যশোরের শার্শায় ঘুষ দাবির পর আসামির স্ত্রীকে ধর্ষণের
মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই খায়রুল আলমের ধর্ষণে সম্পৃক্ততা
থাকার কোনও প্রমাণ পায়নি তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইভেস্টিগেশন
(পিবিআই)। ফোন, কললিস্ট, সরকারি নথি ঘেঁটে এবং সন্দেহভাজন অন্যদের সঙ্গে
কথা বলে পিবিআই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ডিএনএ
পরীক্ষা করেও ধর্ষণের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি।
আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা পিবিআই অফিসে সাংবাদিকদের
ব্রিফিংকালে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন এসব
কথা বলেন।
তিনি জানান, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর গভীররাতে শার্শা উপজেলার লক্ষ্মণপুরে
ওই গৃহবধূ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় ৩ সেপ্টেম্বর রাতে শার্শা
থানায় একটি মামলা করা হয়। প্রায় চার মাস ধরে ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ
ও তদন্ত করা হয়। বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের
জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বেচ্ছায়
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা তদন্ত করে জানতে পারেন, ওই
ব্যক্তির সঙ্গে বাদীর ঘনিষ্ঠতা ছিল, তাদের মধ্যে আগেও শারীরিক সম্পর্ক
হয়েছে। তার ডিএনএ পরীক্ষা করেও এর সত্যতা মেলে। অপর দুই জন বাদীর
পূর্বপরিচিত এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে শত্রুতা ছিল।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা জানান, তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, স্বীকারোক্তি
প্রদানকারী বাদীকে মাদক মামলা থেকে তার স্বামীকে মুক্ত করে দিতে পারবে
প্রলোভন দেখায়। ঘটনার দিনও মোবাইল ফোনে বাদী ওই আসামিকে ফোন করে। তাদের
মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়।
পুলিশ জানায়, স্বামী জেলখানায় থাকাকালে বাদীর বড় ভাইয়ের মেয়ে রাতে তারই
সঙ্গে থাকতো। ওই মেয়ে তার ফুফুর মোবাইল ফোনে সাভারে থাকা তার স্বামীর
সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতো। ঘটনার রাতেও ওই মেয়ে তার স্বামীর সঙ্গে কথা
বলেছে, যা প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ বের করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বাদী এসআই খায়রুল
আলম নামে যাকে সন্দেহ করে অভিযুক্ত করেন, তিনি ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত
ছিলেন না। তার ফোন, কললিস্ট, সরকারি নথি এবং সন্দেহভাজন অন্যদের সঙ্গে
কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাছাড়া এসআই খায়রুলসহ অন্য দুই আসামির
ডিএনএ পরীক্ষা করেও তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি।’
তিনি বলেন, ‘গৃহবধূ ধর্ষণের ওই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একজনের সম্পৃক্ততা
পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। শিগগির
তা আদালতে দাখিল করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাতে যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষ্মণপুর
এলাকায় দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূ (৩০) পুলিশের এসআই খায়রুল আলম ও
সোর্স কামরুজ্জামান ওরফে কামারুলের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ
তোলেন। এর আগে গত ২৫ আগস্ট ওই নারীর স্বামীকে পুলিশ আটক করে। ওই নারী
দাবি করেন, সেই সময় তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে ৫০ হাজার টাকা দাবি
করেন গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই খায়রুল আলম। টাকা না দেওয়ায়
৫০ বোতল ফেনসিডিল দিয়ে ওই ব্যক্তিকে চালান দেওয়া হয়।