শিশুকাল থেকে গণতন্ত্রের চর্চা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সারাদেশের মত পাবনার ভাঙ্গুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আনন্দমুখর পরিবেশে এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই সাথে নির্বাচনের ভোটার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ও নির্বাচন পরিচালনা করার দায়িত্ব পালন করে।
জানা যায়, প্রতিটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় হতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে জেন্ডার ব্যাল্যান্স রক্ষা করে ৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। এই তিন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন স্ব স্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে এসব দায়িত্ব তারা শিক্ষকদের পরামর্শের ভিত্তিতে করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানায়, নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধি, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ, শিখন ও শেখানো কার্যক্রমে শিক্ষকদের সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি তারা বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
রবিবার উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রার্থীদের নিজ হাতে লেখা পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। এদিন সকাল ৯ টা বাজতেই শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে লম্বা লাইনে দাড়ায়। সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত শিশু কর্মকর্তারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কিছু শিক্ষার্থীর হাতে খেলনা অস্ত্রশস্ত্র দেখা যায়। ক্ষুদে ভোটাররা জানায়, তারা জীবনের প্রথম ভোট দিতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।
পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর নির্বাচিত স্কুলছাত্রী কেয়া খাতুন বলে, ‘নির্বাচনে জিতে আমার খুব আনন্দ লাগছে। এর আগে বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীর কাছে ভোট চেয়েছি। ভোট চাইতে প্রথম একটু লজ্জা লাগলেও পরে সেটা আর লাগেনি। এখন আমি সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই।’
উপজেলার পাথরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষুদে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দেয়ার গুণ অর্জন করবে। পাশাপাশি অন্যসব শিক্ষার্থীরা যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করার ক্ষমতা ও স্বচ্ছ মানসিকতা সম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে। এছাড়া নির্বাচনের কাজে সংশ্লিষ্ট শিশু কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে নিষ্ঠাবান মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফ আলী মন্ডল বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই এটি শিশুদের নির্বাচন। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি শিশু স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এর আগে এসব শিশুদের স্টুডেন্ট কাউন্সিলের কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের আচরণ ও নির্বাচনে ভূমিকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলেই সন্তুষ্ট।