নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী মহানগরীতে দেশের তৃতীয় যাত্রা শুরু করলো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাব। রাজশাহী মহানগর পুলিশ লাইন্সের ভেতরে একটি ভবনে এই ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সোমবার বেলা পৌনে ১১ টার সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এর উদ্বোধন করেন। এই ল্যাবে এখন থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মামলার আলামত তদন্ত করবে সিআইডি। ফলে তাদের আর ঢাকায় ছুটতে হবে না। এটি দেশে সিআইডির তৃতীয় ল্যাব। ঢাকা এবং চট্টগ্রামেও সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব রয়েছে। ৫১ জন জনবল নিয়ে সোমবার থেকেই রাজশাহীর ল্যাবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলে এতো দিন সিআইডির কোনো ফরেনসিক ল্যাব ছিল না। তাই আলামত পাঠাতে হতো ঢাকা। এখন থেকে ৯ ধরনের পরীক্ষার জন্য আর ঢাকায় যেতে হবে না। এর মধ্যে পরীক্ষাগারটিতে রাসায়নিক, ব্যালিস্টিকস, হস্তলিপি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, অনুবীক্ষণ, ফুট প্রিন্ট ও জালনোট শনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ভিসেরা, নারকোটিক ও এসিড টেস্টসহ আরও কয়েকটি আইটেম পরীক্ষা করা যাবে। এছাড়া সব ধরনের মাদকদ্রব্য, মৃত মানুষ ও পশু-পাখির ভিসেরা, কবর থেকে তোলা হাড়, চুল, মাটি ও সফট টিস্যু, বিষাক্ত বা চেতনাশক পদার্থের উপস্থিতি, আলামতে রক্তের উপস্থিতি, এসিড মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি, বিষ্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ, জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যালসহ বিভিন্ন আলামতের রাসায়নিক বিশ্লেষণ সম্ভব হবে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট শাখায় ক্রাইম সিন থেকে সংগৃহীত দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আঙুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আঙুলের ছাপের তুলনামূলক পরীক্ষার সুবিধা ও এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ মত এবং সংগৃহীত ফিঙ্গারপ্রিন্ট লেটেস্ট প্রিন্ট এএফআইএস ডাটাবেজে সংরক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে তল্লাশি করে মিল বা অমিল খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ক্লু-লেস বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটনে আদালত সিআইডিকেই নির্দেশ দিয়ে থাকেন। অপরাধের রহস্য উদঘাটনে এতো দিন কর্মকর্তাদের আলামত পরীক্ষার জন্য ঢাকায় যেতে হতো। এতে সময় লাগতো বেশি। পরীক্ষার রিপোর্ট পেতেও দেরি হতো। এখন রাজশাহীতেই পরীক্ষাগুলো সম্ভব হবে। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা সম্ভব হবে। এ কারণে মামলার আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমবে। এছাড়া আদালতে মামলার বিচারকাজেও আসবে গতি। ল্যাবটির উদ্বোধনের পর পুলিশ প্রধান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, দিন দিন অপরাধের ধরণ পাল্টাচ্ছে। অপরাধে প্রযুক্তির ব্যাহার হচ্ছে। অপরাধকে প্রযুক্তি দিয়েই নির্ণয় করতে হচ্ছে। তাই পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিভাগীয় শহরেই সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হবে। রাজশাহীতে চালু হলো। এটি সিআইডির কার্যক্রমে চমৎকার সংযোজন। এখানে ডিএনএ টেস্ট এবং সাইবার অপরাধ সম্পর্কিত পরীক্ষা ছাড়া সবই হবে। এই ল্যাব সিআইডির সক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিল। তিনি বলেন, ফরেনসিক ল্যাবে সব পরীক্ষায় কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়। ব্যবহার হয় নানারকম সফটওয়্যার। এর ফলে পরীক্ষা হয় নির্ভুল। আদালতে সিআইডির পরীক্ষার ফলাফল খুবই গ্রহণযোগ্য। এ জন্য চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো তদন্তের জন্য সিআইডির কাছেই আসে। এখন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আলামত এই ল্যাব থেকে করা হবে। ফলে সময় বাঁচবে। মামলায় গতি আসবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সিআইডির প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) একেএম হাফিজ আক্তার, রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার হুমায়ুন কবীর, সিআইডির ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম, রাজশাহী সিআইডির পুলিশ সুপার (এসপি) শাহরিয়ার রহমান, জেলা পুলিশের এসপি মো. শহিদুল্লাহ প্রমুখ।