করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সৃষ্ট অচলাবস্থায় আয় রোজাগার কমেছে দেশের মানুষের। অসহায় নিম্নবিত্তের পাশে সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন অনেকে। কিন্তু সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থকষ্টে থাকলেও পারিপার্শ্বিক লোকলজ্জার ভয়ে সহযোগিতা চাইতে পারে না। ত্রাণের লাইনেই দাঁড়াতে ও পারেনা ।এমন দূর্দশাগ্রস্ত অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি দিলীপ কুমার দাস । প্রচারবিমূখ মানুষটি নিরবেই সারা বছরই আর্তমানবতার সেবাই সাধ্যমত সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন । চাকরি জীবনে যে থানায় কর্মরত ছিলেন সেখানেই অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন । গরীব আর অসহায়ের সহায় বলেই তিনি পরিচিত ।পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যে সাধারণ ধারণা, সেই জায়গায় দিলীপ কুমার দাস একদমই ব্যতিক্রমী চরিত্রের ব্যক্তিত্ব। তিনি বরাবরই অসহায় মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন সারাক্ষণ, সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি রাতের আঁধারে অসহায় পরিবারের মাঝে ব্যক্তিগতভাবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। অসহায় সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, মানুষ হতে হলে কী ধরনের মানবিকতাবোধ থাকতে হয়, দিলীপ কুমার দাস বুঝিয়ে দিয়েছেন বড়াইগ্রাম বাসীকে। এর আগেও তিনি নানা সেবামূলক কর্মকান্ডে এগিয়ে এসেছেন তেমতি চক বড়াইগ্রামে আট নম্বর ওয়ার্ডের মোঃ আমজাদ হোসেন মেয়ে মোছঃ আয়েশা খাতুন ভাগ্নি তামান্না কে নিয়ে একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন প্রতিবন্ধী পরিবারটি, তাদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
চলমান করোনা সংকটে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ না করে গোপনে তাদের বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তার সমাদৃত এ উদ্যোগ মানুষের হৃদয়ে স্থান পেয়েছে।
জানা গেছে, বড়াইগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসহায় অন্ততপক্ষে ১০ ব্যক্তি তাদের স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে না পেরে নিরূপায় হয়ে বাসায় ছিল ।প্রতিবেশীদের মুখে বা মোবাইলফোনে খবর পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই দশ ব্যক্তির পরিবারের কাছে ১০ দিনের জন্য খাবার পৌঁছে দেন। এতো অল্প সময়ের মধ্যে খাবার পেয়ে পরিবারগুলো রীতিমত অবাক ও খুশি হয়।ফুলমতি বড়াইগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী।২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।দীর্ঘদিন ধরে সে মেরিনজাইটিস রোগে ভুগছেন।ফুলমতির বাড়িতে ছুটে গিয়ে সহযোগিতার হাতটি বাড়িয়ে দেন বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ কুমার দাস ।নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক এক কৃষক পরিবার জানান, করোনার কারণে মজুদ খাবার শেষ হয়ে যায় । হাতে টাকা ছিলনা সাত সদস্যের পরিবারের মুখে কিভাবে খাবার তুলে দিবো তা নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছিলাম ।প্রতিবেশী এক গ্রাম পুলিশের মুখে ওসি স্যার শুনে রাতের আধাঁরে খাবার সামগ্রী দিয়ে গেছেন । উনি খাদ্য সামগ্রী না দিয়ে গেলে বৃদ্ধ বাবা -মা আর ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে উপোস থাকতে হতো ।করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে হাতে হ্যান্ডমাইক নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন বড়াইগ্রাম থানার এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত । হ্যান্ডমাইকে বিরামহীন ভাবে বলে চলেছেন করোনা নিয়ে সাবধানতা ও সতর্ক থাকার কথা । সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহবান জানাচ্ছে । নিজে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে হাট বাজার বন্ধ করছেন । হোমকোয়ান্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের বাসায় বাসায় গিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন । সাধ্যমত সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন ।
নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস বলেন, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে নাটোরের সুযোগ্য পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় ও অনুপ্রেরণায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি অসহায় অনেক পরিবারকেই এমন মানবিক সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছি। খেটে খাওয়া পরিবারগুলো এ সময়টাতে খুব কষ্টে আছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে তাদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি মনোযন্ত্রণার আপন তাগিদে । প্রচার বা জাহির করার জন্য নয় । জাতির এ সংকটে দেশপ্রেমিক সকল মানুষকে করোনার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সামাজিক দায়বদ্ধতা ।