এক বিভাগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন ৩ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে দর্শন বিভাগের ১ শিক্ষার্থীর উপর হামলা করেছে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে দর্শন বিভাগের শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যান টুকিটাকি চত্বরে। সেখানে মার্কেটিং বিভাগের একজনকে পেয়ে মারধর করার একপর্যায়ে মার্কেটিং বিভাগের বাকি শিক্ষার্থীরা আবার আসে এবং দু‘পক্ষের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সেখানে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরুনকেও দেখা যায় মার্কেটিং বিভাগের পক্ষ হয়ে মারামারিতে অংশ নিতে। মেহেরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক। তবে তার দাবি তিনি ছাড়িয়ে দিতে গিয়েছিলেন। এবং দর্শন বিভাগের পক্ষ হয়ে মারধর করতে আসা লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সামনেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দর্শন বিভাগের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে। সেখানে ওই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জীবন এবং একই বিভাগের ৪র্থ বর্ষের এক ছাত্রের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে মার্স্টার্সের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সাইফ তাদের মধ্যে মিটমাট করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। মিটমাটের প্রক্রিয়া পছন্দ না হওয়ায় সাইফের উপর চড়াও হয় জীবন। পরে বিভিন্ন বিভাগের বন্ধুদের সাথে নিয়ে লিপু চত্বরের পাশে মমতাজউদ্দিন কলা ভবনের করিডোরে সাইফুলকে বেধড়ক মারধর করে জীবনের (২য় বর্ষ) সঙ্গীরা। সেটি রাস্তায়ও চলতে থাকে। টুকিটাকিতে আসার পর সেখানে মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা কাটাকাটির শুরু হয়। সেখানে থাকা মার্কেটিং বিভাগের অন্যসব শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে আসে। শেষে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধে।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সাইফ এবং লোক প্রশাসন বিভাগের সনেট সহ অজ্ঞাত কয়েকজন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু এসময় উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তিনি বলেন, “এখানে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নয়। দুটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়। তাতে জড়িয়ে যায় আরো দুটি বিভাগের দুয়েকজন। আমি এসে সবাইকে থামতে বলি এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।”
তবে দর্শন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, “খেলার মাঠে সংঘর্ষে জড়ানো দর্শন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী জীবন ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী। এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সাইফ সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের রাজনীতিতে জড়িত।”
সাইফুল ইসলাম সাইফের (মাস্টার্স) সাথে খেলার মাঠের ঝামেলা বিভিন্ন বিভাগের বন্ধু ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মারধর করে শোধ নিতে যায় জীবন (২য় বর্ষ)।
এদিকে দর্শন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী জীবনের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিতে মমতাজউদ্দিন কলা ভবনে বিভাগটির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫ টার দিকে তারা এ কর্মসূচি শুরু করে। তবে তাদের পাশাপাশি পাল্টা অবস্থান নিয়েছে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান জানান, সংঘর্ষে জড়িত বিভাগ গুলোর সভাপতি ও অন্যান্য শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের সামলানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।”