রাজশাহীতে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের আগেই লটারি হয়েছিল। নাম উঠেছিল ২ হাজার ৫৯৮ কৃষকের। এর মধ্যে বেশিরভাগ কৃষক ধান সরবরাহ করেছিলেন। কিন্তু সময় থাকলেও ৭৭৭ জন কৃষকের কাছ থেকে আর ধান নেয়া হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, রাতের আধারে নতুন করে আবার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এ উপজেলায় গত ১ ডিসেম্বর থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। এ উপজেলায় প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে ১ মেট্রিক টন করে মোট ২ হাজার ৫৯৮ টন ধান কেনা হবে। আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। তবে এরই মধ্যে প্রায় ১৫ দিন ধান কেনা বন্ধ ছিলো। তারপর ধান কেনা শুরু হয়। চার দিন ধান কিনে গত বৃহস্পতিবার থেকে আবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ দিনই রাতে করা হয়েছে নতুন তালিকা। এ কারণে পুরনো তালিকার ৭৭৭ জন কৃষকের কাছ থেকে ধান নেওয়া হচ্ছে না। অথচ ধান সংগ্রহ অভিযানের আগেই প্রায় ১০ হাজার কৃষকের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ চত্ত¡রে প্রকাশ্যে লটারি করা হয়েছিল। সেখানে এদের নাম উঠেছিল। এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। লটারিতে নাম আসায় নায্যমূল্যে ধান বিক্রি করার আশায় বুক বেধেছিলেন কৃষকরা। এখন তারা হতাশায় ভুগছেন। বৃহস্পতিবার উপজেলা খাদ্যগুদামে ধান দিতে গিয়ে ফিরে আসেন সদোল গ্রামের কৃষক তসিকুল ইসলাম। তার কার্ড নম্বর- ১০৩১। আর লটারি নম্বর- ৯৮৬। তসিকুল জানান, লটারিতে নাম থাকার কারণে বৃহস্পতিবার তিনি এক টন ধান নিয়ে খাদ্যগুদামে যান। কিন্তু ধান নেয়া হয়নি। তিনি ফিরে এসেছেন। ধান নিয়ে যাওয়ার কারণে তার এক হাজার টাকা গাড়ি ভাড়াও লেগেছে। তার সবই ক্ষতি হয়েছে। তসিকুল জানান, বৃহস্পতিবারই তার মতো অন্তত ৫০ জন কৃষক ধান নিয়ে গিয়ে ফিরে এসেছেন। তাদের জানানো হয়েছে, পুরনো তালিকা অনুযায়ী আর ধান নেওয়া হবে না। নতুন তালিকা হবে। পরে এই তালিকা পাওয়া করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানের সার ডিলারদের মাধ্যমে কার্ডপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে ৭৭৭ জনের নতুন তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা সংগ্রহ কমিটি এই তালিকা চূড়ান্ত করে। কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম সরকার। এই কমিটি রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করে তালিকা করে। বাদ পড়া কৃষকরা জানান, কী কারণে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে সেটাও জানানো হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ, অনিয়ম করেই নতুন ৭৭৭ জনের তালিকা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির সদস্য ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, সংগ্রহ কমিটির সভাপতিই এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন। আমি কমিটির একজন সদস্য মাত্র। সংগ্রহ কমিটির সভাপতি এবং ইউএনও নাজমুল ইসলাম সরকারকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাই বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, তিনি যতদূর জানেন আগের তালিকাটি ছিলো ত্রæটিপূর্ণ। তাই নতুন করে তালিকা করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। জেলা প্রশাসক বলেন, যারা বাদ পড়েছেন তারা প্রকৃত কৃষক হলে অনেক আগেই ধান দিয়ে দিতেন।