বিশ্বনাথে সংখ্যালঘু যুবকের উপর হেলাল মেম্বার বাহিনীর হামলা


গোসলরত ছেলে-মেয়ের সামনে সেলফি তুলতে বাঁধা দেওয়ার জের ধরে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের দিঘলী গ্রামে সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য বিজু (৪০) নামক এক সংখ্যালঘু যুবকের উপর হামলা করা হয়েছে। আহত সঞ্জয় লামাকাজী ইউনিয়ন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। শনিবার বেলা আনুমানিক ১২.৪৫টার দিকে লামাকাজী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার হেলাল মিয়ার নেতৃত্বে ওই হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার ঘটনায় আহত সংখ্যালঘু যুবক সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য বিজু বাদী হেলাল মিয়া মেম্বারকে প্রধান অভিযুক্ত করে ৪ জনের নাম উল্লেখ এবং আরো ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ২০ (তাং ২৬.০১.২০ইং)। মামলার অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন- মাহতাবপুর গ্রামের মৃত বদর উদ্দিনের পুত্র জুবায়ের আহমদ শিবলু (২৫), মাধবপুর গ্রামের আশক আলীর পুত্র সুহেল মিয়া (২৬), মৃত আবদুল খালিকের পুত্র জমির উদ্দিন (৫০)।বাদী তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তিনি একজন পুরোহিত। আর নিজ বাড়িতে ফার্মেসী দিয়ে ব্যবসায় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর পাশাপাশি তার বসতবাড়ীর পশ্চিম পার্শ্বে থাকা তাদের মালিকানাধীন প্রায় সাড়ে ৩ একর জমির উপর থাকা দিঘীতে মাছ চাষাবাদ করে থাকেন। আর দিঘীর চতুপার্শ্বে বসবাসরত লোকজন ঘাট তৈরী করে প্রতিনিয়তই দিঘীতে গোসল করাসহ দিঘীর পানি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মামলার প্রধান অভিযুক্ত হেলাল মিয়া মেম্বারসহ ২/৩ জন লোক উক্ত দিঘীর ঘাটে গিয়ে নিজেদের মোবাইল দিয়ে সেলফি তুলতে থাকেন। এসময় দিঘীর বিভিন্ন ঘাটে নানান বয়সের ছেলে-মেয়েরা গোসল করছিলেন। সেলফি তুলার বিষয়টি দেখে তাই বাদী হেলাল মেম্বারের কাছে গিয়ে তাকে বলেন এখানে অনেক ছেলে-মেয়েরা গোসল করতেছে, এখানে সেলফি তুলতেছেন কেন। এসময় হেলাল গংরা বাদী সঞ্জয়ের সাথে খারাপ আচরণ করতে শুরু করে। এর এক পর্যায়ে বাদীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে নিজের সঙ্গীয় লোকজনকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় হেলাল মেম্বার। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাদীর (০১৭১১-৩১১৫৫৯) ব্যক্তিগত মোবাইলে এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি (০১৭৪৯-৯৮৫৩৩৭) কল করে তাকে (বাদী) স্থানীয় হারান পালের ফার্মেসীর সামনের রাস্তায় আসতে বলেন। সরল বিশ্বাসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির কথা মতো হারান পালের ফার্মেসীর সামনে পৌঁছা মাত্রই অভিযুক্তরা বাদীর পথরোধ করে তাকে কিল-ঘুষি-লাথি মারা শুরু করে। এক পর্যায়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত হেলাল মিয়া তার সঙ্গিয়দের হুকুম দিয়ে বলে ‘মালাউনের বাচ্চারে মারিয়া ফালাও’। এই হুকুম দিয়ে হেলাল নিজেই বাদীকে বাঁশের লাঠি দিয়ে প্রাণেহত্যা করার জন্য মাথা লক্ষ্য করিয়া আঘাত করে। এরপর ২নং অভিযুক্ত জুবায়ের আহমদ শিবলুও একইভাবে আঘাত করে। তাদের আঘাতের এক পর্যায়ে বাদী সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য বিজু মাটিতে পড়ে গেলে সকল অভিযুক্তরা একত্রে তাকে (বাদী) এলোপাতাড়ী মারপিট করে। এসময় তার পকেটে থাকা ৩ হাজার ৭শত টাকা নিয়ে যায় অভিযুক্ত জুবায়ের। বাদীর আতœচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অভিযুক্তরা বাদীর দুই হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে এলাকাবাসী বাদীকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসা সেবা গ্রহন করেন বাদী।এব্যাপারে প্রধান অভিযুক্ত হেলাল মিয়া মেম্বার বলেন, ব্যবসার কারণে খাওয়া-ঘুমের সময় পাচ্ছিনা। আর ছবি তুলা পরর কথা। সকল অভিযোগ মিথ্যা। বরং দিঘীতে যাওয়ার কারণে তিনি আমার সাথে চরম খারাপ ব্যবহার করেছেন।মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।