নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি:
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অচল রাজশাহীর বেসরকারি শাহমখদুম মেডিকেল
কলেজ অনির্দিষ্টকালের জ্ন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেয়ার পরও আন্দোলন ধরে রাখতে রোববার
সকাল থেকেই রাস্তায় ব্যাগ রেখে রেজিস্টেশন ও নিজেদের ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে
মানববন্ধন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান আমাদের আন্দোলন করা
ছাড়া গতি নেই। এছাড়া আমাদের ছাত্র জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। কর্তৃপক্ষের
উচিত এখনই সব ছাত্রের রেজিস্ট্রেশন এর ব্যবস্থা এবং ছাত্র টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা
করা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষাকার্যক্রম
চালানোর প্রতিবাদে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে মরিয়া
হয়ে উঠেছেন শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের (এসএমএমসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক
(এমডি)। আন্দোলন ধামাচাপা দিতে শনিবার তরিঘড়ি করে হঠাৎ কলেজ
অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এবং এমডি পুলিশ দিয়ে তাদেরকে হোস্টেল থেকে
তাড়ানোর চেষ্টা করেন। এছাড়া রোববার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হোস্টেল ছাড়ার
নির্দেশনা থাকলেও সকাল সাড়ে আটটার দিকে এমডি পুলিশ সঙ্গে নিয়ে আবারো
হাজির হন মেয়েদের হোস্টেলে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা হোস্টেলের সামনে অবস্থান
নেয়। এবং পরে সকাল ১০টার সময় মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন
করেন তারা। জানাগেছে, এর আগে শনিবার বিকালে হঠাৎ করে শাহমখদুম মেডিকেল
কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীদের
রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই রেজিস্ট্রেশন এর দাবিতে আন্দোলন
করছে শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এবং কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা বসে
আন্দোলন থামাতে পারেনি। এর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেয়া তিন দিনের
আল্টিমেটাম শেষে শনিবার আবারও তাদের সাথে বসে আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে
ফিরে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করলে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখার দাবি
জানান। এরপরই কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা
জানান, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন না
থাকায় এই কলেজের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস পাশ করার পরেও ইন্টার্নশিপ করতে
পারছে না। আবার কলেজের হাসপাতালে পর্যাপ্ত রোগী না থাকায় প্র্যাক্টিসও করতে
পারেন না শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত কলেজটিতে
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে একসপ্তাহ ধরে
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। অনুমোদন না
থাকার পরও সাত বছর ধরে অবৈধভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ
রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান স্বাধীনের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, কলেজের প্রথম ব্যাচে ভর্তি হয়েছিল ১৮ জন। কিন্তু
নীতিগত অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় শিক্ষক এবং প্র্যাক্টিক্যাল সরঞ্জাম না থাকায়
১৪জন শিক্ষার্থীই কলেজ ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু যারা এমবিবিএস কোর্স শেষ
করেছে তারা পড়েছে বিপদে। বিএমডিসির অনুমোদন না থাকায় তারা পাস করেও
ইন্টার্ন করতে পারছেন না। ফলে তারা এমবিবিএস পাশ করেও ডাক্তারি পেশায় যেতে
পারছেন না। এবিষয়ে মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. হাসানুজ্জামান হাসু
জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে এক সপ্তাহ ধরে কোনো ক্লাস হচ্ছিল না।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি পূরণে তাদের কাছে ১৫দিনের সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু
আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিতে অনড়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একাডেমিক
কাউন্সিলের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। শনিবার বিকালে অনুষ্ঠিত একাডেমিক
কাউন্সিলের সভায় কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত
নেয়া হয়।#