নিজস্ব রিপোর্টারঃ
গত বছর ১২ জুন ২০১৮ইং তারিখে প্রকাশিত হয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১৮ যার ১১.৬ ধারাতে বলা হয়েছে শিক্ষক নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স হবে ৩৫ বছর। পক্ষান্তরে উপজেলা কোটা বাতিল করতে নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষকগণ নিবন্ধিত শিক্ষকদের অধিকার আদায় কমিটি গঠন করেন যারা আহ্বায়ক ও সমন্বয়কারী ছিলেন এস এম আমজাদ হোসেন। এস এম আমজাদ হোসেন বলেন, যে দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিংবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি আইনের উর্দ্ধে নন সে দেশের একজন আমলা কিভাবে আইনের উর্দ্ধে তা বোধগম্য নয়। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর চেয়ারম্যান বারবার মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করেছেন। যেমন ১৪/১২/২০১৭ইং তারিখের ৭টি নির্দেশনার অধিকাংশ নির্দেশনাই মানেন নি তিনি। সাতটি নির্দেশনার মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে “সনদের মেয়াদ সনদধারীর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত” এবং অন্য একটিতে বলা হয়েছে “প্রতিবছর জাতীয় মেধাতালিকা আপডেট করে শুন্য পদ থাকা সাপেক্ষে রিটকারী ও অন্যান্য প্রত্যাশিতদের নিয়োগ দিতে হবে”। কিন্তু এনটিআরসিএ এর চেয়ারম্যান জনাব এস এম আশফাক হুসেন সনদধারীদের নিয়োগের বয়স ৩৫ বছর লিমিট করে রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মহামান্য হাইকোর্টে একে একে ১৮টি কন্টেম্পট অব কোর্ট দাখিল হয়। উক্ত কন্টেম্পট মামলা গুলো হার্ট ইন পার্ট হিয়ারিং পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ সুত্রে জানা গেছে কোর্ট অব কন্টেম্পট এর রায় যাতে বিলম্বে হয় তারজন্য দালালদের মাধ্যমে নতুন নতুন কন্টেম্পট মামলা কোর্টে তোলা হচ্ছে যার ফলে বার বার কন্টেম্পট অব কোর্ট মামলার শুনানি পিছিয়ে পড়ছে।।
গত ০২/০১/২০১৯ইং তারিখে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট শাখায় ২৫নং কোর্টের বিচারপতিদ্বয় ৩৫ উর্দ্ধো নিবন্ধনধারীদের আবেদন গ্রহণ করে নিয়োগ দেবার নির্দেশ দিলেও “এনটিআরসিএ” আবেদন গ্রহণ না করে গোপনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার কোর্টে আপিল করে সাময়িক স্ট্রে করেন এবং ৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষকগণের নেতা এস এম আমজাদ হোসেন মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধানবিচারপতির কোর্টে আপিল ডিবিশনের স্ট্রে অর্ডারকে ভ্যাকেট করলেও বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন সাহেব মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধানবিচারপতিসহ ছয়জন বিচারপতির রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৩৫ উর্দ্ধোদের আবেদন গ্রহন না করেই ২০১৯ সালে নিয়োগ দেন যা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দেশের সর্বোচ্চ আদালত অবমাননা করে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধান সংকটে ফেলে দিয়ে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন “এনটিআরসিএ” এর চেয়ারম্যান জনাব এস এম আশফাক হুসেন ।
তাছাড়াও ২২/০৫/২০১৯ইং তারিখে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট শাখায় ৩৫ উর্দ্ধো নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ দেবার নির্দেশ দেন এবং ১২/০৬/২০১৮ ইং তারিখের পূর্বে যারা সনদ অর্জন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রযোজ্য নয় এবং তাদেরকে জাতীয় মেধাতালিকা অনুসারে আবেদন গ্রহণ করে নিয়োগ দেবার নির্দেশ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় দিলেও “এনটিআরসিএ” এর চেয়ারম্যান সে যুগান্তরকারী রায়কে আপিল করে এবং আপিল ডিবিশনের চেম্বার কোর্টে গত ৫/০১/২০২০২০ইং তারিখে শুনানি গ্রহণ করে আগামী ১০/০২/২০২০ইং তারিখে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ফুল বেঞ্চে পোস্টিং করেন উক্ত সময়ের জন্য সাময়িক স্ট্রে করেন চেম্বার কোর্ট (সাধারণ নিয়মানুসারে)। যেহেতু মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্টে আগামী ১০/০২/২০২০ইং তারিখে পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করা আছে সেহেতু আইন অনুযায়ী পূর্নাঙ্গ শুনানির পূর্বে কোনোভাবেই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে না, কিন্তু “এনটিআরসিএ” এর চেয়ারম্যান ব্যক্তি স্বার্থে তরান্বিত হয়ে আবারো আইন লঙ্ঘন করে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে যা আইন ও সংবিধান বিরোধী।
