করোনা প্রতিরোধে নিবেদিতপ্রাণ নাটোরের লালপুরের চিকিৎসকরা নিরলসভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এতে সেবাগ্রহীতা রোগীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
নাটোর জেলার সর্ব দক্ষিণে পদ্মা নদীর অববাহিকায় চরম ভাবাপন্ন বাংলাদেশের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতম অঞ্চল লালপুর। গড় তাপমাত্রা গ্রীস্মকালে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস, শীতকালে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গড় বৃষ্টিপাত- ১৯২ সে.মি.। ৩২৭.৯২ বর্গ কিলো মিটার আয়তনের এই উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৫ জন।
পুঠিয়ার মহারাণী শরৎ সুন্দরী ১৮৬৭ সালে লালপুরে প্রথম একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করে দেন। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তা চালু ছিল। ১৯৭৩ সালে সেখানে ৩১ শয্যার বর্তমান লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মিত হয়। যা ২০০৬ সালের ২০ অক্টোবর ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। হাসপাতালে সর্বমোট ১৬৪ জনের মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে। উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় মোট ১১ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক- ১০টি, কমিউনিটি ক্লিনিক- ৩২ টি, মাতৃসদন কেন্দ্র- ১টি রয়েছে। বেশ কয়েকটি ক্লিনিক ও চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নেন।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো.আমিনুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয়টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। করোনা সন্দেহে এ পর্যন্ত (২০ এপ্রিল ২০২০) ১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় সবগুলো নেগেটিভ, যা আমাদের জন্য সুখবর বলা যেতে পারে। মাস দেড়েক আগে আলাদা ফ্লু কর্ণার চালু করা হয়েছে। কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) নিশ্চিত করা হয়েছে। এখনো পর্যাপ্ত পিপিই মজুদ রয়েছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট না থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মী ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির পদগুলোতে কর্মী সংকট রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, হাসপাতালের শৃংখলা ও পরিবেশ চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিনিয়ত জীবনুনাশক স্প্রের মাধ্যমে দুর্গন্ধ ও জীবানু মুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। সেই সাথে অপারেশনসহ স্বাভাবিক চিকিৎসা অব্যহত রয়েছে। পুরো কমপ্লেক্স আলোকিত করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী কয়েকজন জানান, চিকিৎসকদের আন্তরিক সেবা প্রশংসার দাবি রাখে। সব সময় এ সেবা নিশ্চিত হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। তারা আরো বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এ ধরণের পরিবেশ ও পরিচর্যা নিয়মিত হলে রোগীরা স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে।
হাসপাতালের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক সাদিয়া আফরিন বিশ্বাস লিজা জানান, নবীণ চিকিৎসক হিসেবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আতংকিত না হয়ে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক) ডা.তৈমুর রহমান টেলু জানান, নিজেদের সুরক্ষার মাধ্যমে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। পৃথিবীব্যাপী এই দুর্যোগময় মুহুর্তে একজন চিকিৎসক হিসেবে সেবা নিশ্চিত করতে তারা বদ্ধপরিকর।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সব ধরণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে তারা নিরলস কাজ করে চলেছেন। সার্বক্ষণিক সেবার মানসিকতায় চিকিৎসকরা নিয়মত্রান্ত্রিক শৃংখলা অনুযায়ী সেবা অব্যহত রেখেছেন।