লালমনিরহাট প্রতিনিধি
লালমনিরহাটের নদীগুলোর চরে চরে ব্যাপক শীতকালীর ফসলের সমাহার। পানি কমে আসায় অর্ধশতাধিক চর জেগে উঠেছে। এসব চরে বসতি স্থাপন করে ফসল আবাদ শুরু করেছে প্রায় ছয় হাজার পরিবার, যাদের অর্ধেকই নদীভাঙন ও বন্যায় বাস্তুহারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, পাঁচ উপজেলায় চার নদীর জেগে ওঠা চরের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন ফসল আবাদ হয়েছে। নদী শাসন ও খননের উদ্যোগ নেয়া হলে এসব চরে প্রায় দ্বিগুণ আবাদি জমি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানাযায়। তিস্তা নদীতে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, সিঙ্গিমারী, গোড্ডিমারী, সিন্দুর্ণা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডার, কাকিনা ইউনিয়ন, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন, লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, খুনিয়াগাছ ও রাজপুর ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় ৪৬টি চর জেগে উঠেছে। এসব চরের মধ্যে ১৫টি চরে মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। ধরলা নদীতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ও কুলাঘাটে পাঁচটি চর জেগে উঠেছে। এর মধ্যে দুটি চরে জনবসতি গড়ে উঠেছে। তাছাড়া রতœাই ও সানিয়াজান নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এই দুই নদের বুকে বোরো ধান চাষের ধুম পড়েছে। পাটগ্রাম উপজেলার পৌর এলাকার নিউ পূর্বপাড়া এলাকায় ধরলা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের প্রায় এক একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন জবেদ আলী। তিনি বলেন, প্রতি বছর ধরলায় এ সময়ে পানি কমায় চর জেগে ওঠে। এসব চরে আমার মতো অনেকেই বোরো ধান আবাদ করে। বর্ষার পানি আসার আগেই ধান কেটে নেয়া হয়। এতে কোনো সমস্যা হয় না। পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল গাফ্ফার বলেন, দহগ্রামে তিস্তার চরে প্রায় ১৫০ হেক্টর আবাদি জমি পাওয়া গেছে। এছাড়া ধরলা, সানিয়াজান ও সিঙ্গিমারী নদ-নদীর বুকেও বিভিন্ন ফসল আবাদ হচ্ছে। হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর চরের জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ হচ্ছে। সেখানে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে আধুনিক কৃষি তথ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এসব চরে এবার ভুট্টা ও সবজির বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা পারুলিয়া চরে বসতি স্থাপনকারী আব্দুর রশীদ বলেন, আমরা চরের নয় একরেরও বেশি জমিতে ভুট্টা, মরিচ, তামাক, বাদাম ও সবজি ফসল চাষ করেছি। চরে চলাচলের জন্য কোনো রাস্তা নেই। উৎপাদিত ফসল নিয়ে মূল ভূখÐে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সতিনি আরো বলেন, চরে বসতি স্থাপনকারী মানুষের একটাই দাবি, নদী শাসন ও খননের মাধ্যমে আমাদের জমি রক্ষা করা হোক। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ উদ্যোগী নয়। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) বিধু ভূষণ রায় বলেন,ধরলা, সানিয়াজান, রতনাই ও তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের জমির সঠিক পরিমাণ আমাদের কাছে নেই। তবে জেগে ওঠা চরের জমিতে মানুষের বসতি আছে এবং নানা ফসলও চাষ হয়ে থাকে। পাঁচটি উপজেলায় মোট সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর চরের জমিতে বিভিন্ন ফসল আবাদ হয়ে থাকে। ফলনও বেশ ভালো হয়। আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা চরে গিয়ে কৃষকদের মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, নদী শাসনের মাধ্যমে চরের জমিতে পরিকল্পিতভাবে ফসল আবাদ করা গেলে লালমনিরহাটের অর্থনীতি আরো বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠত। অনেক দিন থেকেই শুনছি লালমনিরহাটের জেগে ওঠা চরের জমিতে ফসল আবাদের জন্য নদী শাসন করা হবে। কিন্তু কবে হবে, তা আমরা জানি না।