পাবনায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের ষষ্ট মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয়েছে। শুক্রবার পাবনা জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনের শুরুতে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বসত বাড়িতে নির্মিত সুচিত্রা সেনের ভাস্কর্যের প্রতি ফুলের শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মীরা।
সকাল সাড়ে নয়টায় গোপালপুর মহল্লায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সুচিত্রা সেনের বাড়ি থেকে বের করা একটি স্মরণ পদযাত্রায় বের করে তাতে অংশ নেয় অংশ নেয় আমন্ত্রিত অতিথিরা। পদযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে সুচিত্রা সেনের কৈশোর জীবনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্বের মহাখালি পাঠশালা (বর্তমানে টাউনহল স্কুল) প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
পদযাত্রা শেষে স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় সুচিত্রা স্মরণে তাঁর জীবনীর উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা। পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদের সভাপতিত্বে স্মরণ সভার আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর কামরুজ্জামান, শিক্ষাবিদ লেখক প্রফেসর মনোয়ার হোসেন জাহেদী, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খান, পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিম আরা প্রমুখ। আলোচনাসভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় সুচিত্রা সেন অভিনীত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গানের অনুষ্ঠান। বিকেলে মহানায়িকার বসতবাড়ি স্মৃতি সংগ্রহশালায় দেখানো হয় সুচিত্রা সেন অভিনীত বাংলা ছবি।
এদিকে, সকাল দশটায় পাবনা প্রেসক্লাবে স্মরনসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ। স্বাধীন মজুমদারের সঞ্চালনায় পরিষদের সভাপতি সাইদুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারি হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটি । এসময় আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, পাবনা চেম্বার অব কমার্সেরে সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী মর্তুজা বিশ্বাস সনি, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার উপস্থাপক শামীম চৌধুরী প্রমুখ। দিবসটি পালনে সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ ও পাবনা ড্রামা সার্কেল সহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।
উল্লেখ্য, সুচিত্রা সেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনার মধ্য শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে । ১৯৬০ সালে পাড়ি জমান কলকাতায়। ১৯৫২ সালে তিনি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে সাড়ে চুয়াত্তর ছবি করে সাড়া ফেলে দেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে। সুচিত্রা সেন বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি ‘দেবদাস’ ও ‘প্রণয় পাশা’ শেষ ছবি। ১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস’ জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন সুচিত্রা সেন। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়। সুচিত্রার বাড়িটি সংস্কার করে পাবনা জেলা প্রশাসক ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল জন সাধারণের জন্য অবমুক্ত করেন । যা এখন ”সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা”।