সেই সব দিন


কার্নিশ উর্বশী

মনে পড়ে সেইসব দিন,
গোধূলি বেলায় সরিষার ক্ষেত হলদে রঙিন
ভরদুপুরে পুকুর পাড়ে পুতুলের খেলা
মাটির পাত্রে রান্না করে কাটানো সারা বেলা।
সন্ধেবেলা কানামাছি-খেলে বন্ধুরা সদলবলে,
মায়ের মুখের বকুনি খেয়ে পড়তে বসার ছলে
সারাদিনের হিসেব কষে মায়ের গলা ধরে,
নিরাপদ ঘুমে রাত্রি শেষে জেগে উঠে ভোরে
ঘাসফুলের পাঁপড়ি গোনা, গোলাপ ফুটেছে কতো
গুনে গুনে ভুল করে গোনা অবুঝ মনে শত।

গাছের শাখায় লাল পেয়ারা পাকা ডালিম ফল
ভোর বাতাসে বুকটা ভরে খেয়েছি নির্মল।
স্কুল হতে ফেরার পরে খেলার সাথীরা কই,
ভাবলে আজকে মনে হয়-যেনো আগের আমি নই।

ডোবা নালায় কতরকমের ডানকান আর পুঁটি,
ওড়নায় ধরে ঘরে ফিরে আনন্দে কুটি কুটি!
বর্ষাকালের ব্যাঙের ঘ্যাঙর রাতের যেনো বাঁশি,
গহিন রাতে গাড়ুয়ানের মধুর বারোমাসি।
টিনের চালে টাপুর টুপুর বৃষ্টি বাদন শুনে,
পৃথিবী যেনো স্বর্গ হয়ে ধরা দিত কচি মনে।

বাহির বাড়িতে অতিথি শালা আগন্তুকের ঘর
কোথায় বাড়ি কে এসেছে ছিলনা আপন পর,
পরম আদরে খাবার বিছানা কতোনা আদর করা
মানুষ সেবায় মানুষ হয়েছে খুশিতে আত্মহারা।

মসজিদে হতো আযানের ধ্বনি, হিন্দুপাড়ায় শাঁখ,
সবার চোখে সবার ধর্ম দেখেছি পুত-পাক।
মানব ধর্মে দীক্ষিত ছিলো ছিলো-নাক হানাহানি,
প্রাণের সাথে প্রাণ মিলেমিশে হয়েছে স্বর্গখানি।

হরেক রকম পাখিরা গেছে সন্ধা বেলায় উড়ে,
গহিন রাতে বাদুড়ের ঝাঁক খেজুর গাছে পড়ে
রস খেয়ে খেয়ে চলে গেছে সূর্য উঠার আগে,
সারাদিনমান ঝুলে-ঘুমাতো ঘন বাঁশের বাগে।

গরু মহিষের ছইয়ের গাড়ি সাথে মুড়কিমুড়ি
তারি ভেতরে অশ্রুসজল গিয়েছে গাঁয়ের নারী,
এ গাঁও হতে ও গাঁও যেনো শতজমনের পথ,
শাশুড়ির মুখে বকুনি খেয়ে কিশোরী বধূর রাত
চলে গেছে চোখের জলে বলতে পারেনি তা
সেদিন ছিলো পুরুষের-যুগ নারী ছিলো শুধু মা।

ওপাড়া হতে নিমন্ত্রণ এলে এপারের যেতো সব
গরু মহিশের মেজবানীতে কতো যে কলরব!
মোটা ভাত আর মোটা কাপড় পুকুর ভরা মাছ
সারাটি দেশ ভরে ছিলো হাজার বছরের গাছ।

সন্ধে হলেই শিয়ালের ডাক, ডেকেছে বনবিড়াল,
ওরাই ছিলো রাতের বেলায় কৃষকের জঞ্জাল!
ঘরের মুরগী ছাগল বাছুর দল বেধে নিতো ধরে
কখনো কখনো ঘরদোর কেটে সব নিয়ে যেত চোরে।

গাছে গাছে হরেক পাখি ময়না শালিক টিয়ে,
হরেক রকম ঘাসফড়িং মধু মৌচাক দিয়ে
ভরে ছিলো সেদিনের গ্রাম, সেদিনের জনপদ,
আজকে যেনো বিরানভূমী, যাত্রী বিহীন রথ!
সেইসব কথা মনে হলে চোখের জলে ভাসি,
কুজনেরা আজ স্বজনের দেশে, জননী হয়েছে মাসী।