মুজিববর্ষ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অতিউৎসাহী হওয়া কিংবা বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। মুজিববর্ষে আমাদের লক্ষ্য হবে গৃহহীনদের গৃহ দেওয়া।’

গতকাল মঙ্গলবার অধিবেশন শেষে রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী এ সতর্কবার্তা দেন। কয়েক সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। মুজিববর্ষ উদযাপন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির অর্থ দিয়ে যেন কেউ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি না করে। আবার অতিউৎসাহী হয়েও যেন কেউ যত্রতত্র ম্যুরাল নির্মাণ না করে। পচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামানের হত্যার পর কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেটা আমরা দেখেছি। কাজেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে, অতিউৎসাহী হয়ে কিছু করা যাবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভুটানের রাজাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আমরা স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করব, বিশ্বের সব দেশের স্পিকারের কাছে এটি শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে যাতে পৌঁছানো হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশন বসবে। সেখানে যারা বক্তব্য রাখবেন, আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে স্পিকারকে অবহিত করতে হবে। এ ছাড়াও সংসদ চত্বরে শিশুমেলা হবে।’

সংসদ অধিবেশনে দলীয় এমপিদের উপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আমি তো নিয়মিত উপস্থিত থাকি। মন্ত্রীরাও যেন সংসদ চলাকালে বাইরের প্রোগ্রাম নিরুসাহিত করেন, যত কম করা যায়। বিশেষ করে যারা আমার পেছনের আসনগুলোতে বসেন, তাদের উপস্থিতি যদি যথাযথ না হয়; তা হলে সেখান থেকে আসন পরিবর্তন করে দূরে দেওয়া যেতে পারে, যাতে খালি না দেখা যায়। খালি দেখা গেলে সংসদের বাইরে বার্তা যাবে, সংসদের প্রতি এমপিদের মনোযোগ নেই।’

সভায় দলীয় সাংসদদের মধ্যে বক্তব্য দেনÑ সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, শামীম ওসমান, গাজী শাহনেওয়াজ, মাজহারুল হক প্রধান, মৃণাল কান্তি দাস প্রমুখ।
সব ব্যথা চেপে রেখে দেশের কাজ করছি : এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য ও রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জীবনের সব ব্যথা, সবকিছু বুকে চেপে রেখে আমি দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি শুধু একটা কারণেÑ আমি চাই দেশটা যেন এগিয়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। আমি কারও প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে চলি না বা প্রতিশোধ নিতেও যাইনি। যেখানে অন্যায় হয়েছে, ন্যায় করার চেষ্টা করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখনই বাংলাদেশের মানুষ একটু সুখের মুখ দেখতে শুরু করল তখনই বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। বাংলাদেশের মানুষ হারিয়েছে তাদের নেতাকে, আমি ও আমার বোন হারিয়েছি বাবাকে। শুধু আমরা নই, ১৫ আগস্টে স্বজনহারা অনেকেই হয়েছেন। শুধু হত্যা করা হয়নি, বিচারের হাত থেকে খুনিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সামরিক অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, খুনিদের উৎসাহিত করা হয়েছে। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কর্নেল রশিদকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসান। জেনারেল এরশাদ খুনি ফারুককে পার্টি করতে দেন। সে ফ্রিডম পার্টি করে এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পায়। কী যন্ত্রণা নিয়ে আছি! তার পরও সব ব্যথা, সব কষ্ট সহ্য করে একটি বিষয়ই শুধু চিন্তা করেছি আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করেছেন যে মানুষের জন্য, সেই সাধারণ মানুষের জীবনটা যেন সুন্দর হয়।’ তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের খুনিদের বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে সক্ষম হয়েছি। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি, চালিয়ে যাব। দেশটা যাতে সুন্দরভাবে গড়ে ওঠে সেজন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ধর্ষকরা পশুরও অধম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা শিশু-কিশোরীদের ধর্ষণ করে তারা মানুষ নামে পশু, এরা পশুরও অধম। তাদেরও তো মা-বোন-মেয়ে আছে। এমন জঘন্য চরিত্রের মানুষ কীভাবে হতে পারে? জঙ্গিবাদ-মাদক-ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশবাসীও যেন এদের ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করেন।’ রোজায় দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রমজান এলেই অনেকে অনেক খেলার চেষ্টা করে। কেউ যেন গুজবে আতঙ্কিত না হয়ে পড়েন। আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘চীন থেকে যেসব কাঁচামাল আসছে, সেগুলোর ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সতর্ক। বিকল্প পথও খুঁজছি, তাই আতঙ্কের কিছু নেই।’

মশার উপদ্রব নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার বর্ষা আসছে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে পারলে মশা থাকবে না। পরিষ্কার না রাখতে পারলে মশা তো মুখে ঢুকবে।’ ব্যাংকে টাকা নেইÑ বিরোধীদলীয় নেতার এমন বক্তব্যের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘এই মুহূর্তে ব্যাংকে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়নের ওপরে, কাজেই চিন্তা নেই। টাকা যদি না-ই থাকে, কাজ করছি কীভাবে? অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এখন সিঙ্গাপুর থেকে অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে আছিÑ এটা দাবি করতে পারি। আমাদের অনেক বড় দেশ, সিঙ্গাপুর ছোট একটি দেশ। ওদের বিরোধী দল নেই, শৃঙ্খলার মধ্যে চলে, রাজনৈতিক পরিবেশ ভালো। আর আমাদের দেশে সন্ত্রাস-অগ্নিসন্ত্রাস-খুনখারাবি হয়; অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হয়।’