নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ক্ষেতেই পাকা গম পুড়িয়ে ফেলছেন কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর : ফলন ভালো না হওয়ায় নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পাকা গম ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলছেন কৃষকরা। উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের সাইলকোনা এলাকার বেশ কিছু কৃষক তাদের গম
ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলেছেন।কৃষকদের দাবী, এবার গমের ভাল ফলন হয়নি। দানা সরু হওয়ায় বিঘা প্রতি উৎপাদিত গম মাড়াইয়ের পর বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরি উঠছেনা। তাই তারা গম পুড়িয়ে ফেলছেন। তবে স্থানীয় কৃষিবিভাগের দাবি, এবছর গমের ফলন ভালো হয়েছে। মওসুমের শেষ দিকে যারা চাষ করেছেন তাদের ফলন হতে পারে।এলাকার কৃষকরা জানায়, মাঠজুড়ে গম আবাদ দেখে তাদের চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু পাকার পর গমে দানা না হওয়ায় দিশেহারা হয়েছেন তারা। বিঘা প্রতি উৎপাদিত গম মাড়াইয়ের পর বিক্রি
করে শ্রমিকের মজুরির মূল্যই উঠছেনা। ফলে পাকা গম না কেটে পুড়িয়ে ফেলতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।
সাইলকোনা ছাড়াও উপজেলার জিগরী, বিলগোপালহাটি, যোগিপাড়া, মহজমপুর, শ্রীরামপুর, ডাকরমারিয়া, তমালতলা, জামনগর, ফাগুয়াড়দিয়াড়, মাধোববাড়িয়া, কালিকাপুর, রহিমানপুর ও দেবনগর
গ্রামসহ বেশ কিছু গ্রামে এই সমস্যা হয়েছে বলে জানায় কৃষকরা। তবে আগাম গম বীজ বপনকারী চাষীদের ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে বলেও জানান তারা।সাইলকোনা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। এই বছর এক বিঘা জমিতে গম বীজ বপন করেছিলাম। বপন থেকে
শেষ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু গমের দানা না হওয়ায় জমিতেই গম পুড়িয়ে ফেলতে হয়েছে । বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ থাকায় পরিবারের সকলকে নিয়ে কিভাবে চলব তা ভেবে পাচ্ছি না’।উপজেলার কাঁকফো গ্রামের আবুল কালাম, আব্দুল লতিফ, কোয়ালিগাড়া গ্রামের সাদেক আলী স ক্ষিদ্রমালঞ্চি গ্রামের আব্দুস ছাত্তার, তকিনগর গ্রামের আতাহার আলী জানান,
মৌসুমের শুরুতে তেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় গমের কাঁচা গাছে মাঠ ভরে ওঠে। কিন্তু শীষ নিয়ে দাঁড়ানোর সময় তারা লক্ষ্য করেন গম গাছের মাজা ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে। সেসময় দোকানী ও বিভিন্ন কো¤পানির লোকজনের পরামর্শে এই রোগ থেকে প্রতিকার পেতে কীটনাশক ¯েপ্র করেও কোন কাজে
আসেনি। ফলে ওই সব জমিতে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে দেড় থেকে তিন মণ। দানা খারাপ হওয়ায় যারবর্তমান বাজার মূল্য ১৫শ’ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। অথচ গম কাটা ও মাড়াই খরচ দুই হাজার টাকা।
আর গমের বীজ বপন থেকে কাটার পূর্ব পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা।
এতে বিঘা প্রতি জমিতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।বাগাতিপাড়া উপজেলা
কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাগাতিপাড়ায় গমের ফলন
ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ৯ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। যেসব কৃষক নির্দিষ্ট সময়ের থেকেও
অনেক দেরিতে বীজ বপন করেছেন তাদের গমের ফলন ভালো হয়নি। প্রতিটি ফসলের একটি নির্দিষ্ট সময়
থাকে সেই সময়ের পরে চাষ করলে সেই ফসল ভাল হয়না। তবে এসংখ্যা বেশী নয়।
নাসিম উদ্দীন নাসিম
নাটোর প্রতিনিধি
০১৭৩৭০৬৫৬০৫
১২-০৪-২০২০