সুইং, গতি, বাউন্সে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল করার পর এখন লাল চোখে শাসান টাইগার বোলাররা। গতকাল পচেফস্ট্রোমে অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তোলা টাইগার বোলাররা চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন
প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চোখে চোখে রেখে এখন কথা বলেন বাংলাদেশের বোলাররা! অথচ একসময় প্রতিপক্ষ বোলারদের চোখ রাঙানিতে ভীত হয়ে মুখ নামিয়ে ফেলতেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। সময় পাল্টেছে। সুইং, গতি, বাউন্সে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল করার পর এখন লাল চোখে শাসান টাইগার বোলাররা। গতকাল পচেফস্ট্রোমে অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তোলা টাইগার বোলাররা চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন। ম্যাচের প্রথম বলে আসরের সেরা ব্যাটসম্যান জয়সয়ালকে সুইংয়ে পরাস্থ করে বাঁ হাতি পেসার শরীফুল চোখ রাঙানো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। সেই চ্যালেঞ্জে জয়সয়াল জিতলেও হারেননি শরীফুল। ফাইনালে আসরের সবচেয়ে সফল দলটির বিপক্ষে গতকাল যুবা বোলাররা ছিলেন দুরন্ত। সুইং, গতি, বাউন্স, টার্নে বিপর্যস্ত করেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। প্রতিপক্ষ ইনিংসের ১০ উইকেটের দুটি রান আউট, একটি স্পিনে এবং বাকি ৭ উইকেট নিয়েছেন পেসাররা। ৩ উইকেট নিয়ে সফল বোলার ডান হাতি পেসার অভিষেক দাস। ২টি করে উইকেট নেন তানজিম সাকিব ও শরীফুল ইসলাম।
পচেফস্ট্রোমের সবুজ ঘাসের উইকেটের সুবিধা নিতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেওয়া টাইগার যুব অধিনায়ক আকবর আলী। তার নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করেন দুই পেসার শরীফুল ও সাকিব। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে রান দেন মাত্র ২৩! তুলে নেন এক উইকেট। তার স্পেলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ছক্কা ও বাউন্ডারি মারেন একটি করে। আশ্চর্য হলেও সত্যি, সাকিব টানা ১৬ বল ডট নেওয়ার প্রথম রান দেন। ইনিংস শেষে তার স্পেল ছিল ৮.২-২-২৮-২। অসম্ভব মিতব্যয়ী ছিলেন সাকিব। ছোটখাটো গড়নের সাকিব খুব জোড়ে বল করতে না পারলেও সুইংয়ের উপর অসাধারণ দখল। তিনি সাজঘরে ফেরান তিলক ভার্মা ও সুশান্ত মিশ্রকে। ব্যক্তিগত ৩৮ রানে তিলককে সাজঘরে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তিনি। ইনজুরিতে পড়ে দেশে ফিরে আসেন মৃত্যুঞ্জয়। তার অনুপস্থিতিতে দলের বোলিংয়ের পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন শরীফুল ইসলাম। গতকাল ফাইনালে অসম্ভব ভালো বোলিং করে দীর্ঘদেহী বাঁ হাতি পেসার। ১০ ওভারের স্পেলে মেডেন নেন একটি এবং ৩১ রানের খরচে নেন ২ উইকেট। বাউন্ডারি দেন মাত্র ২টি। ইনিংসের শুরুর ওভারটিই তিনি নেন মেডেন। যে জয়সয়ালের সঙ্গে চোখে চোখে রেখে ম্যাচ শুরু করেছিলেন রকিবুল, সেই জয়সয়ালকে সাজঘরে ফেরত পাঠান দুর্দান্ত এক বোলিংয়ে। ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান দুরন্ত ব্যাটিং করে রান করেন ১২১ বলে ৮৮। শুধু জয়সয়ালকেই নয়, শরীফুল সাজঘরে ফেরত পাঠান সিদ্ধেশ ভীরকেও।
বাঁ হাতি পেসার শরীফুল এবং সাকিবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটিং লাইনকে দুমড়ে মুচড়ে দেন অভিষেক। ৯ ওভারের স্পেলে ৩ উইকেট নেন। তবে অপর দুই পেসারের তুলনায় একটু বেশিই খরুচে ছিলেন তিনি। ওয়াইড করেন ৬টি। রান দেন ৪০। তিনি সাজঘরে পাঠান সাক্সেনা, অ্যানকোলেকার ও কার্তিক তাইগিকে। তিন পেসারের সাঁড়াশি আক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলেন বাঁ হাতি স্পিনার রাকিবুল। ১০ ওভারের স্পেলে সবচেয়ে মিতব্যয়ী ছিলেন তিনি। ১ মেডেন তুলে ২৯ রানের খরচে আউট করেন অধিনায়ক প্রিয়াম গার্গকে। চার বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ভারত সংগ্রহ করে ১৭৭ রান। ইনিংস যখন শেষ হয় তখনো ১৬ বল বাকি ছিল। তাতেই পরিষ্কার কতটা আগ্রাসী ছিলেন টাইগার যুব বোলাররা। বোলাররা দারুণ ছন্দে থাকলেও ব্যাটসম্যানদের লড়াই করতে হয়েছে। বিশেষ করে লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণুয়ের বোলিংয়ের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেননি তানজিদ হাসান, মাহামুদুল হাসান জয়, তওহিদ হৃদয়, শাহাদাত হোসেনরা। ৫০ থেকে ৬৫ রানে পৌঁছাতে হারিয়ে বসে ৪ উইকেট। এই ধাক্কা সামলাতে লড়াই করছেন অধিনায়ক আকবর।