সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম হয়নি ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী নেহা কক্কর। অভাব আর অভিযোগের মধ্য দিয়েই কেটেছে ছোটবেলা। একেবারে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অত্যন্ত সাধারণ একটা মেয়ে। বাবা শিঙাড়া বিক্রেতা হওয়ায় অনেক সময় বন্ধুবান্ধবের হাসিঠাট্টার পাত্র হয়ে বেড়ে ওঠা আজকের নেহা কক্কর তিনি।
কি নেই আজ? নাম, যশ, খ্যাতি, সম্পদ! বিশ্ব নারী দিবসে সফল নারী হিসেবে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা তুলে ধরেছেন নেহা কক্করের জীবন সংগ্রাম। তিনি আজ সারা ভারতে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী। উত্তরপ্রদেশের ঋষিকেশ থেকে বলিউডে পৌঁছলেন নেহা কক্কর।
নেহা কক্করের জন্ম ১৯৮৮ সালে ৬ জুন উত্তরপ্রদেশের ঋষিকেশে। তিন ভাই বোনের মধ্যে বড় বোন প্লেব্যাক সিঙ্গার সনু কক্কর এবং ছোট ভাই টনি কক্কর। পরিবারে সঙ্গীত চর্চার রেওয়াজ থেকে তিন ভাইবোনের মধ্যে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠেছিল। তবে সংসারে ছিল প্রচুর অভাব-অনটন।
নেহার বাবা ছিলেন শিঙাড়া বিক্রেতা। ঋষিকেশে একটা এক কামরার ঘরে ভাড়া থাকতেন বাবা-মা আর তিন ভাইবোন। আবার ওই ঘরটাই ছিল তাদের রান্নাঘরও। ঘরেরই একটা কোণে একটা টেবিল রেখে তার উপর রান্না করতেন নেহার মা। সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রামে ওই ভাড়া বাড়ির ছবিও শেয়ার করেছেন নেহা।
বড় বোন সনু কক্কর যে কলেজে পড়তেন, সে কলেজ গেটের বাইরেই শিঙাড়া নিয়ে বসতেন বাবা। এ নিয়ে বন্ধুবান্ধবেরা হাসিঠাট্টাও করতেন। শিঙাড়া বিক্রি করে পরিবারর খরচ সামাল দেওয়া একা বাবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠতো না। ফলে তিন ভাই বোন অল্প বয়সেই উপার্জনের পথ বেচে নিয়েছিলেন। তিন ভাইবোনই উৎসবের সময় মন্দিরে ভজন গেয়ে আয় করতে ৫০ টাকা। বাড়ি ফিরে সেই টাকা তারা মায়ের হাতে তুলে দিতেন। পরে নেহার পরিবার ঋষিকেশ থেকে দিল্লিতে চলে গেলে সেখানে নিউ হলি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন নেহা।
মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে গান গাইতে শুরু করেন নেহা।নেহার মূলত গায়িকা হয়ে ওঠেন একাদশ শ্রেণি থেকে। তখন ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ২-এর প্রতিযোগী বাছাইয়ে বিচারকদের মুগ্ধ করে প্রতিযোগী নির্বাচিত হন নেহা। এর পর ২০০৮ ভাই টনির সঙ্গে মুম্বই রওনা দেন নেহা। ‘নেহা দ্য রকস্টার’ নামে তার গানের অ্যালবাম মুক্তি পায়।
২০১৩ সালে প্লেব্যাক ডেবিউ করেন। ‘ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো’ ছবির একটি গান প্লেব্যাক করেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে তার গান ‘সানি সানি’ ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর একটার পর একটা প্লেব্যাক করেছেন তিনি। এ ছাড়া ‘দিলওয়ালে’ ফিল্মের ‘টুকুর টুকুর’, ‘বারবার দেখো’ ফিল্মের ‘কালা চশমা’, ‘সত্যমেব জয়তে’ ফিল্মের ‘দিলবর দিলবর’ মন ছুঁয়ে গিয়েছিল শ্রোতাদের। ঋষিকেশে একটা কামরার ভাড়া বাড়িতে ছোটবেলা কাটিয়েছেন, আর আজ নেহার নিজের রয়েছে বিলাসবহুল বাংলো।
যে ইন্ডিয়ান আইডল থেকে তার উত্থান, পরে সেই জনপ্রিয় সঙ্গীত অনুষ্ঠানেরই বিচারকের আসনে বসেছেন নেহা। ইন্ডিয়ান আইডল সিজন ১১-এর বিচারক ছিলেন তিনি।