ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের মাজদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থার ঈশ্বরদী শাখা এ ঘটনার তদন্ত ও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবী করে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থার ঈশ্বরদী শাখার সভাপতি হাশেম আলী তাঁর সংস্থা বরাবরে ২৯ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত আবেদনের বর্ণনা দিয়ে জানান, ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা গত ২১শে ফেব্রæয়ারী শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার ছবি সহপাঠিরা বিভিন্নভাবে ফেসবুকে আপলোড করে। এঘটনায় ২২ শে ফেব্রæয়ারী প্রধান শিক্ষক হাসানুজ্জামান সরকার কোনো জিজ্ঞাসাবাদ এবং অভিভাবকদের ঘটনা সম্পর্কে কিছু না জানিয়েই শিক্ষার্থীদের হাত ও লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করেন। এসময় ব্যক্তিগত আক্রোশে স্কুলের নৈশ প্রহরী জব্বার ও স্কুলের বহিরাগত তার ভাতিজা স্কুল চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী রিফাতের উপর ভয়াবহভাবে শারীরিক নির্যাতন করে। নির্যাতনে রিফাত সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসক এবং পরে ঈশ্বরদী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষকের সামনে বহিরাগত শিক্ষার্থীর উপর চরমভাবে শারীরিক নির্যাতন করলেও প্রধান শিক্ষক প্রতিবাদ না করে প্রশ্রয় দেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জানিয়েছে। এসময় মেয়ে শিক্ষাার্থীদেরও প্রহার ও হুমকী দেয়া হয়। আতঙ্কগ্রস্থ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবী জানিয়েছে।
এব্যাপারে ঈশ্বরদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিযোগের ঘটনা তদন্তের জন্য আমার উপর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তদন্ত কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হাসানুজ্জামান সরকারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন। ছাত্রীর ছবি আলাদাভাবে ফেসবুকে আপলোড করার কারণে বকাঝকা করা হয়েছে ।
এদিকে গত ৫ই মার্চ প্রধান শিক্ষক অভিযোগকারীদের ভয়ভীতি এবং হুমকী প্রদর্শন করে অভিযোগ প্রত্যহারের জন্য জোর পূর্বক ১২ জন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর গ্রহন করেছেন বলে জানা গেছে। এই ১২ জন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক পুনরায় ওই দিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থার ঈশ্বরদী শাখা বরাবরে জোর পূর্বক স্বাক্ষর গ্রহনের বিষয়টি অবহিত করে নিরাপত্তাহীনতার জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছে। প্রধান শিক্ষক কর্তৃক অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য জোর পূর্বক গ্রহনকৃত স্বাক্ষরের বিপক্ষে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।
স্কুলের দশম শ্রেণী বিজ্ঞানের জনৈক শিক্ষার্থীর পিতা নজরুল ইসলাম ৫ই মার্চ এঘটনায় ঈশ্বরদী থানায় সাধারণ ডায়েরী দাখিল করেছেন। জিডি নং ২৬১। জিডিতে নজরুল ইসলাম জানান, শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার ছবি ফেসবুকে দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক হাসানুজ্জামান সরকার ২২ ফেব্রæয়ারী ছাত্র-ছাত্রীদের অমানবিকভাবে বেত্রাঘাত করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এ ঘটনা ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অপরাধ দমন সংস্থায় অভিযোগ করলে প্রধান শিক্ষক হুমকী-ধামকী ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহরের জন্য স্বাক্ষর গ্রহন করলেও আমরা প্রত্যাহারের বিপক্ষে। প্রধান শিক্ষকের ছাত্র-ছাত্রীদের ভয়-ভিিত ও হুমকী-ধামকী প্রদর্শন অব্যাহত থাকায় থানায় বিষয়টি সাধারণ ডায়েরীভূক্ত করা হয়।