পাবনায় পুলিশের কাজে সহায়তাকারী আব্দুল আলিমকে হামলার প্রধান আসামি সন্ত্রাসী আরিফকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড় থেকে গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পাবনা সদর থানার ওসি নাসিম আহমেদ আরিফকে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করেছেন। গোয়েন্দা বিভাগের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার আরিফকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর রাতে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামের মোঃ পাঞ্জাব প্রাং এর ছেলে মোঃ ফিরোজ প্রাং তার সহযোগীরা মালিগাছা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের একটি বাড়ীতে কৌশলে প্রবেশ করে এক যুবতীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষিতার চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা এসে ধর্ষক ফিরোজকে আটক করে। এ সময় ধর্ষক ফিরোজের সাথে থাকা অন্যরা পালিয়ে যায়। এদিকে ধর্ষক ফিরোজকে আটকের পর ধর্ষকের বাবাসহ মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের সন্ত্রাসী বাহিনী ধর্ষক ফিরোজকে ছাড়িয়ে নিতে ধর্ষিতার বাড়িতে উপস্থিত হয়। এ সময় চেয়ারম্যান শরীফ ধর্ষককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে ফিরোজকে নিজ জিম্মায় নেয়। ধর্ষিতার বাবা সন্ত্রাসী বাহিনীর চাপের মুখে চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের কাছে ফিরোজকে হস্তান্তর করেন। চেয়ারম্যান ধর্ষক ফিরোজকে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ছেড়ে দেয়।
এ ঘটনা জানতে পেরে ধর্ষিতা পরের দিন ২১ ডিসেম্বর রাতে নিজে ধর্ষকের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বিচার দাবী করে। এ সময় ধর্ষক ফিরোজসহ চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী ধর্ষিতাকে বেধড়ক মারপিট করে। ধর্ষিতাকে মারপিট করার পুর্বে সন্ত্রাসীরা তাকে আবারও গণধর্ষন করে। পরে সন্ত্রাসীরা ধর্ষিতাকে মৃত ভেবে ধর্ষিতার বাড়ির পাশে ফাঁকা যায়গায় তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ধর্ষিতাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় ধর্ষিতার পিতা বাদী হয়ে রোববার রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফসহ ৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় ৯(১) ২০০০ সালের নারী ও শিশু র্নিাযতন দমন আইন সংশোধন ২০০৩ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ মামলায় ইতিমধ্যে ৩ আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
ওই ধর্ষণ মামলার তদন্তের বিষয়ে কথা বলতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে আলিম নামের এক যুবককে গাছপাড়া-বাইপাস মোড়ে ডেকে নেন সদর থানার ওসি (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম। এ সময় সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো স্থানীয় চেয়ারম্যান শরীফের ভাই আরিফের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। তদন্ত ওসির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাপোকথনের পরেই চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের ছোট ভাই আরিফের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী তার উপর হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা এলোপাথারীভাবে লোহার রড, হকি স্টিক দিয়ে বেদমভাবে মারপিট করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে তারা মোটর সাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনাস্থলের পার্শ¦বর্তী একটি দোকানের সিসি ভিডিও ফুটেজে মারপিটের সময় পুলিশের ওসি (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ও একজন সিপাহীর সেখানে উপস্থিতি ছিলেন। ওই ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় আহত আব্দুল আলীমের স্ত্রী রুমা খাতুন বাদী হয়ে গত ২০ জানুয়ারি আরিফসহ দশ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পাবনা থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করে।
এদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনছার আলীর ছোট ছেলে আরিফ। গোপালপুর গ্রামে তার বাড়ী। আরিফের বিরুদ্ধে জাল লাইসেন্স তৈরি করে অবৈধ অস্ত্র কেনা, মাদক ব্যবসা, গাড়ি চুরি, জমি দখল, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, প্রতারনা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। মালিগাছা ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামে রয়েছে তার ডাক বাংলো নামের অফিস। এক সময় এই ডাক বাংলো ছিলো আরিফ বাহিনীর টর্চার সেল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ডাক বাংলোর সামনে জড়ো হতো শতাধিক মটর সাইকেল। আরিফ বাহিনীর ক্যাডাররা রাতভর সেবন করত মাদক। এই ডাক বাংলোতে প্রতিপক্ষকে ডেকে এনে জোরপূর্বক শালিসের মাধ্যমে চলতো অর্থ বাণিজ্য। এ বাহিনীর সাথে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সখ্যতা থাকার কারণে এলাকার কোনো মানুষ তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না।
মালিগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, নির্বাচনে পরাজিত হয়ে একটি মহল তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে অহেতুক নানা সময়ে নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে। গত শুক্রবার যে সময় ঘটনা ঘটে সে সময় আমার ভাই আরিফ ঘটনাস্থলে ছিল না। এ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পাবনা থানার এসআই ওবায়দুল করিম জানান, আরিফকে গ্রেফতারের পর পাবনায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।