শিরিন-জিয়া দম্পতির মহানুভবতায় মানবতার জয় হয়েছে। নিজেদের চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জমানো সব টাকা বিলিয়ে দিলেন করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষদের মাঝে। এসব অসহায় মানুষের খাবারের জন্য আকুতির কথা মাথায় রেখেই তাদের এই ত্যাগ। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায়। ওই দম্পতিরা হলেন জিয়াউর রহমান এবং শিরিন আক্তার। তাদের বসবাস বাগাতিপাড়া পৌরসভার রেলগেট এলাকায়। নিজেদের জমিজমা না থাকায় থাকেন রেলের জমিতে। পেশায় জিয়াউর রহমান ঠিকাদারীর সহযোগী এবং শিরিন আক্তার আনসার- ভিডিপি’র পৌর ওয়ার্ড লিডার।
জানা গেছে, গত তিন দিন ধরে পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ছুটে চলেছেন এই দম্পতি। আর বিলিয়ে দিচ্ছেন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। বুধবার খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় কথা হয় তাদের সঙ্গে।
তারা জানান, শিরিন আক্তার দীর্ঘ আট ব্ছর থেকে হার্ট, কিডনী এবং মেরুদন্ডের অসুখে ভুগছেন। খুব কষ্টে আয় রোজগার করে তা থেকে জমিয়ে ভারতে তিনি চিকিৎসা নেন। এবারও তিনি টাকা জমিয়েছিলেন ভারতে গিয়ে চিকিৎসার নেওয়ার জন্য। এরই মধ্যে মরণব্যাধী করোনা দেশের মানুষকে আক্রান্ত করেছে। ফলে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে সরকার ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া সীমানা বন্ধ হওয়ায় তারা ভারতে যেতে পারেননি। এদিকে করোনা মোকাবেলার যুদ্ধে ঘরে থাকতে গিয়ে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব অসহায় মানুষদের চাপা কান্না তাদেরকে আলোড়িত করেছে। তাই নিজেদের চিকিৎসার জন্য জমানো সব টাকা দিয়ে সমাজের এসব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জিয়া-শিরিন দম্পতি। গত তিন দিন থেকে বাজার থেকে ৫ কেজি করে চাল ছাড়াও আলু, শাক-সবজি, তেল, সাবান ক্রয় করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় এসব পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
তারা বলেন, তাদের নিজেদের জমিজমা নাই। তাই রেলের জমিতে ঘর নির্মাণ করে জীবন যাপন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাদের দুটি সন্তান। একটি হাফেজিয়া মাদরাসায়, আর বড় ছেলে রাজশাহী পলিটেকনিক্যালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিরিন আক্তার বলেন, মানুষের জন্যই মানুষ। মানবতা সবার আগে, এরপর অন্য কিছু। নিজেরা পেটপুরে খেয়ে শান্তিতে থাকবো আর ওসব অসহায়রা না খেয়ে কষ্ট করবে, তা হয় না। এমন অনুভব থেকেই নিজেদের যা আছে তাই দিয়ে মানুষদের সহযোগিতা করছি। চিকিৎসার সব অর্থ বিলিয়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আগে মানুষ বাচুক, পরে চিকিৎসা হবে।