রাজশাহীর বাগমারা এবং দুর্গাপুর উপজেলার সিমান্ত এলাকা ১ নং নওপাড়া ইউনিয়নের আংরার বিলে চলছে দীঘি ও পুকুর খননের মহোৎসব। হাইকোর্টে দাখিলকৃত রীটের কাগজ খুটিতে টাঙ্গীয়ে খনন হচ্ছে দীঘি। এতে অন্যান্য কৃষকের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। জমির মালিকদের সাথে কোনরুপ লিখিত চুক্তি ছাড়ায় দীঘি খননে দিশেহারা অবস্থার মধ্যে পড়েছে কৃষকরা। জোর পূর্বক কৃষকদের অবহিত না করে স্থানীয় ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন এবং ঝালুকা ইউনিয়নের চৌকুপুরিয়া গ্রামের আব্দুর রহিম ইচ্ছা মতো সিমানা নির্ধারণ করে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দীঘি খননকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা জমির মালিকরা। স্থানীয় পুলিশ বাহিনী কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে খননকার্যে নিয়োজিত ড্রেজারের চাবি নিয়ে গেলেও তা ফেরত প্রদানের ঘটনায় জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দুর্গাপুর উপজেলার ১ নং নওপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন ও ৫ নং ঝালুকা ইউনিয়নের চৌপুকুরিয়া গ্রামের আব্দুর রহিম খননরত দীঘির পাড়ে বাশেঁর সাথে হাই কোর্টের একটি রীটের তথ্যাদি ডিজিটাল ব্যানারে প্রিন্ট করে টাঙ্গীয়ে দিয়েছে। এতে অবাক হয়ে পড়েছে এলাকার লোকজন। স্থানীয় লোকজন জানায়, হাই কোর্ট যেখানে আবাদী জমিতে পুকুর / দীঘি খনন বন্ধের কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে যার ফলে অবৈধ দীঘি খনন কারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়ে তা বন্ধ করে চলেছে। আবর সেই হাই কোর্ট কিভাবে আবাদী / ধানী জমিতে দীঘি খননের নির্দেশনা প্রদান করেন। এ নিয়ে বিষ্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি জমিতে দীঘি/পুকুর খননের ফলে পানির স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ হয়ে শতশত একর আবাদী জমি অকেজ হয়ে পার আশংকায় রয়েছে কৃষকরা। হাই কোর্টের রীটে জমির কোন তফশিলের উল্লেখ নেই। নাম মাত্র রীট দেখিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেদারছে ধানি জমিতে খনন করে চলেছে বিশাল বিশাল দীঘি। আদেশের সঠিকতা কতটুকু তা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গাপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ আংরার বিলে চলছে দীঘি খনন। এর ফলে দীঘির চারপাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এতে জলাবদ্ধতায় পড়বে শতশত কৃষকের ধানি জমি। বিলের চারপাশের হাজার হাজার কৃষকের একমাত্র জীবিকার উৎস এই আংরার বিল। আর এই বিল যদি ভূমিদস্যু দীঘি খননকারীদের দখলে চলে যায় তাহলে হাজার হাজার কৃষক বেকার সহ ভূমিহীন হয়ে পড়বে। ফলে এলাকার দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। অবনতি ঘটবে আইন শৃংখলার। এ প্রসঙ্গে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খুরশিদা বানু কনা এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্থানয়ি কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে দীঘি খনন বন্ধ করে ড্রেজারের চাবি নিয়ে এসেছিলাম। পরে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান (ভারপ্রাপ্ত), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভারপ্রাপ্ত আনিছুর রহমান এর নির্দেশে ড্রেজারের চাবি ফেরত দেয়া হয়েছে। অপরদিকে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান (ভারপ্রাপ্ত) জানান, হাই কোর্টে রীটের একটি কপি দীঘি খননকারীরা আমদের কাছে দাখিল করেছে। তবে রীটে জমির কোন তফশীল উল্লেখ নেই। এদিকে দীঘি খননকারী বাবুল হোসেন এবং আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা হাই কোর্টে রীট করেই তার দীঘি খনন শুরু করেছি। যার কেস নং ৪৬৩-২০২০। হাই কোর্টের রীট আর আদেশ ভিন্ন বিষয়। হাই কোর্টে যে কেউ রীট করতে পারে। হাই কোর্টে সেই রীটের বিপরীতে আদেশ প্রদান করেন। দীঘি খননকারীদের কাছে হাই কোর্টের দেয়া আদেশের কপি চাইলে তারা সেটা দেখাতে পারেননি। এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তফশীলের উল্লেখ ছাড়ায় রীটের একটি কপি আমাদেরকে দীঘি খননকারীরা দিয়েছে। রীট করা হয়েছে সেটা আমরা অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে রিটের বিপরীতে আদেশ কি হয়েছে তা আমরা অবগত না।