পাখির কিচির-মিচির, মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে চলা আর খাবারের সন্ধানে যেখানে সেখানে অবাধ বিচরণ দেখতে সবারই ভালো লাগে। এমনই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পরিযায়ী পাখির দেখা মিলছে নাটোর শহরতলির বড়ভিটা বিলে। ২০২০ সালের শুরু থেকে সুদুর রশিয়া, সাইবেরিয়া সহ বিশ্বের শীত প্রধান দেশ হতে শত শত পাখি বিলে এসে পাখি সৌন্দেয্যের বিকাশ ঘটাচ্ছে।
এ বিলটিকে গত বছর পরিযায়ী পাখিদের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। নাটোর শহরতলির হরিশপুর ইউনিয়নের বড়ভিটা বিল এখন হয়ে উঠেছে লাখ লাখ পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল। এর বিপরীত দিকে মল্লিকহাটি বিলেরও ঠিক একই চিত্র। নাটোর জেলায় কোন হাওর-বাঁওড় না থাকলেও এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বিল। হালতি পাখির নামানুসারে নামকরণ করা হালতির বিল ছাড়াও রয়েছে চলনবিল, চিনিডাঙ্গার বিল আর ভাতঝরার বিলের মতো অনেক বড় বড় বিল। নাটোরের এসব বিলে অতিথি পাখিদের জন্য আবহাওয়া অনুকূল আর পর্যাপ্ত খাবার থাকায় এবারেও শীতের সময় প্রতিবছর লাখ লাখ অতিথি পাখির দেখা মিলছে।
শীতকালে সোলি, বদর, লালমোন, শামুকখোল, বক, বালিহাঁস, কাইয়ুম ও বাগাড়িসহ নানা প্রজাতির পাখির কিচির-মিচির ডাকে ওইসব বিলের সর্বত্রই মুখরিত থাকে। বিলের দেশি ছোট ছোট মাছই মূলত এসব পাখির প্রধান খাদ্য। বর্তমানে বড়ভিটা ও মলিকহাটি বিলে বিচরণ করা পরিযায়ী পাখির সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় লাখ হবে বলে স্থানীয় পাখিপ্রেমীদের ধারণা। বিলটি শহরের একদম কাছে হওয়ায় সেখানে প্রতিদিনই সকাল-বিকাল শত শত দর্শনার্থী যাচ্ছেন পরিযায়ী পাখির কলতান, নীলাকাশে ডানা মেলে উড়ে চলার মতো মোহময় দৃশ্য উপভোগ করতে। সংবাদ পেয়ে এরই মধ্যে নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বড়ভিটার ওই বিলের অতিথি পাখি পরিদর্শনে যান।তিনিও সেখানে একসঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে এত পাখি দেখে উচ্ছ¡সিত। নীলাকাশে পাখির অবাধ বিচরণের দৃশ্য ধারণ করে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে তিনি বড়ভিটা বিলকে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেন এবং সেইসঙ্গে সেখানে পাখির অভয়ারণ্য তৈরি ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেবেন বলেও জানান। এ সময় গণমাধ্যমকর্মী খান মামুন জানান, তিনিও একসঙ্গে এত পাখি কখনও দেখেননি।
আবাদুর রহমান নামে এখানকার এক মাছ চাষী জানান, পরিযায়ী পাখি সকাল বিকাল এখানে বিচরণ করে। এই পাখিরা মূলত দেশী প্রজাতির ছোট ছোট মাছ খায়। আমাদের মাছ চাষে লোকসান হলেও আমরা এইসব পাখিরা যাতে এখানে অবাধে বিচরণ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখি। এর আগে অনেক শিকারি বন্দুক, জাল, ফাঁদ দিয়ে এইসব অতিথি পাখি শিকার করতে এসেছে। কিন্তু আমরা শিকার করতে দেইনি। এজন্য শিকারিদের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হয়েছে, হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রশাসন যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এই অতিথি পাখি সংরক্ষণে আর কোন সমস্যা থাকত না।