নাটোর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেনগুলিতে আসন সংকট চরম আকার ধারণ করছে। প্রতিদিন নাটোরের ৭টি উপজেলার পাঁচ সহস্রাধিক যাত্রী এ রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় ট্রেনে যাতায়াতের চাহিদা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু বগি সংকটসহ নানা কারণে চাহিদার বিপরীতে পাল্লা
দিয়ে কমছে আসন সংখ্যা।গত দুই বছর থেকে প্রতিটি ট্রেনেই আগের চেয়ে আসনসংখ্যা কমেছে অর্ধেকের চেয়ে বেশি এবং সেই সাথে কমেছে যাত্রীসেবার মান।
নানা সমস্যার পাশাপাশি কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় টিকিট
কালোবাজারি সিন্ডিকেট যাত্রীদের কাছ থেকেও হাতিয়ে নিচ্ছে দিগুণ টাকা।
উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামি ৬টি ট্রেনের মধ্যে একটি জেলা সদরে থামেনা। বাকী ৫টি ট্রেনে আসন সংখ্যা মাত্র ৭৮টি। ফলে টিকিট না পেয়ে প্রতিদিন শত শত যাত্রী বাসে বা অন্য কোন যানবাহনে চলাচল করতে বাধ্য হন। নাটোরের জন্য জন্য আসন বাড়ানোর দাবি
দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় রেল সে দাবি পূরণ
করা হয়নি। ফলে ট্রেনে চলাচলকারি যাত্রীদের বাধ্য হয়ে বেশি টাকা খরচে করে উত্তরাঞ্চলের
বিভিন্ন স্টেশন থেকে টিকিট ক্রয় করতে হয়। নাটোর বাসীর জন্য একটি আলাদা ট্রেনের
ব্যবস্থা করা হলে এ সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে মনে করেন সুধীজনেরা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, নাটোর থেকে প্রতিদিন ৬টি আন্তনগর ট্রেন নাটোরের ওপর দিয়ে রাজধানী ঢাকায় চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুতযান, রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি
এক্সপ্রেস, একতা ও নীলসাগর এক্সপ্রেস। এই ৫টি ট্রেনে আসন বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৭৮টি।
অপরদিকে কুড়িগ্রাম এক্রপ্রেস ট্রেনটি নাটোরের ওপর দিয়ে চলাচল তা জেলা সদর স্টেশনে
থামেনা। তবে জেলা সদরের বাইরে মাধনগরে ট্রেনটির স্টপেজ রয়েছে।
রেলওয়ে সুত্রে জানা যায় , নাটোর বাসীর জন্য নীলসাগর একপ্রেসে ১০টি সাধারণ এবং
পাঁচটি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত আসন, দ্রুতযানে ১৫টি সাধারণ এবং শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত
ছয়টি ,একতা এক্সপ্রেস নাটোর জেলা সদরের স্টেশনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৫টি সাধারণ এবং
মাত্র দুটি শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত আসন , লালমনি এক্সপ্রেসে সাধারণ ১০টি, রংপুর এক্সপ্রেসে ১৩টি সাধারণ, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত পাঁচটি আসন রয়েছে। অথচ শুধু নাটোর স্টেশন থেকেই পাঁচ শতাধিক যাত্রী যাতায়াত করে। এরা সিট না পেয়ে বাড়তি টাকায়
উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য স্টেশনের নামে বরাদ্দ টিকিট কিনে নাটোরে নামে। আবার অনেকে
স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনতে বাধ্য হয়।
রহিদুল ইসলাম নামে একজন শহরবাসী জানান, নাটোর স্টেশনে তিন-চার দিন আগে থেকেই টিকিট বন্ধ হয়ে যায়। অনলাইনেও টিকিট পাওয়া যায় না। তাই তিনি বাধ্য হয়ে রংপুর ,জয়পুর হাট, পাচবিব বা অন্য স্টেশন থেকে টিকিট কাটেন। না পেলে বাসেই যাতায়াত করেন।
একই কথা বলেন সাদেক আলী ,মুসা খান, আব্দুস সাত্তার, ময়েজ উদ্দিন সহ অনেকেই। গত কয়েকমাস আগে কুড়িগ্রাম থেকে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস নামের একটি আন্ত নগর ট্রেন নাটোরের ওপর দিয়ে ঢাকা যাতায়াত শুরু করে। কিন্তু এই ট্রেনটি নাটোর জেলা সদরের স্টেশনে থামেনা। থামে নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর স্টেশনে। এই স্টেশনে রয়েছে বরাদ্দ রয়েছে ৫৩টি সিট। এর মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আসন রয়েছে ১৮টি। কুড়িগ্রাম
এক্সপ্রেস ট্রেনটি কেন জেলার সদর নাটোর স্টেশনে থামে না তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন
অনেকই ।ে ইউনাইটেড প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু বলেন, নাটোর
জেলা সদর স্টেশনে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি না থামার সিদ্ধান্ত আমাদের ব্যথিত
করেছে। আমরা আশা করব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
নাটোর এমকে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নাটোর জেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য
নাটোর স্টেশন থেকে অন্তত একটি ট্রেন রাজধানীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলে আসন সংকট
থাকবে না। তাই দাবি জানাই অন্তত নাটোর থেকে একটি ট্রেন যেন বরাদ্দ দেয়া হয়