পাবনার চাটমোহরে করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের মারধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম পরশসহ ১০ জন আহত হয়েছে।
২০ এপ্রিল সোমবার রাতে উপজেলা হরিপুর ইউনিয়নের চড়ইকোল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহতরা হলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম পরশ, তার ভাই আবুল কালাম আজাদ, চড়ইকোল গ্রামের ইছাহক আলীর ছেলে সাগর হোসেন, ছাত্তার মোল্লার ছেলে ঝন্টু মোল্লা, মৃত ওয়াহাব সর্দারের ছেলে বকুল হোসেন, ধূলাউড়ি গ্রামের আয়েজউদ্দিনের ছেলে ইবাদ আলী ও হরিপুর গ্রামের আজিজ মিনুর ছেলে সাইফুল ইসলাম।
থানা পুলিশ আটক করেছেন- গ্রাম পুলিশ মিন্টু রহমান, সানোয়ার হোসেন, মোবারক হোসেন ও ছাত্রলীগ কর্মী কদর হোসেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সোববার বিকেলে ইউপি সদস্য ইউনুস আলী চড়ইকোল এলাকায় বসে কয়েকজনকে নিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের জন্য মিটিং করছিলেন। এ সময় আবুল কালাম আজাদ এমন পরিস্থিতিতে লোকসমাগম করে মিটিং করার কারণ জানতে চাইলে দু’জনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এরই এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। ইউপি সদস্যের বড় ভাই কফিল উদ্দিন লোকজন নিয়ে আবুল কালাম আজাদকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে মারধর করেন বলে অভিযোগ। বড় ভাইকে মারধর করা দেখে তৌহিদুল ইসলাম পরশ বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।
পরে আহতদের উদ্ধার করে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে হরিপুর বাজারে ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনের দুই ভাতিজা মোবারক, কদর ও দুই গ্রাম পুলিশের নেতৃত্বে আবারও তাদের লাঠিশোঠা দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং মোবারক হোসেন, কদর আলী এবং দুই গ্রাম পুলিশকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে থানায় এজাহার দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম পরশ অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন বিএনপি নেতা-কর্মীদের দিয়ে ত্রাণ দেয়া থেকে শুরু করে সব রকমের কাজ করে থাকেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন আওয়ামীলীগের লোকজন। এছাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কফিল উদ্দিনকে করোনা ইউনিয়ন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন। তার আপন ছোট ভাই ইউপি সদস্য ইউনুস আলী লোকজন নিয়ে মিটিং করছিলেন। আমার বড় ভাই (আবুল কালাম আজাদ) ওই ইউপি সদস্যকে লোক সমাগম করা নিয়ে কথা বলতে গেলে তাকে মারধর করা হয়। পরে বাড়িতে এসে তারা মারধর করে। এতে দুই জনের মাথা ফেটে গেছে এবং দুই জনের হাত ভেঙ্গে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এগুলো সব হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনের নির্দেশে। আমি যখন আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেই, তখন তার দুই ভাতিজা এবং গ্রাম পুলিশসহ অনেক লোকজন এসে আমাকেসহ অন্য আহতদের মারধর করে। থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তবে মামলা এখনও রেকর্ড করেনি পুলিশ।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন বলেন, এর সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে মারধরের ঘটনাটা পরে জেনেছি। ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জের ধরে হয়েছে। এজন্য আমার দুই ভাতিজা এবং গ্রাম পুলিশদের বকাবকি করেছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তৌহিদুল ইসলাম পরশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা। তাকে কেন গ্রামে এসে রাজনীতি করতে হবে? তবে বিষয়টি আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।
ঘটনার ব্যাপারে থানার ওসি সেখ নাসীর উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুই গ্রাম পুলিশ ও চেয়ারম্যানের দুই ভাতিজাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এজাহার পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে।