মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মুজিবনগর –

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর এক স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান। ১৯৭১ সালে এইদিনে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহন করে সেই স্থানটিকে মুজিবনগর নামকরন করে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ঘোষনা করেছিলেন। মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধের এক জীবন্ত ইতিহাস। যুদ্ধকালীন নয়মাস মুজিবনগর ছিল যুদ্ধের অন্যতম প্রধান প্রতীকী কেন্দ্র । অথচ স্বাধীনতা অর্জনের পর মুজিবনগর অনাদর ও অবহেলায় পতিত হয়। কালের পরিক্রমায় তা কখনো উজ্জল আবার কখনো ম্রিয়মান হয়ে পড়ে আছে । স্বাধীনতা প্রাপ্তির এতবছর পরেও মুজিবনগর তার সঠিক ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বহন করে চলতে পারছেনা। এখানে যা করার কথা – যা হওয়ার কথা তা এখনো করা হয়না।

আমার বাড়ী থেকে মুজিবনগর যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। এই দীর্ঘজীবনে সেখানে দুইবার যাবার সুযোগ পেয়েছি। স্বাধীনতার ১৬ বছর পর প্রথম যাই ১৯৮৭ সালে ১৭ এপ্রিল। সামরিক সরকার জেনারেল এরশাদ যিনি প্রথম শপথ স্থলটি নির্মান করেছিলেন। উদ্বোধনী দিনে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল পাবনা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাথে সেই অনুষ্ঠানে শরিক হওয়ার। সেটাই আমার জীবনে প্রথম মুজিবনগর দর্শন। সেই সফরে গিয়ে খুবই ভালো লেগেছিল। বৈদ্যনাথতলার প্রাচীন আম্রকানন দেখেছিলাম। আশেপাশের পাড়াগুলিতে গিয়ে স্থানীয় জনগনের সাথে কথাবার্তা বলেছিলাম। বিডিআর ক্যাম্পের জোয়ানদের সহযোগিতায় সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গিয়েছিলাম। বলা যায় ভারতের মাটিতে পা রেখে ভিন্ন অনুভূতি গ্রহন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। ওপারে ভারতের হৃদয়পুর। এপাড় থেকে ওপাড়ের গাড়ী চলাচল দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের নেতৃবৃন্দ যে সড়ক দিয়ে মুজিবনগর প্রবেশ করেছিলেন সে সড়কটি দর্শন করেছিলাম। সেগুলি ছিল এক দারুণ অনুভূতি।

এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদকে বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণ করলেন। সাথে তাঁর সফরসঙ্গী মন্ত্রী, এমপি সহ উচ্চ পর্যায়ের সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাগন এসে পৌঁছালেন। আরেকটি বিষয় অপ্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করি, মুজিবনগরের ঐ অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, আমাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ শুভাকাঙ্ক্ষী যশোর সেনানিবাসের বিগ্রেড কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ আবেদ মিয়া। সেদিন উনার সাথেও দেখা এবং কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। যথারীতি মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক শপথ বেদীটি জেনারেল এরশাদ উদ্বোধন করলেন। সুধী সমাবেশে বক্তব্য দিলেন। সেদিন প্রথম মুজিবনগর দেখা এবং ঐতিহাসিক শপথ স্থানটি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলেও হৃদয়ে ক্ষতটুকুও কম ছিলোনা। মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ এমন স্থানটিতে স্বাধীনতার ১৬ বছর পরে শপথ বেদী নির্মান করায় মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন জন্ম নেয়।

দ্বিতীয়বার মুজিবনগর যাবার সুযোগ হলো ২০১৬ সালের ৫ মার্চ দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফরে। সেখানে যাবার কয়েকদিন আগে প্রধান শিক্ষক সাহেব ফোন করে জানালেন আগামী ৫ মার্চ মুজিবনগর শিক্ষা সফরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাতে আমার সম্মতি এবং উৎসাহ দেখে প্রস্তাব করলেন আমি যাবো কিনা। আমি এক কথায় রাজী হলাম। আমি যাবার আগ্রহ প্রকাশ করায় প্রধান শিক্ষক সাহেব খুব খুশি হলেন। বিগত ২৮ বছরের মধ্যে স্কুলের ছাত্র-শিক্ষিকদের সাথে আমার প্রথম শিক্ষা সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। এখনতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির শিক্ষা সফর মানে বিনোদন পার্ক, ইকো পার্ক আর পিকনিক করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কাছে দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী বা রংপুরের ভিন্নজগতে যাওয়ার যত আগ্রহ তত আগ্রহ মুজিবনগর, পাহাড়পুর বা মহাস্থানগড়ে যাওয়াতে নয়। আর যুগের পরিবর্তনে এখনকার শিক্ষা সফর মানে বেড়াতে হবে। যত টাকা খরচ হোক অসুবিধা মনে করে না। সচ্ছল বাবা-মায়ের স্কুলে পড়া ছেলেরাও আবদার করে সিলেট, কক্সবাজার, কুয়াকাটা যাবার।

যাই হোক আমার যাবার আগ্রহটা বেশি হওয়ার কারন হলো ২৯ বছর পরে আবার মুজিবনগর দর্শন করার সুযোগ। যথারীতি ৫ মার্চ সকাল আটটায় পাবনা শহরের রাধানগরের বাসা থেকে বের হলাম। দেবোত্তর স্কুলে পৌঁছানোর পরে আমাদের মুজিবনগর যাত্রা শুরু হলো। দু’টি বড় বাসে স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির প্রায় শতাধিক সদস্যের এই বহর শুরু থেকেই যেন আনন্দময় যাত্রায় রুপ নিল। বেলা ১১টার দিকে আমরা মুজিবনগর পৌঁছে গেলাম। গাড়ী থেকে নেমেই শুরু হলো বনভোজনের স্থান নির্বাচন। এরপর সেখানে সবাই ফ্রেস হয়ে নাস্তা করা হলো। তারপর সবাইকে মোটামুটি বিফ্রিং করে মুজিবনগর কমপ্লেক্স এলাকা ঘুরে বেড়ানো শুরু করলাম। মুজিবনগর নেমেই আমার অবাক হবার পালা শুরু হলো। প্রায় ২৯ বছর আগের দেখা সেই মুজিবনগর আমি চিনতে পারছিনা। মনে হচ্ছে এটা যেন ঢাকার রুপনগর !! অপরুপ নির্মানশৈলিতে অপরুপ এক নগর বানানো হয়েছে। মনটা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো। সাথের বেশীর ভাগ জনেরই চেনা। সফরসঙ্গীদের অনেকেই অনেক বার এসেছেন। আর আমার কাছে মনে হচ্ছে সব যেন অচেনা ! প্রথমবার এসে যে মুজিবনগরকে দেখেছিলাম এবার এসে তা মিলাতে পারছিনা। স্কুলের ছাত্রদের মত আমার কাছেও মনে হচ্ছে সত্যিই এটা যেন আমার কাছে যথার্থ শিক্ষা সফর !

আমরা চারজনের একেকটা টিম বানিয়ে ভ্যানভাড়া করলাম। দুইঘন্টা সময় ধরে আমাদের কমপ্লেক্স এরিয়া সহ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট দেখাবে। একসাথে কয়েক ভ্যান বহর করে আমরা বের হলাম। তীব্র রোদ আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়লাম । ভ্যান চালক বললেন এটা নাকি বেড়ানোর জন্য অসময়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী হলো বেড়ানোর উপযুক্ত সময়। অথচ এই অসময়ে প্রায় ৫০ /৬০ টি গাড়ী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে এসেছে। বেশীর ভাগ আগতরা হলো স্কুল মাদ্রাসার কমলমতি ছেলে-মেয়ে, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক এবং সাধারন দর্শনার্থী। কেউ ভ্যানে কেউ বা পায়ে হেটে বিশাল এলাকা জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমাদের ভ্যান চালক গাইড হিসেবে নানা বিষয়ে ধারনা দিচ্ছেন। অপরুপ স্থাপত্য দেখছি আর চালকের বর্ননা শুনছি। প্রায় দুইশত বিঘা জমি জুড়ে স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স দেখে মনটার মধ্যে নানা প্রশ্ন উদয় হতে থাকলো। শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে এত অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মানের কি প্রয়োজন ছিলো ? এতে কি লাভ হয়েছে? এখানেতো একটি স্থান হলো স্মৃতিবিজরিত। যেখানে প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহন করেছিলেন। সেই শপথ স্থানটি তৈরী করতে যেখানে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেখানে মাত্র কয়েক বছরে শত শত কোটি টাকা খরচ করে এই অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা কেন করা হলো?

আমরা যারা ইতিহাসে জেনেছি মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার এই আমবাগানে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নিয়ে এই স্থানটিকে মুজিবনগর নাম দিয়ে প্রথম রাজধানী ঘোষণা করেছিলেন। সেই মুজিবনগরে কোথায় নগর, কোথায় প্রথম রাজধানীর রাজভবন? স্বাধীনতার ১৬ বছর পর যেখানে শপথ স্থানটি পাকাকরন হয়। ২৭ বছর পর প্রথম রাজধানীকে উপজেলা বানানো হয় সেখানে শতকোটি টাকা খরচ করে মানচিত্র, হোটেল, মোটেল সহ এত অপ্রয়োজনীয় দালান-কোঠা কেন করা হলো? মনের অজান্তে প্রশ্ন উঠলো এগুলি করতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে? কারা কারা লাভবান হয়েছেন? কাদের স্বার্থে এই সব অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো করা হয়েছে? আমার বিবেকের কাছে এটা আমার প্রশ্ন -!!

আমাদের দেশে প্রচলিত রীতি হলো সরকারী কাজ কখনো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়না। কোনকালেই বরাদ্ধকৃত টাকার কাজ ষোল আনা হয়না। কোথাও বরাদ্ধের অর্ধেক কোথাও সিকি পরিমান হয়। তাহলে এখানে কি তাই হয়েছে ? আমার সফরসঙ্গীদের কাছে প্রশ্ন করলাম কেউ বিষয়টি সেভাবে ভাবেনি। আমি তাদের কাছে বললাম এখানে যা হবার কথা ছিল, সেটা এখনো হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় এই দিবসটি এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়না। প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল দায়সারার মত দিবসটি পালিত হয়। বিগত সময়ে কোন বছর পালিত হয়েছে আবার বহু বছর এই দিবসটিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর অতিক্রান্ত হলো কোন সরকার মুজিবনগরকে জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি দেয় নাই। এখানে কখনো সরকারী বা কখনো বেসরকারী বা কখনো দলীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয়। কখনো আড়ম্বর কখনো অনাড়ম্বর করে দিবসটি পালিত হয়। যদি ১৭ এপ্রিল জাতীয় দিবস করা হতো তাহলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সকল মন্ত্রী এই মুজিবনগরে এসে দিবসটি পালন করতেন? বিদেশী অতিথিবৃন্দের সফর কর্মসূচীর মধ্যে সাভার স্মৃতিসৌধের সাথে মুজিবনগরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা আবশ্যক হতো। বছরে একদিন হলেও বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী এই মুজিবনগরে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক হতে পারতো।

সফরসঙ্গীদের একটি কল্পিত গল্প বললাম। আমাদের দেশের এক ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়ে একটি বাংলো পরিদর্শনে গেছেন। যাবার আগে সেখানে কি কি আছে তার নথিপত্র দেখে পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন সেখানে একটি পুকুর থাকার কথা অথচ বাস্তবে সেখানে পুকুর নাই। উনার কৌতূহল হলে আগের অফিসারকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন, কি ব্যাপার অমুক ডাকবাংলাতে একটা পুকুর থাকার কথা সেটা দেখলাম নাতো? বিষয়টি আগের অফিসার বুঝতে পেরে বলেন, পুকুরটি কাগজে কলমে কাটা হয়েছিল। আপনি বরং আরেকটা ইষ্টিমেট করে ভরাট দেখান। তাহলে একটা বড় অংকের টাকা আপনিও ইনকাম করতে পারবেন। উপরের গল্পটি কতটুকু সত্য জানিনা তবে এমন কর্মকর্তা আমাদের দেশে অনেক।

মুজিবনগর ভ্রমনকারীদের জন্য আরেকটি আকর্ষনীয় স্থান হলো সীমান্তের জিরো পয়েন্ট। ওপারে নদীয়া জেলার হৃদয়পুর। একসময়ে ভারতীয় অঞ্চলে গাড়ী চলাচল দেখা যেতো এখন কিছুই দেখা যায় না। নিরাপত্তার অজুহাতে অনেক ভিতরে গেট করে বন্ধ করা হয়েছে। অথচ সেখানে একটা টাওয়ার অথবা ঢাকা শিশুপার্কের মত চড়কি দোলনা স্থাপন করলে সকল পর্যটক মজা পেতো। সীমান্ত থেকে ফিরে আসার পথে দেখলাম এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মুজিবনগর কমপ্লেক্স সংলগ্ন পশ্চিম দিকের সড়কের ঢালুতে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বস্তি বানিয়ে বসবাস করছেন। তাঁদের এখানে এমন করে বসবাস করা দেখে মুহুর্তে আমার স্বপ্নের মুজিবনগর ফ্যাকাসে হয়ে গেল। রাজধানী ঢাকার গুলশান বনানীর রাস্তার ফকির মিসকিনদের কথা মনে পড়লো। ছিঃ ছিঃ ছিঃ – বিবেককে ধিক্কার জানালাম । মুক্তিযুদ্ধের তীর্থস্থান দেখতে এসে একি দেখলাম ? যাদের আত্মত্যাগে এই স্বাধীনতা। যাদের অবদানে এই স্বাধীনতা। তাঁদের জীবন আজও অন্ধকারে!! এখনো তাঁরা বস্তিতে বাস করছেন। একথা লিখতে খুব কষ্ট লাগছে, হৃদয়টা ফেটে যাচ্ছে। বিবেককে জিজ্ঞাসা করি ঐ যে স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সে কোটি কোটি টাকা খরচ করে মোটেল- হোটেল বানানো হয়েছে সেটা কাদের জন্য? কারা সেখানে রাত কাটায়? রাতে কি হয় সেখানে ? উফ- উত্তরটা কি কেউ দিবেন ?

যাইহোক আমার এই লেখা কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির দৃষ্টিতে যদি পড়ে তাহলে দয়া করে ঐ হতভাগা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলিকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করবেন ? আর কোন দয়াবান কোন বিবেকবান নীতি নির্ধারক যদি এই লেখা পড়েন বা তাঁর বিবেকে লাগে তাহলে শত শত কোটি টাকার সাথে আর দুই/এক কোটি টাকা খরচ করে একটি মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয়স্থল বা বিশ্রামাগার যেন বানিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান থাকবে। থাকবে দেশের যেকোন প্রান্তের মুক্তিযোদ্ধাগন মুজিবনগরে এসে ১/২ রাত বিনাখরচে থাকতে পারার ব্যবস্থা। অথবা নির্মিত মোটেলগুলিতে নামমাত্র টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধারা মুজিবনগর বেড়াতে এসে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা।

আরেকটি প্রস্তাবনা হলো মুজিবনগর কমপ্লেক্স পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট করা দরকার। সেখানে দরকার সুশিক্ষিত গাইড। সেখানে পরিছন্নকর্মী বৃদ্ধি করা দরকার। শপথ বেদীর পরিবেশ সুরক্ষিত করা দরকার। মানচিত্র স্থলের পাশে নিম্নমানের খাবার দোকানগুলি অপসারন করা দরকার। সেখানে পরিকল্পিতভাবে খাবার দোকানগুলির মাননিয়ন্ত্রন করা দরকার। সেখানে থিয়েটার হল স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র এবং ৭১ এর সচিত্র ছবিগুলি প্রদর্শন করা দরকার। পিকনিক ষ্পটকে আরো আধুনিকায়ন করা, পর্যাপ্ত টয়লেট এবং বাথরুম প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সেখানে আধুনিক এবং উন্নতমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ভাবা দরকার দর্শনার্থীদের আরো কত আনন্দ বা বিনোদনের ব্যবস্থা করা যায়। এই বিশাল কমপ্লেক্স এলাকায় চারিদিকে ঘুরে দেখার জন্য ট্রয় ট্রেন কিংবা ঝুলন্ত ক্যাবল কার স্থাপন করা যায় কিনা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের ভাবা দরকার ভারতীয় দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করে মুজিবনগর কমপ্লেক্স পরিদর্শন করার সুযোগ দেওয়া যায় কিনা। তাঁদের সেখানে একদিনের ট্রানজিট ভিসা প্রদান করে মুজিবনগর ভ্রমনের সুযোগ দিলে প্রচুর ভারতীয় পর্যটক আসতেন এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হতো।

আরেকটি বিষয়ে সর্বাগ্রে দৃষ্টি দেওয়া দরকার তাহলো সেখানে মাইক ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করা প্রয়োজন। পিকনিকষ্পটে কয়েকশত গজের মধ্যে ২০ /৩০ টি মাইকে ত্রিশ রকম গান বাজলে তা কখনোই শ্রুতিমধুর হতে পারেনা বরং সেটা চরম বিরক্তি সৃষ্টি করে। কর্তৃপক্ষের উচিৎ সেখানে বহিরাগতদের মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা। সেখানে কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের গান এবং দেশাত্ববোধক গান বাজানোর ব্যবস্থা করতে পারেন । পরিশেষে একজন নাগরিক হিসেবে আমার সুপারিশ অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে মুজিবনগরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা হোক । অবিলম্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবজ্জল এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ঘোষনা করে প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করার আহ্বান জানিয়ে আমার লেখা শেষ করছি। মুজিবনগর অমর হোক। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হোক।
( শেষ)

লেখক পরিচিতি –


আমিরুল ইসলাম রাঙা
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সদস্য, আটঘরিয়া প্রেসক্লাব।