এতে করে নিবন্ধিত শিক্ষকগণসহ বাংলাদেশের সাধারণ জনগন এস এম আশফাক হুসেন সাহেবের কুকর্মের কারণে সরকারের প্রতি খুবই বিরক্ত ও আইনের লঙ্ঘন দেখে সংবিধানের প্রতি আস্তা সংকটে পড়ছে ।
এস এম আশফাক হুসেন সাহেবের আইনের প্রতি অনাস্তা ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান মহামান্য আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো সত্যিই লজ্জাজনক ও হুমকি স্বরূপ। এজন্য নিবন্ধিত শিক্ষকগণ বারবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা ভাবছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ নিবন্ধিত শিক্ষকদেরকে এস এম আশফাক হুসেন সাহেবের আক্রমণ থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই পারবেন আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত রেখে সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে চির অম্লান রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ অতীব জরুরি।
উল্লেখ্য যে, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ২০০৫ সালের আইনের ২১ধারার ক্ষমতা বলে গঠিত ও পরিচালিত হলেও এ ধারার অপব্যবহার করে বার বার সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নীতিমালা জারী করে বারংবার নিবন্ধিত শিক্ষকদেরকে বঞ্চিত করছে যা অজ্ঞতার সামীল।
গত ২০১৬ সালে উপজেলা কোটা স্থাপন করে “এনটিআরসিএ” মেধাকে গলাটিপে হত্যা করেছিলো যা সংবিধানের ২৭, ২৮, ২৯ ধারার সাথে সাংঘর্ষিক। উপজেলা কোটার কারণে জাতীয় মেধাতালিকায় শীর্ষে অবস্থান করেও নিয়োগ বঞ্চিত হয় হাজার হাজার নিবন্ধিত শিক্ষকগণ। নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষকগণ “নিবন্ধিত শিক্ষকদের অধিকার আদায় কমিটি” গঠন করে এস এম আমজাদ হোসেন সাহেবের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছিলেন এবং আন্দোলনে সুরাহা না হওয়ায় ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে মহামান্য হাইকোর্টে একে একে ১৬৬টি রিট দাখিল করেন যার চুড়ান্ত রায় হয় ১৪/১২/২০১৭ইং তারিখে কিন্তু এই রায়কেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান “এনটিআরসিএ” এর চেয়ারম্যান জনাব এস এম আশফাক হুসেন ।
যেখানে মহামান্য রাষ্টপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ কেহই আইনের উর্দ্ধে নন, দেশের সরকার পর্যন্ত আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল যেখানে একজন আমলা “এনটিআরসিএ” এর চেয়ারম্যান আদালত ও সংবিধান অবমাননা করার মত সাহস পায় কোথায় তা সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে।
কিছু মানেন কিছু মানেন না এ নীতি অবলম্বন করে নীতিমালা-২০১৮ জারি করেন ৩৫ উর্দ্ধো নিবন্ধনধারীদের বঞ্চিত করে। আদালত বন্ধ থাকা অবস্থায় রাতের অন্ধকারে ৩৫ উর্দ্ধো নিবন্ধন ধারীগণকে বঞ্চিত করে সার্কুলার দেন এস এম আশফাক হুসেন। বঞ্চিতরা আবারো এস এম আমজাদ হোসেন সাহেবের সভাপতিত্বে ৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষক কেন্দ্রীয় ফোরাম গঠন করে আদালতের দারস্থ হন। মহামান্য হাইকোর্ট গত ০২/০১/২০১৯ইং তারিখে ৩৫ উর্দ্ধোদের আবেদন গ্রহণ করে নিয়োগ দেবার নির্দেশ দেন কিন্তু এস এম আশফাক হুসেন সাহেব উক্ত নির্দেশকে চ্যালেন্জ করে আপিল করে চেম্বার কোর্ট থেকে গোপনে স্টে অর্ডান নেন। সভাপতি এস এম আমজাদ হোসেনও আপিল মোকাবেলা করেন এবং মহামান্য প্রধানবিচারপতির কোর্টে মহামান্য প্রধানবিচারপতিসহ ছয়জন বিচারপতি মহোদয় ৩৫ উর্দ্ধো নিবন্ধিত শিক্ষকদের আবেদন গ্রহণ করে নিয়োগের রায় দেন এবং চেম্বার কোর্টের স্ট্রে ভ্যাকেট করেন।
তাতে ৩৫ উর্দ্ধোদের আবেদন গ্রহণ করে নিয়োগ দিতে আইনগত আর কোনো বাধা না থাকলেও এস এম আশফাক হুসেন সাহেব মহামান্য প্রধানবিচারপতির কোর্টের রায়কে না মেনে নিয়োগ বঞ্চিত করেন ৩৫ উর্দ্ধোদেরকে যা খুবই দুঃখজনক।
এভাবে যদি কোর্টের রায়কে এস এম আশফাক হুসেন সাহেব বারবার অমান্য করতে থাকেন তবে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান সংকটে পড়বে দেশ।
তাই ৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষক কেন্দ্রীয় ফোরামের সভাপতি বিনয়ের সহিত অনুরোধ করেছেন, যেনো বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন। নতুবা দেশের জনগণ আইনের প্রতি আস্তা হারাবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ।