সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে খানসামার ঐতিহ্যবাহী আওকরা মসজিদ

বিলীনের পথে খানসামার পাকেরহাটে গ্রামে অবস্থিত আড়াইশ বছরের পুরনো স্থাপত্য ‘আওকরা মসজিদ’। বর্তমানে স্থানীয় এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে ঝোপ-জঙ্গল সাফ করে মসজিদটি নামাজ আদায় করার উপযোগী করলেও ঝুঁকিপূর্ণ আওকরা মসজিদের দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা যায়।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, খানসামার পাকেরহাট গ্রাম ও মীর্জার মাঠের সীমানা সংলগ্ন জায়গায় অবস্থিত ২৫৪ বছরের পুরনো স্থাপত্য ‘আওকরা’ মসজিদ। তৎকালীন মীর্জা সাহেব মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় কী নাম রেখেছেন তা কেউ বলতে পারেন না। কোনো মানুষ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এটির মধ্যবর্তী অংশে দাঁড়িয়ে কথা বললে একসময় জোরে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতো। তাই শুনে তারা ভাবত মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে মসজিদের নাম হয়ে যায় ‘আওকরা’ মসজিদ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ। এখনো মানুষ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে কথা বলে প্রতিধ্বনি শোনার আশায়। কিন্তু মসজিদের দেয়াল ফেটে নষ্ট এবং এর গায়ে আগাছা পরিপূর্ণ হওয়ায় আগের মতো আর আওয়াজ হয় না। এটি অযতœ-অবহেলায় দীর্ঘকাল সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে বিলীনের পথে অথচ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক এটি ঐতিহ্যবাহী প্রতœসম্পদ হিসেবে ঘোষণার এক বছর হলেও এটি সংস্কারে এখনও দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই ।

উপজেলা পরিসংখ্যানের তথ্যে পাওয়া গেছে, এ মসজিদটি প্রায় ২৫৪ বছর আগে বাংলা ১১৭২ সালে মীর্জা লাল বেগ নির্মাণ করেন। চিকন ইটে নির্মিত দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেলান নদীর পূর্ব ধারে পাকেরহাট গ্রাম ও মীর্জার মাঠের সীমানা সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। ওই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা ধারণা করেন, একসময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। যে কারণে এখানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের আমলে অথবা অন্য কোনো কারণে তারা মসজিটির আশপাশ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে এটি অযতœ-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। পরবর্তীতে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে মসজিদটি। তবে মীর্জা লাল বেগের ওই মসজিদকে ঘিরে মীর্জার মাঠে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠত হয়। যা পরে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এছাড়াও একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মীর্জার মাঠ আওকরা মসজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে আরও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।

মসজিদ কমিটির সদস্য মোকছেদুল ইসলাম জানান, এলাকাবাসীর উদ্যোগে মসজিদটি পরিষ্কার করে নামাজ পড়ার উপযোগী করে তুলেছি কিন্তু দেয়ালের ফাটলের কারনে আতংকে থাকতে হয় তাই প্রতœতত্ত¡ বিভাগ যদি দ্রæত সংস্কার করে তাহলে এটি হতে পারে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঐতিহ্যবাহী প্রতœসম্পদ হিসেবে ঘোষিত ঐতিহাসিক মসজিদটি দ্রæত সংস্কারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। আশাকরি দ্রæত সংস্কার কাজ শুরু হবে।