেন তাকে সবধরণের সুরক্ষা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। তিনি যতটা সম্ভব জীবাণুমুক্ত হয়ে নেবেন। এবং রোগীর জিনিসপত্র ধরে বাসার অন্যান্য জিনিসে হাত দেবেন না। সুস্থ থাকতে সাবধানতার বিকল্প নাই। তাই নিজের সঙ্গে সঙ্গে বাসাও পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখুন।