রাশেদ রাজন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘ফলিত পরিসংখ্যান’ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রশাসন। আজ সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘ চার ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠকে বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘ফলিত পরিসংখ্যান’ করার পক্ষে-বিপক্ষে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নাম পরিবর্তনের দাবি মেনে নেই নি। এসময় চাকরি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে প্রশাসন কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) বিভাগের কোড অন্তর্ভূক্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছে। তবে বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সভায় শিক্ষার্থীরা বলেন, বিভাগটি প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পরও ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। এর ফলে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় বৈষম্যের শিকার হতে হয়। আবার স্বতন্ত্র কোড না থাকায় পিএসসি’র নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নামের কোন বিভাগ নেই। ফলে আমরা মূলত নামের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বিভাগের কোন ব্রান্ডিং না থাকায় অনেকেই এ সম্পর্কে জানেন না। বিভাগের কারিকুলামও যুগোপযোগী নই। এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। বিভাগের নামের বৈষম্যের শিকার হওয়ায় নাম পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটি সম্ভব নয়। বিভাগের একটি স্বতন্ত্র কোডের জন্য আপনারা ব্যবস্থা নিন।
পরে বিভাগের শিক্ষকরা বিভাগের নাম পরিবর্তন না করার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিলেবাসের সঙ্গে রাবির পপুলেশন সায়েন্সের মাত্র ২০ শতাংশ মিল রয়েছে। তাই বিভাগের নাম পরিবর্তনের কোন যৌক্তিকতা নেই।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, একটি বিভাগের নাম হঠাৎ করে পরিবর্তন করা অসম্ভব। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ খোলার নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে যা পরিপূরণের জন্য কাজ করে থাকে। শিক্ষার্থীরা যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছেন সেগুলো সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে।
এসময় উপাচার্য বিভাগের জন্য কয়েকটি নির্দেশনা দেন। সেগুলো হলো- বিভাগের কারিকুলাম যুগোপযোগী করা, বিভাগের পরিচিতি বৃদ্ধির ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা, সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা এবং বিভাগ ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে পিএসসি, জনপ্রশাসন মন্ত্রাণলয়সহ চাকরি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রসমূহে বিভাগের পরিচিতি বৃদ্ধিতে কাজ করা।
সভা শেষে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানান, আজকের সভার সিদ্ধান্তে তারা সন্তুষ্ট নন। আমাদের সমস্যাগুলোর একটি যৌক্তিক সমাধান চাই। বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়েল উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এমএ বারী, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন।