রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার পশ্চিম নাককাটি বিলের দখল নিয়ে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে । সম্প্রতি এই বিলের দখল ও মাছ চাষকে কেন্দ্র করে বাসুপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি লুৎফর রহমান ও তারই শীর্ষ প্রতিপক্ষ জাবের আলীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হামলার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উভয় পক্ষে বাগমারা থানা ও রাজশাহীর আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় চলতি মাসের ২১ জানুয়ারী জাবের আলী তার ৬ সহযোগি সহ এবং দুই দিন পর লুৎফর রহমান তার ৫ সহযোগিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের গ্রেফতারে এলাকায় সাময়িক শান্তি ফিরে আসলেও আবার সেই শান্তিময় পরিবেশ ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানান এলাকার লোকজন। তারা জানান, এখন বিলের পানি ক্রমেই নেমে যাওয়ায় মাছ গুলো ধরে বিক্রির উপযুক্ত সময়। এমন সময় দুই বাহিনীর প্রধানের অনুপস্থিতিতে বিলের দখল মাছ বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বাসুপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম নাককাটি বিল সংলগ্ন অন্তত ১০ গ্রামের লোকজনের মাঝে ফের আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। দুই বাহিনীর প্রধানের অনুপস্থিতিতে বিলের দখল ও মাছের টাকার ভাগ নিয়ে তাদের উত্তরসূরী ক্যাডাররা বিল এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে বলে এলাকার লোকজন জানান। তারা জানান, এই বিলে প্রতিবছর মাছ বিক্রি থেকে কোটি কোটি টাকা আয় হয়। আর টাকার সিংহ ভাগ(৮০ থেকে ৯০ ভাগ) আত্মসাত হয়ে যায়। আর বাকী ১০ ভাগ বা তারও কম টাকা তিনশ’র অধিক শোয়ার হোল্ডারের মাঝে নামমাত্র বিলি করা হয়। বিলের এই টাকা আত্মসাত ও তার প্রতিবাদ করা নিয়ে তৈরি হয় গ্রæপিং ও ক্যাডার লালন পালন। খোজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে বাসু পাড়া ইউনিয়নের নাক কাঁটি বিলের পশ্চিম অংশে শেয়ারের মাধ্যমে মাছ চাষ শুরু হয়। এখানে শেয়ারদার রয়েছে প্রায় ৩শতাধিক। এর মধ্যে লুৎফর রহমান তার মিসেস ও তার ছোট ভাই রফিকুল ইসলামের নামে রয়েছে একশ’র অধিক শেয়ার। এনিয়ে অন্যান্য শেয়ারদারদের মধ্যে রয়েছে তীব্র ক্ষোভ। বিল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আছেন লুৎফর বাহিনীর প্রধান লুৎফর রহমান নিজেই। আর বিলের ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লুৎফর বাহিনীর বিশ্বস্থ সহচর সৈয়দ আলী। আর বিলের সার্বিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত ছিলেন জাবের আলী। বিল চাষ শুরুতেই সবঠিক ঠাক মতো চলছিল। গত ২ বছর ধরে বিলের শেয়ারে থাকা অন্যান্য সদস্যরা হিসাব চাইলে লুৎফর রহমান হিসাব দিতে গড়িমসি করেন। এছাড়াও ৮৬ লক্ষ টাকার কোন হিসাবই তিনি দেন নাই। এই ৮৬ লক্ষ টাকা লুৎফর রহমান আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ উঠে। উক্ত বিলে প্রতি বছর প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার মাছ বিক্রয় হয়ে থাকে। বিলে চাষকৃত মাছের সকল খাদ্য লুৎফর রহমান নিজেই সরবরাহ করেন। এখানেও তিনি খাদ্য সরবরাহের নামে নয় ছয় করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ হয় । এক সময়ে লুৎফরের এসব অনিয়মে অতিষ্ট হয়ে বিলের হিসাব চাওয়া ও অর্থ আত্মসাৎ প্রতি বাদ করায় জাবের আলীকে সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টা চালান লুৎফর রহমান । স্থানীয়রা জানান, জাবের আলী একজন গরীব ঘরের প্রতিবাদী সন্তান। তাই তার প্রতিবাদী কণ্ঠ চিরতরে থামিয়ে দেওয়ার জন্য লুৎফর রহমান ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন। লুৎফর বাহিনীর ভয়ে প্রাণ রক্ষার জন্য জাবের আলী দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকা ছেড়ে পালিয়েও ছিলেন। তাই এলাকাবাসীরা দাবী করে বলেন, প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে সরেজমিনে তদন্ত করলে এখানে প্রকৃত অপরাধিকে শনাক্ত করা যাবে এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিলে বিল এলাকায় প্রকৃত ভাবে শান্তি ফিরে আসবে। এ বিষয়ে বাগমারা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আতাউর রহমান জানান, বিল এলাকায় সার্বক্ষনিক পুলিশ টহল দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে কেউ বিশৃঙ্খলা করে পার পাবে না। পুলিশ উভয়ের মামলা(লুৎফর বনাম জাবের) নিবিড় ভাবে তদন্ত করছে। কে অপরাধি তা বের করে বিচারের আওতায় নেয়া হবে।