পাবনায় ধর্ষন মামলার সাক্ষীকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিলেন পুলিশ

পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনায় গণধর্ষিতা গৃহবধুকে ধর্ষকের সাথে থানায় বিয়ে দেয়া, মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলে সন্ত্রাসীদের সহযোগীতা, মেয়ে হত্যার বিচারপ্রার্থী বাবার মামলা গ্রহণ না করে উল্টো ডাকাতির মামলায় ফাঁসানো এমন সব বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগের পর এবার ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়ার গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসীরা এ সময় মামলার সাক্ষী ঐ যুবককে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। পাবনা থানার মালিগাছা ইউনিয়নের গাছপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। আহত আব্দুল আলীমকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার ফাঁস হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে পাবনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ও একজন সিপাহীকে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ঐ পুলিশ কর্মকর্তা ও সন্ত্রাসীদের বিচার দাবী করেছেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। চরম উদ্বেগ জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ^াস সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা) শামিমা আকতারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার রাতে আহত যুবক আব্দুল আলীমের স্ত্রী রুমা খাতুন বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে।
আহত যুবক আব্দুল আলীম জানান, মালিগাছা ইউনিয়নের একটি ধর্ষণ মামলার তদন্তের বিষয়ে কথা বলতে তাকে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে ডেকে গাছপাড়া মোড়ে নেন পাবনা থানার ওসি (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম। এ সময় সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো একদল স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। কিছুক্ষণ কথাপোকথনের পরেই ঐ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী মালিগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের ছোট ভাই আরিফুলের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার উপর অতির্কিতে হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই সন্ত্রাসীরা এলোপাথারীভাবে লোহার রড, হকি স্টিক দিয়ে পেটাতে শুরু করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে মোটর সাইকেল যোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এসময় পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ও একজন সিপাহী উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থলের পার্শ¦বর্তী একটি দোকানের ভিডিও ফুটেজে মারপিটের সময় পুলিশের ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলামকে নীল রংয়ের ব্লেজার পড়া অবস্থায় এবং পুলিশের একজন সিপাহীকে সেখান থেকে দ্রুত বের হয়ে চলে যেতে দেখা যায়।
পরে স্থানীয়রা আলিমকে উদ্ধার করে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার একটু উন্নতি হলে সোমবার রাতে পুনরায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে আহত আব্দুল আলীম সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে আহত আব্দুল আলীমের মা আলেয়া খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে পুলিশ ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়। সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে জখম করেন। আমি এই ঘঁনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবী করছি। পুলিশও নিরাপদ নয় বলেও দাবী করেন তিনি।
এ বিষয়ে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনায় আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি। পুলিশ এমন কাজ করতে পারে ভাবতেই পারছি না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবী করি।
এ ব্যাপারে মানবাধিকারকর্মী মুজতবা আব্দুল আহাদ উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, দুই একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন কাজ পুরো বিভাগকে বিতর্কিত করেন। এ ধরনের কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনলে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজে সাহস পাবেন না বলেও দাবী করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ওসি তদন্ত খাইরুলের বক্তব্য নিতে তার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি একটি মামলায় রাজশাহী সাক্ষ্য দিতে গেছেন বলে পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ জানান।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ^াস হামলার ঘটনাকে আকস্মিক ও অনাকাঙ্খিত দাবী করে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতি আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা) শামিমা আকতারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার রাতে আহত আব্দুল আলীমের স্ত্রী রুমা খাতুন বাদী হয়ে দশ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে পাবনা থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং-৬৫, তাং ২০/০১/২০২০ইং। পুলিশ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মনোহরপুর গ্রামের মো: তোফাজ্জল হোসেন ও মো: আশরাফ প্রামানিক।