নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নে দ্বৈত চাকুরী, গোঁজামিল দেওয়া অবৈধ ম্যানেজিং কমিটি আর সদস্যদের জাল স্বাক্ষরসহ নানা অনিয়মে পরিণত হয়েছে ছবিরণ-গুলজান স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিগত ২০০৫ সালে স্থানীয় সমাজসেবী আমেরিকা প্রবাসী ডঃ আব্দুস সামাদের প্রচেষ্টায় তাঁর মা ছবিরণ ও খালা গুলজানের নামে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেখানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে অনিয়ম ও দূর্নীতি শুরু করা হয়। এমনই দূর্নীতি’র শিকার হয়ে আদালতে মামলাও করেছেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষক। রণবাঘা এলাকার মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মোঃ ফেরদৌস আলী তাঁর মামলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মোঃ আব্দুস সোবাহান এবং প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদক নূর নবী সহ ছয় জনকে বিবাদী করেছেন। আরজিতে দাবী করা হয়েছে, ২০১১ সালে ছবিরণ-গুলজান স্কুল এন্ড কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগ দেয়ার পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ২০১৪ সালে তাঁকে নতুন করে আবারও অস্থায়ী ভাবে নিযোগ দেয়। এসময় মোঃ ফেরদৌস আলীর কাছে বিপুল অংকের টাকা দাবী করা হলে তিনি নিজস্ব সম্পদ বিত্রিæ করে নগদ তিন লাখ টাকা ম্যানেজিং কমিটির হাতে তুলে দেয়ার পরে চাকুরী স্থায়ীকরণ এবং এমপিও ভূক্তির অজুহাতে তাঁর কাছে আবারও পাঁচ লাখ টাকা দাবী করা হয়। তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ম্যানেজিং কমিটি ২০১৮ সালের ১৬ মে বিনা নোটিশে হঠ্যৎ করেই তাঁকে চাকুরীচ্যুত করে। অনিয়মের শিকার হয়ে ওই প্রতিষ্ঠনের বিরুদ্ধে আদালতে আরও একটি মামলা করে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আতিকুর রহমান। তাঁর দাবী তিনি অনেক বছর ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করার পরে হঠাৎ করে তাঁকে কোন কারন ছাড়াই সহকারী শিক্ষকের পদে নামিয়ে দেয়ায় তাঁর আর্থিক ও সম্মানহানী হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় শুভাকাঙ্খীরা অভিযোগ করে বলেন, মানেজিং কমিটিতে কোন শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়াই গোঁজামিল দিয়ে নিজেদের মনগড়া কমিটিতেই সব কাজ করা হচ্ছে। এমনকি ছবিরণ-গুলজান স্কুল এন্ড কলেজের দাতা ডঃ আব্দুস সামাদ আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও বিভিন্ন সময়ে নাটোরের সিংড়ায় অনুষ্ঠিত ম্যানেজিং কমিটির সভায় জাল স্বাক্ষর করে তাঁকেও উপস্থিত দেখানো হয়। তাঁরা আরও বলেন, সভাপতি মোঃ আবদুস সোবহান সহ সিংড়াতে অবস্থানকারী অন্যান্য সদস্যেদের বেলাতেও স্বাক্ষর জালের এমন অনিয়ম রেজুলেশন খাতা দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে ছবিরণ-গুলজান স্কুল এন্ড কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কোন মন্তব্য না করলেও সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক নূর নবী জানান, আমেরিকা থেকে ডঃ আব্দুস সামাদ অনুমতি দিলেই কেবল কেউ একজন তাঁর স্বাক্ষর করে দিয়ে তাঁকে উপস্থিত দেখানো হয় তবে তিনি অন্যান্য সদস্যদের জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাঁরা দু’জনেই জানান, মামলাকারী মোঃ ফেরদৌস আলী নিজেই অনিয়ম করে ২০১৫ সাল থেকে দ্বৈত চাকুরী হিসেবে সিংড়ার বামীহাল রহমত ইকবাল ডিগ্রী কলেজে চাকুরী করে আসছেন আর স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়ার পরেই তাঁকে চাকুরী থেকে অব্যহতি দিয়েছে। তাঁদের স্কুলের শিক্ষিকা শিউলি খাতুন ওই বামীহাল রহমত ইকবাল ডিগ্রী কলেজে ২০১১ সাল থেেেক উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পদে এখনও কি ভাবে দ্বৈত চাকুরী করছেন সে ব্যাপারটি তাঁদের জানা নেই তবে প্রমাণ পেলে তাঁর বিরুদ্ধেও একই আইনী ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিয়েছেন। তাঁদের গঠিত ম্যানেজিং কমিটি কেন সরকারী নিয়ম-নীতি মেনে করা হয়নি জানতে চাইলে সভাপতি প্রশ্নটি এড়িয়ে গেলেও সম্পাদক জানান, এখন না থাকলেও আগামী ম্যানেজিং কমিটিটি সঠিক নিয়মেই করা হবে। তাঁরা কখনই সিংড়ায় অবস্থানকারী অন্য কোন সদস্যকে সভায় উপস্থিত দেখাতে জাল স্বাক্ষরের আশ্রয় নেননা বলেও দাবী করেন।