জোরপূর্বক ঈশ্বরদীর ঢুলটিতে তালা মেরে পাম্প দখল করার চেষ্টার অভিযোগে রবিবার সন্ধ্যায় ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেসার্স রউফ এ্যন্ড ফিলিং ষ্টেশনের মালিক মরহুম আলহাজ্ব আব্দুর রউফের দ্বিতীয় স্ত্রী মিসেস সানজিয়াস রউফ লিখিত বক্তব্যে জানান, স্বামী জীবিত অবস্থায় ৩০ আগষ্ট ২০১৬ ইং তারিখে ৪৪৭৮ নং হেবা দলিল মুলে ধানী বর্তমানে ফিলিং ষ্টেশন (মেসার্স রউফ এন্ড সন্স) ও বাড়ীর ২৭ শতাংশ জমি তার একমাত্র নাবালক সন্তান রোফিউল হাসান মেহরাব এর নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়। পরবর্তীতে ১৫ জুলাই ২০১৮ ইং তারিখে তিন’শ টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে অনিবন্ধনকৃত একটি বন্টননামা দলিল নিজ হাতে লিখে যায়। বন্টননামা দলিলের প্রথম পৃষ্ঠায় ঈশ^রদী থানার বেদুনদিয়া মৌজার খতিয়ান নং ১৪৯ দাগ নং ৩৯১ ভূমি ৮০ (আশি) শতাংশসহ ফিলিং ষ্টেশন ও বাড়ী ভোগ দখল পাইবে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান রাফিউল হাসান মেহরাব। বন্টনামার তৃতীয় পাতায় আরও উল্লে¬খ করেন যে,“যেহেতু ফিলিং ষ্টেশন রাফিউল হাসান মেহরাবের নামে রয়েছে, তাই সাবালক না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসার গচ্ছিত টাকার ব্যাংক অপারেট করসহ তেল আনা ইত্যাদি সকল কার্যক্রম তাহার মাতা সানজিয়াস রউফ অভিভাবক হিসেবে পরিচালনা করবে। তিনি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুতে আমি ভেঙ্গে পড়ায় আমার নাবালক ছেলে রাফিউল হাসান মেহরাবের নামের জমি সহ ফিলিং ষ্টেশন দেখা শোনার জন্য প্রথম পক্ষের বড় ছেলে সামিউল হাসান জ্যাকিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু জ্যাকি আমাকে প্রোপাইটর হিসেবে না মেনে ১০ বছরের জন্য পেট্রোল পাম্প পরিচালনাসহ পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির দাবি করে । আমি তাতে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক জ্যাকি পেট্রোল পাম্প দখল করে পরিচালনা করতে থাকে এবং আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে মিথ্যা মামলা,প্রাণনাশের হুমকি ও নানা রকম হয়রানি করতে থাকে। তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে আমি বিজ্ঞ আদালত হতে আমার ছেলের গার্জিয়ানশীপ সহ তার সমস্ত শরীর ও সম্পত্তি দেখাশোনা ও পরিচালনা করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছি। ফলশ্রæতিতে রায়ের কপি ও গার্জিয়ানশীপসহ আমি ও আমার নাবালক ছেলে পেট্রোল পাম্প পরিচালনার জন্য গেলে আমাকে ও আমার ছেলেকে প্রাণনাশের হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে এবং পেট্রোল পাম্প থেকে বের করে দিয়ে তালা মেরে দেয়। এ ব্যাপারে নিরাপত্তার অভাবে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে ঈশ^রদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছি।
আমার স্বামীর ঈশ^রদী শহরের তিন তালা বাড়ী, পেট্রোল পাম্পের পাশের (নির্মানাধীন) ফ্লাওয়ার মিলসহ দোতালা বাড়ী এবং আমার স্বামীর ব্যবহৃত নোহা প্রাইভেট গাড়ী রয়েছে। যা বর্তমানে জ্যাকি ও তার পরিবার জোর জবর দখল করে এককভাবে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর নামে ঈশ^রদী জনতা ব্যাংকে একটি কারেন্ট একাউন্ট ছিল যাহার নম্বর “মেসার্স রউফ এন্ড সন্স- ১৭৫০”। জ্যাকি সেখান থেকে সমস্ত টাকা উত্তোলন করে বর্তমানে একাউন্ট বন্ধ করে দিয়ে দাশুড়িয়ার জনতা ব্যাংকে “মেসার্স রউফ এন্ড সন্স” এর নামে নিজে প্রোপাইটর সেজে একটি একাউন্ট খুলেছে । একজন শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে সানজিয়াস রউফ তার ও তার নাবালক সন্তানের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলের নিকট ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ফরিয়াদ জানিয়েছেন।
এদিকে এবিষয়ে অভিযুক্ত মরহুম আব্দুর রউফের প্রথম পক্ষের পুত্র সামিউল হাসান জ্যাকি জানান, বন্টননামা রেজিষ্টার্ড না হওয়ায় এর আইনগত কোন ভিত্তি নেই। আদালতে ওই সম্পত্তির মিথ্যা বর্ণনা দিয়ে গার্জিয়ানশীপ নেয়ার বিরুদ্ধে আমরা গার্জিয়ানশীপ বাতিলের জন্য ইতোমধ্যেই ২৭/১৯ নম্বর মামলা দায়ের করেছি। জ্যাকি আরো বলেন, গার্জিয়াশীপের আদের সাথে সাথে ২৩/৫/১৯ তারিখে সম্পত্তি বিক্রির ক্ষমতা প্রপ্তির জন্য আদালতে আবেদন জানালে আদালত তা নামঞ্জুর করে। ওই সম্পত্তি বিক্রির প্রচেষ্টা করা হচ্ছিল বলে জ্যাকি অভিযোগ করেন। সম্পত্তি যাতে বিক্রি করতে না পারে এজন্য নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকীর অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে জ্যাকি বলেন, পেট্রোল পাম্পের মালিকানা নির্ধারণ বিষয়ে পদ্মা ওয়েল কোম্পানী ৭-১-২০ তারিখে বিএ:আরএন্ডএস-২৩ চিঠির প্রেক্ষিতে ৩১ শে জানুয়ারী পাম্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে মালিকানা নির্ধারণ পূর্বক কোম্পানীর নিকট কাগজ প্রেরণ না করা হলে ২রা ফেব্রæয়ারী হতে তেল সরবরাহ বন্ধ করার কথা ছিল। তাই মালিকানা নির্ধারণ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে পাম্প বন্ধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত ) অরবিন্দ সরকার জানান, বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হলেও কোন সুরাহা হয়নি। সামাজিকভাবেও একাধিক বৈঠক হয়েছে। যেহেতু মামলা হয়েছে, সেহেতু তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।